দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৬ ডিসেম্বর: মহান বিজয় দিবস উদযাপনে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দরের জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে বীর মুক্তিযোদ্ধা, সশস্ত্রবাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ মনোমুগ্ধকর কুচকাওয়াজ, কুচকাওয়াজের যান্ত্রিক বহর ও বিমানবাহিনীর মনোজ্ঞ ফ্লাইপাস্ট ও এরোবেটিক ডিসপ্লে মুগ্ধ করে উপস্থিত সবাইকে৷মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ৪৩ বছর পূর্তিতে জাতীয় প্যারেড ময়দানে সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ৷
মঙ্গলবার সকালে শেরেবাংলা নগরে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বর্ণাঢ্য এই কুচাওয়াজে মুক্তিযোদ্ধা কন্টিনজেন্ট, সশস্ত্র বাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিভিন্ন শাখা এবং সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অগ্রগতির তথ্য জানানো হয় অতিথিদের৷বাংলাদেশ টেলিভিশন জাতীয় প্যারেড ময়দান থেকে এ অনুষ্ঠান সরাসরি সমপ্রচার করে৷ এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি৷ প্রধানমন্ত্রীও এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন৷মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০ টায় এ অনুষ্ঠান হয়৷এর আগে সকাল ১০টা ২৩ মিনিটে প্যারেড গ্রাউন্ডে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ এ সময় মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী একেএম মোজাম্মেল হক ও তিন বাহিনীর প্রধানরা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান৷
বেলা ১০টা ২৯ মিনিটে প্যারেড স্কয়ারে আসেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ৷ প্রধানমন্ত্রী, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী ও তিন বাহিনীর প্রধানরা রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানান৷বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের ব্যবস্থাপনায় বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বীর মুক্তিযোদ্ধারা, সশস্ত্র বাহিনী, আধা সামরিক বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অংশগ্রহণ করে৷কুচকাওয়াজে প্রথমবারের মতো ভবিষ্যত্ পদাতিক বাহিনীর সজ্জায় একটি বিশেষ কন্টিনজেন্ট অংশগ্রহণ করে৷বিজয় দিবসের এ কুচকাওয়াজে ২০০ ফুট দৈঘর্্য ও ১২০ ফুট প্রস্থের একটি জাতীয় পতাকা প্রদর্শন করা হয়৷
এবারের কুচকাওয়াজে সেনাবাহিনীতে নতুন সংযোজিত মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম, অত্যাধুনিক এমবিটি-২০০০ ট্যাংক, সেলফ প্রোপেল্ড গান, আর্মার্ড লাইট ভেহিক্যেল ও উইপন লোকেটিং রাডার এসএলসি-২,নৌ-বাহিনীতে নতুন সংযোজিত ডিফেন্ডার ক্লাস বোর্ড এবং বিমানবাহিনীতে নতুনভাবে সংযোজিত সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল সিস্টেম প্রদর্শিত হয়৷এছাড়া যান্ত্রিক কুচকাওয়াজ বহরে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্বলিত সুসজ্জিত গাড়ি বহর প্রদর্শন করা হয়৷ গাড়ির মধ্যে বাড়ি, নৌকা, সমুদ্র, নাটাই-ঘুড়ি, গ্রাম বাংলার সংস্কৃতি, দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হয়৷ মন্ত্রণালয়গুলোর এ প্রদর্শন অনুষ্ঠানের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ৷যান্ত্রিক কুচকাওয়াজ বহরের পরই আকাশ থেকে অবতরণ করেন সেনাবাহিনীর প্যারাট্রুপারগণ৷ প্যারাসুটে আকাশে ঘুরতে ঘুরতে নামার সঙ্গে রঙ্গিন গ্যাস ছাড়তে ছাড়তে মাটিতে নামেন তারা৷ দৃষ্টিনন্দন এ অবতরণ কুচকাওয়াজকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে৷
সময় যতো যাচ্ছে কুচকাওয়াজের আয়োজন যেন ততো আকর্ষণীয় হয়ে উঠছিলো৷ কুচকাওয়াজের প্রতিটি আয়োজনই ছিলো নজরকাড়া৷তবে আর্মি, নেভি ও র্যাব এভিয়েশনের ফ্লাইপাস্ট এবং বিমানবাহিনীর পাইলটদের মনোজ্ঞ ফ্লাইপাস্ট ও এরোবেটিক ডিসপ্লে দর্শকদের মধ্যে দারুণ উত্তেজনা সৃষ্টি করে৷ রাষ্ট্রপতিকে ‘ফ্লাইং সেলুট দেয় যুদ্ধ বিমান মিগ-২৯৷ বিমানবাহিনীর এফ-৭ বিজি যুদ্ধ বিমান লাল সবুজ ধোঁয়া উড়িয়ে রাষ্ট্রপতিকে অভিবাদন জানায়৷উপস্থিত দর্শকরা কুচকাওয়াজের একেকটি আকর্ষণীয় পর্ব উপভোগ করছেন আর মুহুর্মুহু করতালি আর হর্ষধ্বনির মাধ্যমে তাদের আনন্দ প্রকাশ করছিলেন৷ বিজয় দিবসের এ প্যারেডের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ৯ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং এবং এরিয়া কমান্ডার (সাভার এরিয়া) মেজর জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান৷
এ অনুষ্ঠানে ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনীর লে. জেনারেল (অব.) আন্দন স্বরূপের নেতৃত্বে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ১৭ জন ভারতীয় মুক্তিযোদ্ধাও উপস্থিত ছিলেন৷অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ ও সশস্ত্র বাহিনীর মহড়া উপভোগ করেছেন প্রধান বিচারপতি, দশম জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদসহ মন্ত্রী পরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, ঊধর্্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা৷
এছাড়া কুচকাওয়াজ দেখতে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সমবেত হয়েছিলেন বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার হাজার হাজার মানুষ৷ ভোর থেকে দীর্ঘ লাইন ধরে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে প্যারেড স্কয়ারে প্রবেশ করেন তারা৷ প্যারেড স্কয়ারে সাধারণ দর্শকদের জন্য নির্ধারিত এলাকায় স্থান সংকুলান না হওয়ায় অনেকে পুরাতন বিমানবন্দরের পাশের রাস্তায় অবস্থান নেন৷ এখানে থেকে তারা ফ্লাইপাস্ট ও এরোবেটিক ডিসপ্লে উপভোগ করেন৷
অভিবাদন মঞ্চের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশাল প্রতিকৃতি রাখা হয়৷ তার পাশে ছিল জাতীয় চার নেতা, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি৷ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির ওপরে ছিল মুক্তিযুদ্ধের সাত বীরশ্রেষ্ঠের ছবি৷বাদক দলের মঞ্চের পাশে প্রদর্শণ করা হয় লাল-সবুজ পাতা দিয়ে তৈরি জাতীয় পতাকা৷এবারের কুচকাওয়াজে অধিনায়ক ছিলেন নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান৷
কুচকাওয়াজে বাংলাদেশ সেনা বাহিনীতে নতুন সংযোজিত মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম, এমবিটি-২০০০ ট্যাংক,সেলফ প্রোপেল্ড গান, আর্মার্ড লাইট ভেহিকল ও উইপন লোকেটিং রাডার এসএলসি-২, বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে নতুন সংযোজিত ডিফেন্ডার ক্লাস বোট এবং বিমান বাহিনীতে সংযোজিত সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল সিস্টেম প্রদর্শিত হয়৷২০০ ফুট দীর্ঘ ও ১২০ ফুট প্রস্থের একটি জাতীয় পতাকাও প্রদর্শিত হয় কুচকাওয়াজে৷
পদাতিক বাহিনীর কুচকাওয়াজের পর অত্যাধুনিক রণসাজে সজ্জিত দল রাষ্ট্রপতিকে অভিবাদন জানায়৷ এছাড়া ওয়ার ডগ ও সম্মিলিত অশ্বারোহী কন্টিনজেন্ট রাষ্ট্রপতিকে অভিবাদন জানায়৷ পরে আর্মি এভিয়েশন, নেভাল এভিয়েশন ও র্যা ব এর ফ্লাই পাস্ট অনুষ্ঠিত হয়৷ এছাড়া বিমানবাহিনীর ডিসপ্লে দর্শকদের মুগ্ধ করে৷বিমান বাহিনীর অংশগ্রহণে রাষ্ট্রপতিকে ফ্লাইং সেলুট’ দেয় যুদ্ধ বিমান ‘মিগ-২৯’৷ বিমান বাহিনীর এফ-৭ বিজি যুদ্ধ বিমান লাল সবুজ ধোঁয়া উড়িয়ে রাষ্ট্রপতিকে অভিবাদন জানায়৷
আয়োজনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল জাতীয় পতাকাসহ প্যারাশুট জাম্প৷ এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সম্পর্কিত প্রদর্শনীও ছিল৷এরপর সম্মিলিত বাদক দলের সালাম প্রদানের মধ্য দিয়ে কুচকাওয়াজ শেষ হয়৷ এবার মোট ৭১৬ জন বাদক দলে অংশ নেন৷কুচকাওয়াজ শেষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ প্যারেডে অংশ নেওয়া কন্টিনজেন্ট কমান্ডারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন৷