দৈনিকবার্তা-গোপালগঞ্জ,২ ডিসেম্বর: বুধবার ৩রা ডিসেম্বর৷ ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক-হানাদার মুক্ত হয়েছিল গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা৷ এদিন কোটালীপাড়ায় বয়ে গিয়েছিল আনন্দের বন্যা৷ অনেক দুঃখ বেদনার পরও সেদিন এলাকার মানুষের মধ্যে ছিল আনন্দের জোয়ার৷ কেননা সে দিন কোটালীপাড়ার মানুষ মুক্তির স্বাদ পেয়ে দলে দলে রাস্তায় নেমে পড়ে৷ প্রায় ৫শ” পাকহানাদারকে পরাস্থ করে কোটালীপাড়াকে শত্রুমুক্ত করেছিল হেমায়েত বাহিনী৷ ৩ ডিসেম্বর সকাল ১০ টার দিকে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়াই প্রথম হানাদার মুক্ত হয়৷
এ অঞ্চলে পাকবাহিনী ও তাদের দোষরা ছিল খুবই শক্ত অবস্থানে৷ আর এ এলাকায়ই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষক হেমায়েতউদ্দিন যুদ্ধ শুরু হলে দেশে পালিয়ে আসেন৷ গড়ে তোলেন নিজস্ব বাহিনী৷ ৮হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে নিযে তিনি গড়ে তোলেন হেমায়েত বাহিনী৷ কোটালীপড়ায় তিনি একটি ট্রেনিং ক্যাম্প ও গড়ে তোলেন৷ যেখানে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরকে ও যুদ্ধের ট্রেনিং দেয়া হতো৷ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে বেশ কয়েকটি সম্মূখ যুদ্ধে অবতীর্ন হয় হেমায়েত বাহিনী৷ উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ হয় হরিনাহাটি, মাটিভাঙ্গা, বাশবাড়িয়া, ঝনঝনিয়া, জহরের কান্দি, কোটালীপাড়া সদর প্রভৃতি স্থানে৷ এ ছাড়া ছোট যুদ্ধ হয়েছে বেশ কয়েকটি৷ আর এ সব যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন হেমায়েত বাহিনী প্রধান হেমায়েত উদ্দিন বীর বিক্রম৷ প্রতিবছর দিবসটি পালন উপলক্ষে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচী গ্রহণ হয়েছে৷
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে ঃ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে শুধু যৌথবাহিনীই দেশ মাতৃকাকে মুক্ত করতে যুদ্ধ করেনি৷ পাক হানাদার বাহিনীকে এদেশ থেকে বিতাড়িত করতে তত্কালীন সময়ে এদেশে কয়েকটি অঞ্চলে গঠিত হয়েছিল কয়েকটি বাহিনী৷ ফরিদপুর ও বরিশাল অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয়েছিল “হেমায়েত বাহিনী”৷ ৭২টি গ্রুপের সমন্বয়ে গঠিত এই হেমায়েত বাহিনী যুদ্ধ করেছিল মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে৷ এই বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল ৫,৫৫৮জন৷ তার মধ্য থেকে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে ২৪জন আহত ও ১৮ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন৷ শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- কোটালীপাড়া উপজেলার গোলাম আলী, বেলায়েত, আবুতালেব, আবুল খায়ের, মোক্তার হোসেন, রতন কুমার, মোয়াজ্জেম হোসেন, টুঙ্গীপাড়া উপজেলার বেলায়েত হোসেন, মুকসুদ উপজেলার আবুল বাশার, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ছাত্তার মৃধা, সেকেন্দার, নুরু বেপারী, পরিমল শীল, আগৈলঝাড়া উপজেলার তৈয়াবালী, নলসিটি উপজেলার ওসমান, মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার মকবুল হোসেন, আঃ ছাত্তার এবং ঢাকার ইব্রাহিম৷
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে হেমায়েত বাহিনীর সদস্যরা ১৩৪টি অপারেশন পরিচালনা করেন৷ এর মধ্যে রামশীলের যুদ্ধ অন্যতম৷ এই যুদ্ধটি অত্র অঞ্চলে ঐতিহাসিক রামশীলের যুদ্ধ বলে পরিচিত৷ হেমায়েত বাহিনীর প্রধান হেমায়েত উদ্দিন ঐতিহাসিক রামশীলের যুদ্ধে মারত্মক ভাবে আহত হন৷ মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ অবদানের কারণে দেশ স্বাধীন হবার পর হেমায়েত উদ্দিনকে “বীর বিক্রম” খেতাবে ভুষিত করা হয়৷
হেমায়েত বাহিনীর বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহন ঃ৭১-এর মহান যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে গঠিত হেমায়েত বাহিনীর ইতিহাস বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য কোটালীপাড়া উপজেলায় উপজেলার টুপুরিয়া গ্রামে নির্মিত হেমায়েত বাহিনীর স্মৃতি যাদুঘর প্রাঙ্গনে সোমবার শুরু হয়েছে ৩ দিনব্যাপি হেমায়েত বাহিনীর গণমেলা৷ ৩ ডিসেম্বর কোটালীপাড়া মুক্ত দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে একটি মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে৷ এই অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন৷