দৈনিকবার্তা-২৩ আগস্ট: নিজস্ব সংবাদদাতা : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির জন্মই হয়েছে মানুষের রক্তের স্রোতের উপর৷সেই বিএনপি জামায়াতকে নিয়ে দেশে তাণ্ডব চালিয়েছে৷তারা আন্দোলনের নামে মানুষের জীবন নিয়ে খেলেছে৷রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শনিবার ফটো অ্যালবাম প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ অভিযোগ করেন তিনি৷বিএনপি জামায়াতের তাণ্ডব :রক্তাক্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই ফটো অ্যালবাম প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আওয়ামী লীগ৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ক্ষমতা দখলকারী৷ যাদের জন্মই হয়েছিল ক্ষমতা দখল করে৷ আপনাদের প্রতি আহ্বান আপনারা দেশের সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে খেলবেন না৷ কারণ মানুষ হত্যা কোনো আন্দোলন নয়৷ এটা আন্দোলন হতে পারে না৷ এভাবে এক একটা মানুষের জীবনকে অন্ধকারে ঠেলে দেবেন না৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যারা স্বজন হারিয়েছে তাদের জন্য কাজ করব৷ অন্তত আমি যতদিন বেঁচে আছি ততদিন করব৷ কারণ স্বজন হারানোর বেদনা আমার চেয়ে বেশি কেউ জানেন না৷ কারণ আমি একদিনেই পরিবারের সবাইকে হারিয়েছিলাম৷ আমি হয়তো তাদের স্বজনকে ফিরিয়ে দিতে পারব না৷ তবে তাদের কাছে সান্ত্বনা হিসেবে দাঁড়াতে পারব৷ আমি আর এ ঘটনার মুখোমুখি হতে চাই না৷ এ জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে৷
বিএনপি-জামায়াত জোটকে অভিযুক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা দেশের সংবিধান, স্বাধীনতায়, আইনের শাসনে বিশ্বাস করে না, তারা দেশের মানুষের জন্য কী করবে? বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বঙ্গবন্ধু কাজ করেছিলেন৷ তার স্বপ্ন বাস্তবায়নেই আজ আমরা কাজ করছি৷ কিন্ত কোন উদ্দেশ্যে আজ দেশে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে? শেখ হাসিনা বলেন, আজ এ ধরনের শত শত ঘটনা আমাকে শুনতে হয়, দেখতে হয়৷ তাই তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি৷ আমরা চাই মানুষ শান্তিতে বসবাস করুক৷ আমার ক্ষমতার কোনো মোহ নেই৷ ভোগবিলাসে আমরা বিশ্বাস করি না৷ ত্রিশ লাখ মুক্তিযোদ্ধা ও লাখ মা-বোন ইজ্জত দিয়ে এ দেশর স্বাধীনতা অর্জন করেছে৷ দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য জাতির পিতা জীবন দিয়েছেন৷ তার চেতনা নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি৷
রক্তের ওপর পা দিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল ‘আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডবের বিষয়ে দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দশম সংসদ নির্বাচনকালীন রাজনৈতিক সহিংসতার কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশে এভাবে বার বার হায়নার আঘাত আসবে৷ এভাবে রক্তাক্ত হবে বাংলাদেশ আর বাংলাদেশের মাটি, আমরা তা চাই না৷সকল দেশবাসীকে সোচ্চার হতে হবে, এ ধরনের ঘটনা যেন বাংলার মাটিতে না ঘটে৷
যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং নির্বাচন ঠেকাতে গত বছরজুড়ে সহিংস আন্দোলন নিয়ে ‘বিএনপি-জামাতের তাণ্ডব :রক্তাক্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক ফটোঅ্যালবামের প্রকাশনা উপলক্ষে আওয়ামী লীগ এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে৷
এই ফটো অ্যালবামটির মোড়ক উন্মোচন করেন শেখ হাসিনা৷ অনুষ্ঠান মঞ্চে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তত্কালীন বিরোধীদলীয় জোটের রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে সহিংসতার শিকার প্রাায় অর্ধশতাধিক আক্রান্ত নারী-পুরুষ উপস্থিত ছিলেন৷মঞ্চের পেছনে দু’দিকে কোণাকুনিভাবে সিঁড়ির মতো তিনটি ধাপে অগি্নদগ্ধ, সন্তানহারা অভিভাবক,স্বামীহারা বিধবা স্ত্রী এবং ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মারাত্মক আহতরা বসেছিলেন৷প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে বক্তব্য দিতে গিয়ে মঞ্চেই জ্ঞান হারান ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীর রায়ের পর গাইবান্ধার বামনডাঙায় পুলিশ ফাঁড়িতে হামলায় নিহত কনস্টেবল হযরত আলীর স্ত্রী লায়লা খাতুন৷
এছাড়া নিজেদের যন্ত্রণার কথা বলেন গাজীপুরে অগি্নদগ্ধ হয়ে নিহত মনিরের বাবা ভ্যানচালক রমজান আলী, হেফাজতে ইসলামের ৫ মে’র সমাবেশের দিন অগি্নদগ্ধ কনস্টেবল পিয়ারুল ইসলাম, ফটিকছড়ির ভুজপুরে জামায়াত-শিবিরের হামলায় মারাত্মক আহত হেলালউদ্দিন পিয়ারু, অগি্নদগ্ধ আইনজীবী খোদেজা নাসরিন, গাইবান্ধার কুন্তাইল কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা সহযোগী অধ্যাপক সাইদুল ইসলাম এবং হেফাজতের ৫ মে’র কর্মসূচির দিন বায়তুল মোকাররমে পবিত্র কোরআন শরিফ পোড়ানোর ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মিজানুল করিম৷শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের দেশের ৪১৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৮২টি উচ্চ বিদ্যালয়, ২১টি মাদ্রাসা এবং নয়টি কলেজে হামলা-ভাংচুর ও অগি্নসংযোগ করা হয়৷এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোনোটি পুরোপুরি এবং কোনোটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷
বিএনপির নীতিনির্ধারকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, রাজনীতি করতে হলে রাজনীতি করেন৷ কিন্তু, মানুষের জীবন নিয়ে খেলবেন না৷ মানুষ হত্যা কোনো আন্দোলন না৷ এভাবে মানুষ হত্যা করে একটা পরিবারের এভাবে আর অন্ধকারে ঠেলে দেবেন না৷
নিজের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আমার ক্ষমতার কোনো মোহ নেই৷ ক্ষমতা আমার কাছে ভোগ-বিলাসের কোনো বস্তু নয়৷ এদেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি৷বাংলাদেশের মানুষ শান্তি চায়৷ আমরাও চাই, মানুষ শান্তিতে বসবাস করুক, স্বস্তি তে চলাফেরা করুক৷ আমরা এটুকুই চাই৷ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নৃশংসতার সঙ্গে তাণ্ডবের তুলনা করে তিনি বলেন, রক্তের ওপর পাড়া দিয়েই তারা ক্ষমতায় এসেছে৷ যে আন্দোলনে জনগণ সম্পৃক্ত হয় না, সে আন্দোলনে তারা লাশ দিয়ে চেষ্টা করেছে৷ আন্দোলনের নামে মানুষের জীবন নিয়ে, লাশ নিয়ে তারা খেলেছে৷বিএনপি গণতন্ত্র, সংবিধান কিছুতে বিশ্বাস করে না বলে দাবি করেন শেখ হাসিনা৷
প্রধানমন্ত্রী তার সাড়ে ৮ মিনিটের বক্তব্যের শুরুতেই বলেন, আজকে বক্তৃতা দেয়ার কোনো বিষয় না৷ এরকম হাজার হাজার ঘটনা সারা বাংলাদেশে ঘটেছে৷ প্রতিনিয়ত চেষ্টা করেছি, মানুষের পাশে দাঁড়াতে৷ শুধু একটাই প্রশ্ন আমার- এই স্বাধীন বাংলাদেশে আর কত রক্ত ঝরবে? আর,কত বোন বিধবা হবে? আর কত পিতা সন্তানহারা হবে? আর কত সন্তান পিতাহারা হবে?
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ক্ষমতায় এসে খেটে খাওয়া মানুষের জীবনের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করে যাচ্ছিলাম৷ তাহলে, এই বাধা কি জন্য? বারবার এই আঘাত কেন? কাকে খুশি করার জন্য? আমার সেই প্রশ্ন৷আহত ও অগি্নদগ্ধদের বর্ণনা শোনার পর বক্তৃতা দিয়ে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনের নামে মানুষকে পুড়িয়ে মারা… যারা দায়িত্ব পালন করছে- সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী…তাদের ওপর হামলা৷ এটা কোন ধরনের কথা?
বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় ১৭ জন পুলিশ, দুজন বিজিবি সদস্য এবং সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থার দুজন সদস্য নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন,আর, শত শত সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হল৷আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আহতদের সহযোগিতা করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি যতদিন বেঁচে আছি, ততদিন সহযোগিতা করে যাব৷ কারণ, আমি জানি স্বজন হারানোর বেদনা কী? আমার থেকে আর তো কেউ বেশি জানে না৷ একদিনে তো আমি সব হারিয়েছি৷
এই পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা কান্নাভেজা কন্ঠে বলেন, তারা যা হারিয়েছেন, হয়ত তা ফেরত দিতে পারব না৷ তাদের কাছে হয়ত একটা সান্ত্বনা হয়ে দাঁড়াতে পারব৷ আর,চেষ্টা করব৷ এদের জীবনটা যেন চলতে পারে৷আর, আমরা এই ধরনের ঘটনা দেখতে চাই না৷ আর, এ ধরনের অবস্থা যেন বাংলাদেশে না ঘটে৷ সেটাই আমার আবেদন থাকবে দেশবাসীর প্রতি৷অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আর বিএনপি-জামাতের মধ্যে কোনো বেশ-কম নাই৷অনুষ্ঠানের শুরুতেই ২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতার ওপর ১৬ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়৷
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-পরিষদের চেয়ারম্যান এইচটি ইমাম, আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বক্তব্য রাখেন৷ এই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, ঊধর্্বতন সরকারি কর্মকর্তা ছাড়াও রাশিয়া, চীন, কানাডা, ফিলিস্তিন, ভিয়েতনাম ও ভাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত এবং ভারত, শ্রীলংকা, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, উত্তর কোরিয়া,ভুটান,লিবিয়া ও মিশরের দূতাবাসের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন৷