দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২২ এপ্রিল: জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীকে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদন্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিলের সারসংক্ষেপ আদালতে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দেয়। আদেশে বলা হয়, আগামী ২০ মে’র মধ্যে আসামীপক্ষকে এবং ২০ মে’র পর এক সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দিতে হবে।বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় মীর কাশেম আলীর পক্ষে এডভোকেট জয়নুল আবেদীন তুহিন গত বছর ৩০ নভেম্বর এ আপিল দায়ের করেন।মীর কাশেমের আইনজীবী শিশির মোহাম্মদ মনির জানান, তার পক্ষে ১৮১টি গ্রাউন্ডে মৃত্যুদন্ড থেকে খালাস চেয়ে এ আপিল করা হয়েছে। দেড়শ’ পৃষ্ঠার মূল আপিলসহ ৫ ভলিয়মে ১ হাজার ৭৫০ পৃষ্ঠায় বিভিন্ন ডকুমেন্ট পেশ করা হয়েছে।
গতবছর ২ নভেম্বর তাকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনাল-২এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল জনাকীর্ণ ট্রাইব্যুনালে এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হচ্ছেনÑ বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম।রায়ে বলা হয়, প্রসিকিউশন আনীত ১৪টি অভিযোগের মধ্যে ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৪ নম্বর অভিযোগে মীর কাসেম আলী দোষী প্রমাণিত হয়েছেন। তবে ১, ৫, ৮ ও ১৩ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে এসব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।প্রমাণিত অভিযোগগুলোর মধ্যে ২ নম্বর অভিযোগে তাকে ২০ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। ৩, ৪, ৬, ৭, ৯ ও ১০ নম্বর অভিযোগে তাকে ৭ বছর করে মোট ৪২ বছর কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ১৪ নম্বর অভিযোগ ১০ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। এই ৮টি অভিযোগের দায়ে তাকে সর্বমোট ৭২ বছর কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। ১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগে মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। ১১ নম্বর অভিযোগে রয়েছে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমসহ ছয়জনকে আটক, নির্যাতন ও হত্যা। এ অভিযোগে বিচারকরা সর্বসম্মতিক্রমে মীর কাসেমকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন। ১২ নম্বর অভিযোগে রয়েছে রঞ্জিত দাস ও টুন্টু সেনকে নির্যাতন ও হত্যা। এ অভিযোগে বিচারকদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রায় দেয়া হয়। ১১ ও ১২ নং অভিযোগ ছাড়া বাকি ১২টি অভিযোগই অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ মীর কাসেমের বিরুদ্ধে।মামলায় মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ২৪ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামিপক্ষ তাদের জেরা করেছেন। এরপর মীর কাসেম আলীর পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন তার ছোটবোন মমতাজ নুরুদ্দিনসহ তিনজন। প্রসিকিউশন তাদের জেরা করে। মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় ট্রাইব্যুনালের আদেশে ২০১২ সালের ১৭ জুন মীর কাশেম আলীকে গ্রেফতার করা হয়। তখন থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।