দৈনিকবার্তা-ময়মনসিংহ, ২০ ডিসেম্বর: ৭১ এর বীরাঙ্গনা সুরবালা৷ বৃদ্ধ বয়সে অন্যের দেওয়া সরিষা ভাঙিয়ে প্রতিদিন জীবনের ঘানি টেনে যাচ্ছেন তিনি৷ সরিষা ভাঙিয়ে কোনো টাকা পান না তিনি৷ সরিষা ভাঙানোর বিনিময়ে পান সরিষার খৈল৷ এই খৈল বিক্রির টাকা ও কুড়িয়ে আনা বিভিন্ন গাছের শুকনো ডালপালা বিক্রি করে দিনাতিপাত করছেন৷ সুরবালা সিংয়ের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার পশ্চিম বাখাই গ্রামে৷ মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার, আলবদর, আল শামস ও পাকিসত্মানিদের দ্বারা সম্ভ্রম হারিয়েছেন তিনি৷ হানাদার ও তাদের দোসররা সুরবালার সম্ভ্রম লুটে নিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, তার স্বামী নিগেন্দ্র চন্দ্র সিংকে ধরে নিয়ে ১৯৭১ সালের ৪ আগস্ট ফুলপুরের সরচাপুর গুদারাঘাটে নির্মমভাবে হত্যা করে৷ স্বামী ও সম্ভ্রম হারিয়ে প্রাণভয়ে ভারতে পালিয়ে যান সুরবালা সিং৷ দেশ স্বাধীনের পর আবার দেশে ফিরে আসেন তিনি৷ বর্তমানে তেলের ঘানি টেনে অনাহারে অর্ধাহারে কোনো রকমে জীবনটা চালিয়ে নিচ্ছেন সুরবালা সিং৷ তাঁর মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে রয়েছে ছোট্ট একটি কুঁড়ে ঘর৷ ঘরে নেই কোনো আসবাবপত্র, নেই চৌকি কিংবা খাট৷ নেই কোনো ভালো কাপড়- চোপড়, শুধু কাঁথাকে সম্বল করে শীত নিবারণ করছেন তিনি৷ বৃদ্ধ বয়সে অন্যের দেওয়া সরিষা ভাঙিয়ে প্রতিদিন জীবনের ঘানি টেনে যাচ্ছেন তিনি৷ সরিষা ভাঙিয়ে কোনো টাকা পান না তিনি৷ সরিষা ভাঙানোর বিনিময়ে পান সরিষার খৈল৷ এই খৈল বিক্রির টাকা ও কুড়িয়ে আনা বিভিন্ন গাছের শুকনো ডালপালা বিক্রি করে দিনাতিপাত করছেন৷ কিন্তু এভাবে আর কতদিন জীবনের ঘানি টানবেন সুরবালা৷ সুরবালার তিন মেয়ে৷ অনেক কষ্টে মেয়েদের বিয়ে দিলেও অভাবের কারণে বিধবা হয়ে ফিরে আসে স্বামীর সংসার থেকে৷ নিজের অভাব, অনটন সামলাতেই তিনি যেখানে হিমসিম খাচ্ছেন তার ওপর মেয়েদের বিধবা হওয়ার বিষয়টি তাঁকে আরও বেশি কষ্ট দিচ্ছে৷ মেয়েরা অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনো রকমে জীবন চালায়৷ এমন বিপর্যস্ত অবস্থায় ওয়ার ক্রাইম ফেঙ্ ফাইনন্ডিং কমিটি (ডঈঋঋঈ)-এর কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সাংবাদিক এটিএম রবিউল করিম ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অনুসন্ধান চালিয়ে ৫০ জনের একটি তালিকা করেছেন৷ তিনি জানান, অনেকেই (বীর নারীরা) সামাজিক কারণে এখনো মুখ খুলছেন না৷ চলতি বছরের মার্চ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক সহায়তা উদ্যোগ নামে একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পরিচালক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেনের ব্যবস্থাপনায় ময়মনসিংহ জেলার ১৫ জন বীর নারীকে প্রতিমাসে ৫ শত টাকা করে সম্মানী ভাতা দেওয়া হচ্ছে৷ বীর নারী সুরবালা সিং চান সামাজিক সম্মান ও স্বীকৃতি৷ স্বাধীনতার ৪৩ বছর পেরিয়ে গেছে৷ এ জেলায় শত শত বীর নারী থাকলেও তাঁদের কোনো খোঁজখবর কেউ নেয়নি৷ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আজও নেয়নি কোনো কার্যকর উদ্যোগ৷ অভাব, অনটন, অবহেলা, বঞ্চনা, দারিদ্র্যই সঙ্গী হয়ে আছে এসব বীর নারীদের জীবনে৷ জেলায় শত শত বীর নারী থাকলে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার, আলবদর, আল শামস ও পাকিসত্মানিদের দ্বারা ধর্ষিতা বীর নারীদের তালিকা জেলা প্রশাসন কিংবা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেউ করেনি৷