দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৪ ডিসেম্বর: জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আব্দুস সুবহানের যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় হবে য কোনো দিন৷ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও লুটপাটের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের নয়টি অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে৷দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল-২ বৃহস্পতিবার মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন৷বিচারিক কার্যক্রম শেষ হওয়ায় এখন যে কোনো দিন আদালত এ মামলার রায় দিতে পারে৷
শুনানির শেষ দিন সমাপনী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ৷ আর সুবহানের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিকী৷সমাপনী বক্তব্যে প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে দাবি করে সুবহানের সর্বোচ্চ শাস্তির আর্জি জানান৷অন্যদিকে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি দাবি করে সুবহানের খালাস চান তার আইনজীবী৷আট ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধে নয়টি ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে গত বছর ৩১ ডিসেম্বর এই জামায়াত নেতার বিচার শুরু করে ট্রাইবু্যনাল৷পাবনা সদরের সাবেক সংসদ সদস্য সুবহানের জন্ম ১৯৩৬ সালে সুজানগর থানার মানিকহাটি ইউনিয়নের তৈলকুণ্ডি গ্রামে৷
পাকিস্তান আমলে তিনি ছিলেন পাবনা জেলা জামায়াতের আমির ও কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য৷ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর তিনি পাবনা জেলা শান্তি কমিটির সেক্রেটারি এবং পরে ভাইস- প্রেসিডেন্ট হন৷তার নেতৃত্বে পাবনা জেলার বিভিন্ন থানায় শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও মুজাহিদ বাহিনী গঠিত হয় বলে প্রসিকিউশনের অভিযোগ৷উভয়পক্ষ চান ন্যায়বিচার: সমাপনী যুক্তিতর্কে প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ সুবহানের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃতু্যদণ্ড ও তার হাতে নির্যাতিত-ক্ষতিগ্রস্ত দের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করেন৷
তুরিন আফরোজ বলেন, আব্দুল কাদের মোল্লার আপিল মামলায় উচ্চ আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, অপরাধী যে অপরাধ করেছেন তাতে তিনি কোনো ক্ষমা পেতে পারেন কি-না সেটাই একমাত্র বিবেচ্য বিষয় নয়৷ একজন অপরাধীর অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পর ট্রাইব্যুনাল শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্তদের (ভিকটিম) ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি অপরাধীর শাস্তির বিষয়ে সমাজের আকাক্ষার প্রতিফলন এবং ভবিষ্যতে সমাজকে এ ধরণের অপরাধ সংঘটন থেকে বিরত রাখার বিষয়টিও যেন বিবেচনায় নেন৷তুরিন বলেন, এ অপরাধের বিচারের উদ্দেশ্য কেবল একজন অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া না৷ সমাজকে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ সংঘটন করা থেকে নিরুত্সাহিত করা বা কিংবা বিরত রাখাও এর উদ্দেশ্য৷
তুরিন আফরোজ এ মামলায় প্রসিকিউশনের এক সাক্ষীর সাক্ষ্যের অংশ পড়ে শুনিয়ে আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃতু্যদণ্ড দাবি করেন৷ একই সঙ্গে সুবহানের অপরাধের শিকার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেন তিনি৷
ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষমতা আদালতের আছে কি-না ট্রাইবু্যনালের এমন প্রশ্নের জবাবে তুরিন আফরোজ আইনের বিভিন্ন ধারা উল্লেখ করে বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষমতা ট্রাইবু্যনালের রয়েছে৷
এ সময় তিনি এর আগে আরো দু’টি মামলায় ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন৷অন্যদিকে সুবহানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই প্রমাণিত হয়নি দাবি করে তার খালাস চান ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিকী৷
সবশেষে ট্রাইবু্যনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, উভয়পক্ষই বেশ ভালো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন৷ কিন্তু উভয়পক্ষের উদ্দেশ্যেই বলছি, সংবাদ মাধ্যমে আপনারা অনেক কথাই বলে থাকেন৷ কিন্তু এমন কথা বলবেন না, যাতে আদালতের মর্যাদা, সম্মানহানি ঘটে৷ আদালতের কর্তৃত্বকে খর্ব করে৷ এমন কথা বলা উচিত্ নয়, যে কথা আদালতকে আঘাত করে৷ চেয়ারম্যান আরো বলেন, আদালতের সম্মান, মর্যাদা রক্ষা করার দায়িত্ব উভয়পক্ষের আইনজীবীদেরও৷ তাছাড়া আদালত কেবল অপরাধীদের বিচারই করেন না, আদালত অবমাননাকারীর বিচারও করেন৷ সবাইকে ধরার ক্ষমতা আদালতের রয়েছে৷
মামলার ধারাবাহিক কার্যক্রম:২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সকালে টাঙ্গাইলে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্ত থেকে সুবহানকে আটক করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ ওই রাতেই তাকে পাবনা কারাগারে নেওয়া হয়৷ ২৩ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আবদুস সুবহানকে আটক দেখানোর আদেশ চান আদালতের কাছে৷ ২৬ সেপ্টেম্বর পাবনা কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয় সুবহানকে৷ পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়৷ ৩০ সেপ্টেম্বর প্রসিকিউশনের আবেদন আমলে নিয়ে সুবহানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইবু্যনাল৷
২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে সুবহানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়৷ গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর তদন্ত কাজ সম্পন্ন করেন তদন্ত সংস্থা৷ তদন্তকারী কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও মো. নূর হোসাইন এ মামলার তদন্তকাজ সম্পন্ন করেন৷ ওই দিনই তদন্ত সংস্থা তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে জমা দেন৷
তদন্তের স্বার্থে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর সেফহোমে নিয়ে সুবহানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্ত সংস্থা৷
তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর সুবহানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইবু্যনাল৷ ১৫ সেপ্টেম্বর সুবহানের বিরুদ্ধে ৮৬ পৃষ্ঠার ওই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ট্রাইবু্যনালে জমা দেন প্রসিকিউশন৷
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাট, অগি্নসংযোগ ও ষড়যন্ত্রসহ ৮ ধরনের ৯টি মানবতাবিরোধী অপরাধে সুবহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ট্রাইবু্যনাল-১৷
এর আগে গত বছরের ২৩ অক্টোবর ও ২৪ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের বিপক্ষে ও অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চেয়ে আসামিপক্ষে শুনানি করেন সুবহানের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ও আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান৷ অন্যদিকে ৯ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও রেজিয়া সুলতানা চমন৷গত ২৭ মার্চ ট্রাইবু্যনাল-১ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ মামলাটি ট্রাইবু্যনাল-২ এ স্থানান্তর করেন৷গত ১ এপ্রিল সুবহানের বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও রেজিয়া সুলতানা চমন৷
গত ৭ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সুবহানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন দুই তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও মো. নূর হোসাইনসহ রাষ্ট্রপক্ষের ৩১ জন সাক্ষী৷ তাদের মধ্যে অভিযোগভিত্তিক ঘটনার ২৭ সাক্ষী হলেন- সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী আ ত ম শাহিদুজ্জামান নাসিম, শহীদপুত্র মুক্তিযোদ্ধা তহুরুল আলম মোল্লা, মো. আবু আসাদ, রুস্তম আলী, মো. ইসরাইল, কোরবান আলী, শহীদ জায়া জাহানারা বেগম, আশরাফ উদ্দিন মিয়া, মো. রিয়াজ উদ্দিন মন্ডল, সানোয়ারা খাতুন, মো. ফজলুর রহমান ফান্টু, আব্দুর রহমান সরদার, শহীদ পরিবারের সদস্য মো. আব্দুল মতিন, মোঃ আজিজুল সরদার, মমতাজ উদ্দিন মন্টু, আক্কাছ শেখ, শহীদপুত্র আলী রানা শেখ, আব্দুল আজিজ, নিজাম উদ্দিন খান, হোসেন সরদার, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদপুত্র মো. শহিদুল্লাহ শহিদ, এসএম সামছুল আলম, মো. খোরশেদ আলম, শহীদপুত্র মো. সামছুল আলম, আবদুল বাতেন, মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মোঃ ফজলুল হক এবং এস কে শহীদুল্লাহ৷
আর জব্দ তালিকার দুই সাক্ষী হচ্ছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালের তদন্ত সংস্থার গ্রন্থাগারিক আনিসুর রহমান ও বাংলা একাডেমির সহকারী গ্রন্থাগারিক এজাবউদ্দিন মিয়া৷অন্যদিকে সুবহানের পক্ষে ৩ জন সাক্ষী সাফাই সাক্ষ্য েদবেন বলে ট্রাইব্যুনাল নির্ধারণ করে দিলেও কোনো সাফাই সাক্ষী হাজির করেননি আসামিপক্ষ৷
গত ৫ থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ও বৃহস্পতিবার আট কার্যদিবসে সুবহানের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, সুলতান মাহমুদ সীমন ও রেজিয়া সুলতানা চমন৷অন্যদিকে গত ১৭ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ও বৃহস্পতিবার ৯ কার্যদিবসে সুবহানের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিকী৷
সুবহানের বিরুদ্ধে যতো অভিযোগ: পাবনার সুজানগর উপজেলার মানিকহাটি ইউনিয়নের তৈলকুণ্ডি গ্রামে জন্ম নেওয়া সুবহান পাকিস্তান আমলে পাবনা জেলা জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা আমির এবং সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সূরা সদস্য ছিলেন৷১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু হলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে পাবনা জেলায় হত্যা, গণহত্যা, অগি্নসংযোগ ও লুটপাট শুরু করেন আব্দুস সুবহান৷ পরে তিনি পাবনা জেলা পিস কমিটির সেক্রেটারি এবং পরবর্তীতে ভাইস প্রেসিডেন্ট হন৷
তার নেতৃত্বে পাবনা জেলার বিভিন্ন থানায় পিস কমিটি, রাজাকার আলবদর, আলশামস ও মুজাহিদ বাহিনী গঠিত হয়৷মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি বিভিন্ন থানায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, মুক্তিযোদ্ধা, হিন্দু সমপ্রদায়ের লোকদের নামের তালিকা করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে সরবরাহ করতেন৷ সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের নেতৃত্ব দিয়ে এবং সঙ্গে থেকে তাদের হত্যা ও গণহত্যায় অংশও নিতেন৷
ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে মিটিং করে স্বাধীনতাবিরোধী বক্তব্য দিতেন এবং পাকিস্তান সরকারের পক্ষে মিছিলের নেতৃত্ব দিয়ে স্লোগানও দিতেন এই জামায়াত নেতা৷ পরে মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে ইয়াহিয়া সরকারের পতন দেখে গোলাম আযমের সঙ্গে তিনি পাকিস্তানে পালিয়ে যান৷সুবহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাবনা জেলার বিভিন্ন থানায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের নিয়ে গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, আটক নির্যাতন, লুটপাট ও অগি্নসংযোগ ঘটিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেন৷
তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে-অভিযোগ-১:একাত্তরে সহযোগী জামায়াত নেতা ও বিহারিদের নিয়ে পাবনার ঈশ্বরদীতে জামে মসজিদে আশ্রয় নেওয়া স্বাধীনতাকামী মানুষদের অপহরণ করে হত্যা করেন সুবহান৷
অভিযোগ-২: ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল সুবহানের নেতৃত্বে ও উপস্থিতিতে ঈশ্বরদীর যুক্তিতলা গ্রামে হামলা চালিয়ে লুটপাটসহ ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে তিনজনকে গুরুতরভাবে আহত এবং পাঁচজন নিরস্ত্র লোককে হত্যা করা হয়৷অভিযোগ-৩: ১৯৭১ সালের ১৬ মে ঈশ্বরদীর অরণখোলা গরুর হাট থেকে দুইজনকে অপহরণ করে পাবনার ঈশ্বরদীতে জেলা পরিষদ ডাকবাংলোর ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করেন সুবহান৷
অভিযোগ-৪: ২ মে সুবহানের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঈশ্বরদীর সাহাপুর গ্রামে অসংখ্য বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় এবং কয়েকজনকে হত্যা করে৷অভিযোগ-৫: ১১ মে সুবহানের নেতৃত্বে ও উপস্থিতিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পাবনা সদর থানার কুলনিয়া ও দোগাছি গ্রামে হামলা চালিয়ে সাতজন নিরীহ-নিরস্ত্র, স্বাধীনতাকামী লোককে হত্যা এবং কয়েকটি বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেয়৷
অভিযোগ-৬: ১২ মে সুবহানের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি বিরাট বহর সুজানগরের কয়েকটি গ্রামে হামলা চালিয়ে তিন-চারশ’ মানুষকে হত্যা এবং বিভিন্ন বাড়ি-ঘরে লুটপাট চালায় ও পুড়িয়ে দেয়৷অভিযোগ-৭: ২০ মে সুবহানের নেতৃত্বে পাবনা সদর থানার ভাড়ারা গ্রামে ১৮ জনকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়৷ শহীদদের মধ্যে একজনকে ওই গ্রামের একটি স্কুলে হত্যা করা হয়৷ বাকি ১৭ জনকে সদর থানার নূরপুর বিদু্যত্কেন্দ্রে নিয়ে নির্যাতনের পরে আটঘরিয়া থানার দেবোত্তর বাজারের পাশে বাঁশবাগানে গুলি করে হত্যা করা হয়৷
অভিযোগ-৮: ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে আতাইকুলা থানার (সাবেক পাবনা সদর থানা) দুবলিয়া বাজার থেকে দুইজন স্বাধীনতাকামী লোককে অপহরণ করে কুচিয়ামাড়া গ্রামে একটি মন্দিরের ভেতরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেন সুবহান৷অভিযোগ-৯: ৩০ অক্টোবর রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে ঈশ্বরদীর বেতবাড়িয়া গ্রামে হামলা চালিয়ে কয়েকটি বাড়িতে লুটপাট চালিয়ে পুড়িয়ে দেন এবং চারজনকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেন৷