দৈনিকবার্তা-কিশোরগঞ্জ,২৮নভেম্বর: এটিএম শামসুদ্দিনএকাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া কিশোরগঞ্জের এ টি এম শামসুদ্দিনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে৷ শুক্রবার দুপুরে আদালতে হাজির করা হলে কিশোরগঞ্জের জ্যেষ্ঠ মুখ্য বিচারিক হাকিম এস এম রাজিবুল হাসান তাঁকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন৷
বৃহস্পতিবার রাত পৌনে নয়টার দিকে কিশোরগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ভৈরব-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কের ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মযমনসিংহ চৌরাস্তা থেকে শামসুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে৷ রাতেই তাঁকে সদর মডেল থানায় রাখা হয়৷শুক্রবার বেলা ১২টায় কড়া পুলিশ পাহারায় শামসুদ্দিনকে কিশোরগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক আদালতে হাজির করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন পুলিশের আদালত পরিদর্শক সুনীল চন্দ্র রায়৷বিচারক শুনানি নিয়ে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশের সঙ্গে মামলার নথি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালে পাঠানোর নির্দেশ দেন৷
আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী আদালতে ছিলেন না৷ তার ভাই এ মামলার আরেক আসামি নাছির উদ্দিন আহম্মেদ ওরফে ক্যাপ্টেন এটিএম নাছির পলাতক৷কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ থানার শামসুদ্দিন ও তার ভাই নাছিরের বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়ার পরদিন বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তার হন শামসুদ্দিন৷রাত সাড়ে ৮টার দিকে ময়মনসিংহের নান্দাইল চৌরাস্তা এলাকা থেকে শামসুদ্দিন আহম্মেদকে ধরা হয় বলে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লিটন কুমার জানান৷
শামসুদ্দিন সেখানে চট্টগ্রামগামী বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বলে জানা গেছে৷ আটকের পর তাকে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় নেওয়া হয়৷গত মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালে দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে হত্যা, নির্যাতন, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়৷ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সদস্য সানাউল হক জানান, এ দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৬ জুন তদন্ত কাজ শুরু হয়৷ এক বছর ৫ মাস ১৮ দিন তদন্ত করে ২৪ নভেম্বর তদন্ত শেষ হয়৷ এ মামলায় ৪০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে৷
তদন্ত সংস্থা বলছে, মুক্তিযুদ্ধে শুরু হওয়ার পরে দুই ভাই রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন এবং করিমগঞ্জ থানা এলাকার বিদ্যানগর, আয়লা, রামনগর, কলাতলি ও করিমগঞ্জে হত্যা, নির্যাতন ও গণহত্যাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধে সম্পৃক্ত হন৷১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে নাসির উদ্দিন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে নিজের নাম-পরিচয় বদলে চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে লেখাপড়া শেষ করেন৷ ভুয়া পরিচয় ও ঠিকানা দিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে ১৯৯৪ সালের ৫ জুলাই কমিশনও পান৷২০০২ সালের ১৩ জানুয়ারি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট থেকে ক্যাপ্টেন হিসেবে অকালীন বাধ্যতামূলক অবসরে যান নাসির উদ্দিন৷ এরপর তিনি নিজের এলাকায় ফিরে যান৷আর শামসুদ্দিন আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন বলে তদন্ত কর্মকর্তারা জানান৷
মুক্তিযুদ্ধের সময় করিমগঞ্জের আয়লা গ্রামের মিয়া হোসেন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত ২০১০ সনের ২ মে মামলা করেন নিহতের ছেলে গোলাপ মিয়া৷পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান ও সমন্বয়ক আইজি এম সানাউল হক একাধিকবার ওই এলাকা পরিদর্শন করে তদন্ত করেন৷