দৈনিকবার্তা-নয়াদিল্লী, ১৭ জানুয়ারি, ২০১৫ : কিংবদন্তী গীতিকার ও সুরকার গোবিন্দ হালদার আজ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার কাকুরগাছীতে তার কন্যার বাসভবনে পরলোকগমন করেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। তিনি বার্ধক্যজনিত রোগ ও কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন। তার প্রয়াণে বাংলাদেশের জনগণ ও শিল্পীমহলে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তার কন্যা গোপা ভট্টাচার্য বাসস’কে জানান, তিনি প্রায় দু’মাস আগে কলকাতার মানিকতলার জেএন রায় সেবাভবন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। প্রায় বারো দিন আগে তিনি হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে আসেন।
গোবিন্দ হালদারের লেখা অনেক গান ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাসহ স্বাধীনতাকামী বাঙালীদের প্রেরণা যুগিয়েছিল। ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’- কালজয়ী এই গানটি ছাড়াও ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা’, ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল রক্ত লাল’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’র মতো সাড়াজাগানো অনেক গানের রচয়িতা গোবিন্দ হালদার। গোবিন্দ হালদার ১৯৩০ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁয় জন্মগ্রহণ করেন। চাকরির সূত্রে তিনি প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে কলকাতায় চলে যান। গোবিন্দ হালদারের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বি মিয়া, চীফ হুইফ আসম ফিরোজ, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড. আতিউর রহমান ও ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তাঁরা তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেন, ‘তার দেশাত্মবোধক গান ১৯৭১ সালে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে লাখ লাখ বাঙ্গালীকে অনুপ্রাণিত করেছিল। গোবিন্দ হালদারের লেখা গান মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল। তার মৃত্যুতে জাতি একজন প্রকৃত বন্ধুকে হারালো। বাংলাদেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধে তার মূল্যবান অবদানের কথা সবসময় স্মরণ করবে।’ প্রধানমন্ত্রী তাঁর শোক বার্তায় বলেন, খ্যাতিমান এই গীতিকারের মৃত্যুতে বাংলাদেশের মানুষ তাদের একজন অকৃত্রিম বন্ধুকে হারালো। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রয়াত এ গীতিকারের লেখা ও সুরারোপিত গান মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দীপ্ত করার পাশাপাশি অবরুদ্ধ দেশবাসীকেও মুক্তির প্রেরণায় উজ্জীবিত করেছিল। বাংলাদেশের মানুষ চিরদিন তাকে গভীর শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার সাথে স্মরণ করবে। প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত এই গীতিকার ও সুরকার গোবিন্দ হালদারের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্য, ভক্ত ও গুণগ্রাহীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগে বাংলাদেশ বান্ধব এই গীতিকারের অসুস্থতা ও আর্থিক দুরবস্থার কথা শুনে তার চিকিৎসার সব দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ১৫ লাখ ভারতীয় রুপি অনুদান দেয়া হয়। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সম্প্রতি ভারত সফরে এসে অসুস্থ এই গীতিকারকে দেখতে হাসপাতালে যান। তিনি তার চিকিৎসার সার্বিক খোঁজখবর নেন। উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার বরেণ্য এ গীতিকারকে ‘মুক্তিযোদ্ধা মৈত্রী সম্মাননা’ দিয়ে সম্মানিত করে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনবাংলা বেতারে সম্প্রচারিত তার লেখা গানসমূহ মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করতো করতো। সাড়া জাগানো, উদ্দীপক ও কালজয়ী গানের স্রষ্টা এই গোবিন্দ হালদারের নামটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বীরগাথার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের অমর গীতিকার হিসেবে তার নাম চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।