দৈনিকবার্তা-ঢাকা ১১ জানুয়ারি: বাংলাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম আর নেই৷ রোববার ভোর ৫টা ৫১ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন৷ তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর৷ দীর্ঘদিন ধরেই লিভার ক্যান্সারে ভুগছিলেন এ প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা৷চাষী নজরুল ইসলামের মরদেহ সকাল ৮টায় ল্যাবএইড হাসপাতাল থেকে কমলাপুরের জসিম উদ্দিন রোডে তার বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখান থেকে দুপুর ১২টার দিকে তার মৃতদেহ কমলাপুর বড় মসজিদে নেয়া হয়৷ সেখানেই বাদ-জোহর তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়৷ পরে গোপীবাগ ব্রাদার্স ক্লাবে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তার মরদেহ রাখা হয়েছে ল্যাবএইডের হিমাগারে৷ খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামকে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার সমষপুর গ্রামে তাঁর বাবা মোসলেম উদ্দিনের কবরের পাশে সমাহিত করা হবে৷
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সোমবার বিকেলে মরহুমের লাশ তাঁর পৈত্রিক বাড়ি শ্রীনগরের সমষপুর গ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে৷ সেখানে নামাজে জানাযা শেষে তাঁর অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী বাবার কবরের পাশেই তাঁকে দাফন করা হবে৷ সূত্র জানায়, তাঁর প্রথম জানাজা সকাল দশটায় নগরীর এফডিসিতে অনুষ্ঠিত হবে৷ সেখান থেকে তার মরদেহ সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে৷ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানো শেষে বিকেলে মুন্সীগঞ্জে তাঁর নিজগ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে৷ সেখানে জানাজা শেষে তাঁর বাবার কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হবে৷ জাতীয় চলচ্চিত্র ও একুশে পদক প্রাপ্ত চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুলের মৃত্যুতে মুন্সীগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে শোকের ছায়া বিরাজ করছে৷ তাঁর মৃতু্যতে চলচ্চিত্রের আরেক জীবন্ত কিংবদন্তি মুন্সীগঞ্জের সন্তান টেলিসামাদ বলেন, চাষী ভাই ছিলেন ভালো মনের একজন মানুষ৷ তাঁকে হারানোর বেদনা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়৷ চলচ্চিত্র একজন গুনী মানুষকে হারালো৷এছাড়া মুন্সীগঞ্জের বিশিষ্টজনেরা চাষী নজরুল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন৷ রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বিশিষ্ট চলচিচত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামের মৃতু্যতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন৷এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, তার মৃতু্যতে দেশের চলচিচত্র জগত একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র হারালো৷
আব্দুল হামিদ বলেন, চাষী নজরম্নল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ও জীবনধমর্ী চলচিচত্র নির্মাণ করে দেশবাসীর হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন৷ তিনি মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসনত্মপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান৷চাষী নজরুল ইসলাম দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রানত্ম হয়ে আজ সকালে নগরীর ল্যাব এইড হাসপাতালে ইনত্মেকাল করেন৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশিষ্ট চলচিচত্র পরিচালক ও নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলামের মৃতু্যতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন৷ আজ এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, চাষী নজরুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ও জীবনধমর্ী চলচিচত্র নির্মাণ করে দেশবাসীর হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন৷তিনি আরো বলেন, তার মৃতু্যতে দেশের অপূরণীয় ৰতি হয়ে গেলো৷শেখ হাসিনা মরহুমের আত্মার শানত্মি কামনা করেন এবং শোকসনত্মপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান৷
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলামের মৃতু্যতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ারোববার এক শোকবার্তায় বিএনপি চেয়ারপার্সন শোক জানান৷ তিনি বলেন, একজন গুণী ও মেধাসম্পন্ন চলচ্চিত্রকার হিসেবে চাষী নজরুল ইসলাম বহু কৃতিত্ব ও সুনাম অর্জন করেছিলেন৷ এজন্য তিনি জাতির কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন৷ কীর্তিমান এ পরিচালকের মৃত্যুতে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মনে যে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে, তাতে আমিও গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত হয়েছি৷ তার মৃতু্যতে দেশের চলচ্চিত্র জগতে যে শূন্যতার সৃষ্টি হলো, তা সহজে পূরণ হবার নয়৷
বিএনপি চেয়ারপারসন চাষী নজরুল ইসলামের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকাহত পরিবারের সদস্য, ভক্ত, গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি সমবেদনা জানান৷ মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর জেলা বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি এম মিজানুর রহমান খান, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক মো. ইকবাল হোসেন, দৈনিক মুন্সীগঞ্জ কাগজের সম্পাদক মোহাম্মদ আরফিন, মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান, নাট্যকার শিশির রহমান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মতিউল ইসলাম হিরু, সাধারণ সম্পাদক সাবি্বর হোসেন জাকির, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ঢালী, নাট্যকার হুমায়ুন ফরিদ তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন৷ তারা তাঁর শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান৷
স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণের এ পথিকৃতের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সোমবার এফডিসিতে নেয়া হবে তার কফিন৷ পরে বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে নামাজে জানাজা হবে৷ সোমবার গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুরের সমষপুরে পারিবারিক কবরস্থানে মায়ের কবরেই সমাহিত করা হবে বরেণ্য এ চলচ্চিত্র নির্মাতাকে৷ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাতাদের অন্যতম চাষী নজরুল ইসলাম৷ ‘ওরা এগারো জন, সংগ্রাম, ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’ চলচ্চিত্রের মধ্যে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসকে তুলে ধরেছেন মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে৷ চলচ্চিত্র শিল্পে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, একুশে পদকসহ আরো অনেক পুরস্কার৷
১৯৪১ সালের ২৩ অক্টোবর জন্ম নেওয়া গুণী এ মানুষটির পথ চলা শুরু, ১৯৬১ সালে খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক ফতেহ লোহানীর সঙ্গে ‘আছিয়া’ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে৷ পাশাপাশি আলি মনসুরের কৃষ্টি সংঘে সম্পৃক্ত থেকে অভিনয় করেছেন মঞ্চে৷ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে চলে যান রণাঙ্গণে৷ ১৯৭২ সালে চাষী নজরুল ইসলাম নির্মাণ করেন দেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র ওরা ১১ জন৷ এ চলচ্চিত্রের অধিকাংশ অভিনেতাই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা৷ এরপর একে একে নির্মাণ করেন সংগ্রাম, দেবদাস, শুভদা, হাঙ্গর নদী গ্রেনেডসহ ২৭টি চলচ্চিত্র৷ এর মধ্যে শুভদা ও হাঙ্গর নদী গ্রেনেড চলচ্চিত্র পরিচালনার জন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার৷ পাশাপাশি একুশে পদক ছাড়াও কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন অনেক পুরস্কার৷ চলচ্চিত্র পরিচালনার পাশাপাশি অভিনয়ও করেছেন বেতার, টেলিভিশনসহ বেশ কিছু চলচ্চিত্রে৷
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির ৪ বারের সভাপতি ছিলেন চাষী নজরুল ইসলাম৷ এছাড়াও চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্য, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির নির্বাহী সদস্যসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি৷