দৈনিকবার্তা-লালমনিরহাট, ৩০ ডিসেম্বর: লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার সেই বিচ্ছিন্ন লোকালয় ধবলগুড়িবাসীকে বিজয়ের ৬২ বছর পর হলেও একটি শহীদ মিনার উপহার দিয়েছে আওয়ামীলীগের এক তরম্নন নেতা৷ আওয়ামীলীগের এ তরম্নন নেতা হলেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রাথমিক মোতাহার হোসেনের ছেলে হাতীবান্ধা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মাহামুদুল হাসান সোহগ৷ তিনি এ শহীদ মিনারটি নির্মাণ করে দিয়ে ওই এলাকার মানুষের মাঝে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন৷
এলাকাবাসী জানায়, কবে জন্ম হয়েছে ধবলগুড়ি গ্রামটি৷ ওই এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিরাও স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেনি৷ ধরলা নদীটি কবে কিভ াবে ওই গ্রামকে পাটগ্রাম উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে, তারও কোনো তথ্য জানা যায়নি৷ তবে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই এখানে মৃতু্য বরণ করেছে৷ এখনও কেউ কেউ বেঁচে আছেন৷ তাদের মধ্যে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ৷ তিনি বলেন, আমরাই মাহামুদুল হাসান সোহাগের কাছে একটি শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি জানাই৷ তারই প্রেৰিতে শহীদ মিনারটি স্কুলে নির্মাণ করে দেন তিনি৷ এখন এই গ্রামের মানুষও শহীদ মিনারে ভাষা শহীদসহ মুক্তিযুদ্ধের অর্জন বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে পারবে তরম্নন প্রজন্ম৷ শহীদ মিনার নির্মাণ করে ধবলগুড়িবাসীর স্মৃতির সাথে জড়িয়ে থাকল সোহাগ৷ পিছিয়ে পড়া এলাকা ধবলগুড়িতে শহীদ মিনার নির্মাণ হওয়ায় খুশিতে আত্মহারা ছাত্র-ছাত্রীসহ ছোট-বড় সবশ্রেণি পেশার মানুষ৷ ছাত্রছাত্রীরা জানায়, গত সোমবার নবনির্মিত শহীদ মিনারটি সর্বসত্মরের মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে৷
ধবলগুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিৰক আজিজার রহমান বলেন, একটি পশ্চাত্পদ অজোপাড়া গাঁ ধবলগুড়ি৷ ধরলা নদীর সৃষ্টির পর থেকেই গ্রামটি মুল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল৷ তিনদিকে ভারত বেষ্ঠিত গ্রামটির প্রায় ১৬/১৭ হাজার মানুষ বসবাস করে৷ শিৰা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বঞ্চিত এই এলাকার মানুষ লেখাপড়ার প্রতি তেমনটা গুরম্নত্ব দিত না৷ স্থানীয় কয়েকজন শিৰানুরাগী ব্যক্তির উদ্যোগে ধবলগুড়ি উচ্চ বিদ্যালয় গড়ে ওঠে৷ ধরলা নদীর উপর সেতু নির্মিত হয়েছে৷ বিদু্যত্ সংযোগ পেয়েছে৷ এখন রাসত্মা নির্মাণের কাজ চলছে৷ শহীদ মিনার ছিল না৷ সেটিও নির্মাণ হয়ে গেছে৷ ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি এলাকার মানুষও ভাষা শহীদসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী লোকজন বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবস পালনে এই শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাবে৷ একটি জাতির চেতনার প্রতীক শহীদ মিনারটি নির্মাণ করে দিয়ে মাহামুদুল হাসান সোহাগ এই গ্রামের ইতিহাসের স্বাৰী হয়ে থাকবেন বলে দাবি তার৷
ধবলগুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী উম্মে সুমাইয়া মেমোরি, কিছমাতুল আম্বিয়া, এসএসসি পরীৰার্থী রাসেল হোসেন ও নবম শ্রেণির ছাত্র রাশেদ হোসাইন আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, এখন থেকে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি এলাকার তরম্ননপ্রজন্ম ভাষা শহীদ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়ে শহীদ মিনার শ্রদ্ধা জানাবে৷ এটি এলাকার চেতনার প্রতীক হয়ে থাকবে৷
মাহামুদুল হাসান সোহাগ বলেন, ‘ভারত থেকে ধেয়ে আসা ধরলা নদী পাটগ্রাম উপজেলার জোংড়া ইউনিয়নবাসীকে দ্বি-খন্ডিত করে রাখে৷ ধরলা নদীর নামেই গড়ে ওঠে ধবলগুড়ি গ্রাম৷ সেই ধবলগুড়িবাসী যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরম্ন করে সবকিছু থেকেই বিচ্ছিন্ন ছিল নদীর কারণে৷ মহাজোট সরকার ধবলগুড়িবাসীর চলাচলের জন্য ধরলা সেতু নির্মাণ করে দেয়৷ চলাচলের জন্য পাকারাসত্মাও নির্মাণ করছে৷ বিদু্যত্ সংযোগও দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু ওই গ্রামে কোনো শহীদ মিনার ছিল না৷ স্থানীয় অধিবাসীদের দাবির প্রেৰিতেই ধবলগুড়িবাসীর জন্য ধবলগুড়ি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শহীদ মিনারটি নিজ উদ্যোগেই নির্মাণ করে দিয়েছি৷ যেখানে বাঙালি জাতির চেতনার স্বারকবহন করছে৷