দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১০নভেম্বর: জাতীয়ং স্মৃতিসৌধের স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন ইন্তেকাল করেছেন(ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)৷জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে (এনআইসিভিডি) চিকিত্সাধীন অবস্থায় সোমবার তাঁর মৃতু্য হয়৷এনআইসিভিডির পরিচালক আবদুল্লাহ আল সাফী মজুমদার বলেন,মঈনুল হোসেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রোববার হাসপাতালে ভর্তি হন৷ তাঁর ডায়াবেটিস ছিল মারাত্মক অনিয়ন্ত্রিত৷ রক্তচাপও ছিল খুব কম৷ হাসপাতালে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে চিকিত্সা দেওয়া হলেও তাঁকে বাঁচানো গেল না৷
সোমবার বেলা আড়াইটার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চিকিত্সাধীন অবস্থায় তার মৃতু্য হয়৷ তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর৷হাসপাতালের পরিচালক আবদুল্লাহ আল শাফি মজুমদার লেন, মাইনুল হোসেন হার্ট অ্যাটাক নিয়ে গতকাল ভর্তি হয়েছিলেন৷ উনার রক্তচাপেরও সমস্যা ছিল৷ আজ বেলা আড়াইটায় উনার মৃতু্য হয়৷স্থপতি ও কবি রবিউল হুসাইন জানান, মাইনুল হোসেনের মরদেহ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট থেকে নেওয়া হয় তার শান্তিনগরের বাসায়৷ রাতে রাখা হবে বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে৷ তার বন্ধু ও এক সময়ের সহপাঠী স্থপতি বদরুল হায়দার জানান, মাইনুল হোসেনের দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন৷ তিনি দেশে ফিরলেই দাফনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷
মুক্তিযুদ্ধের শহীদের স্মৃতি ধরে রাখতে সরকার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা নিলে ১৯৭৮ সালে নকশা আহ্বান করা হয়৷ জমা পড়া ৫৭টি নকশার মধ্যে বাঙালির স্মৃতির মিনোরের জন্য নির্বাচিত হয় ২৬ বছরের তরুণ মাইনুল হোসেনের পরিকল্পনা৷তার নকশা অনুযায়ী স্মৃতিসৌধের বেদীমূল থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে সাতটি ত্রিকোণ কলাম, যার মধ্যে সবচেয়ে বড়টি ১৫০ ফুট উঁচু৷ এই সাতটি কলামে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের সাতটি পর্যায় সূচিত হয়েছে৷ আকার আকৃতিতে ভিন্নতা থাকায় একেক দিক থেকে স্মৃতিসৌধকে দেখায় একেক রকম৷
১৯৭৬ সাল থেকে ২২ বছরের কর্মজীবনে সৈয়দ মাইনুল হোসেন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নকশার কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন৷ এর মধ্যে ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (১৯৭৭), বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ভবন (১৯৭৮), চট্টগ্রাম ইপিজেড কার্যালয় (১৯৮০), জাতীয় যাদুঘর (১৯৮২) ও উত্তরা মডেল টাউন (১৯৮৫) এর নকশাও রয়েছে৷মাইনুল হোসেনের জন্ম ১৯৫২ সালে, মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ীতে৷ ১৯৭০ সালে তিনি যখন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হন, বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির আন্দোলন তখন তুঙ্গে৷
স্বাধীন দেশে ১৯৭৬ সালে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি পান মাইনুল হোসেন৷ ইএএইচ কনসালটেন্ট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মজীবন শুরু করলেও কয়েক মাসের মধ্যে তিনি যোগ দেন বাংলাদেশ কনসালট্যান্ট লিমিটেডে৷এরপর ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এই স্থপতি, নকশা করেছেন বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার৷ আর এর স্বীকৃতি হিসাবে ১৯৮৮ সালে সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে৷ এদিকে, জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি সৈয়দ মঈনুল হোসেনের ইনত্মেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া৷
রাষ্ট্রপতি তাঁর শোকবার্তায় বলেন, স্থপতি সৈয়দ মঈনুল হোসেন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্মারক জাতীয স্মৃতিসৌধের নকশা তৈরি করে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মতির প্রতি যে অবদান রেখেছেন জাতি তা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে৷তিনি বলেন, তাঁর মৃতু্যতে দেশ একজন বরেণ্য স্থপতিকে হারালো৷রাষ্ট্রপতি মরহুম মঈনুল হোসেনের শোকসনত্মপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান এবং তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন৷
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি সৈয়দ মইনুল হোসেনের মৃতু্যতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন৷এক শোক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে স্থপতি মইনুল হোসেনের অনন্য সাধারণ নকশায় নির্মিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ বাংলা এবং বাঙালি
জাতির সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে চির ভাস্বর থাকবে৷এ মহান কীর্তির স্বীকৃতিস্বরূপ জাতি চিরদিন তাঁর নাম গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে বলে তিনি তার শোকবার্তায় উলেস্নখ করেন৷প্রধানমন্ত্রী মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসনত্মপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন৷অন্যদিকে, জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি মঈনুল হোসেন আজ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস’ায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন)৷ তাঁর মৃতু্যতে গভীর শোক ও দূঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া৷
এক শোকবার্তায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি ও দেশের বিশিষ্ট নকশাবিদ মঈনুল হোসেনের মৃতু্যতে আমি গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত৷ দেশের বিশিষ্ট স্থপতি হিসেবে তিনি কেবল দেশের বিভিন্ন সুরম্য ইমারতের নকশাই তৈরী করেননি, বরং আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী বীর শহীদের স্মারক জাতীয় সৃতিসৌধের নকশা তৈরী করে জাতীয় ইতিহাসে একজন বরেণ্য সন্তান হিসেবে বিশেষ মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছেন৷ তিনি আমাদের জাতীয় গৌরব৷ তাঁর এই অমর কীর্তি একদিকে যেমন স্থাপত্যের অনন্যতায় মানুষের মনে চিরজাগরুক হয়ে থাকবে অন্যদিকে আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যত্ প্রজন্মকে দৈশিক চেতনায় উদীপ্ত করতে প্রেরণা জোগাবে৷ দেশের এই কীর্তিমান মানুষটির মৃতু্যতে আমাদের মেধা, মনন, সৌকর্য এবং উত্কর্ষতার অগ্রগতি কিছুটা বাধাপ্রাপ্ত হলো৷ “
বিএনপি চেয়ারপার্সন মরহুম মঈনুল হোসেন এর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকার্ত পরিবারবর্গ, আত্মীয়স্বজন, গুনগ্রাহী ও শুভানুধায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান৷অপর এক শোকবাণীতে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মরহুম মঈনুল হোসেনকে স্থাপত্য জগতের এক অনন্য মেধাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব আখ্যায়িত করে তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকাহত পরিবারের সদস্যবর্গ ও আত্মীয়স্বজনদের প্রতি গভীর সহমর্মিতা জানান৷