দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৫ ফেব্রুয়ারি: নির্দলীয় সরকারের অধীনেঅংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য, জাতীয় সংলাপ ও জাতীয় সনদ রচনার যেকোনো উদ্যোগকে বিএনপি স্বাগত জানাবে। দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদ রোববার এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, পোশাকশিল্প মালিকদের অনশনে ব্যবসায়ী নেতারা সরকারকে পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল এবং ট্যাক্স প্রদান বন্ধ করে দেওয়ার যে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তাকেও বিএনপি স্বাগত জানাচ্ছে। বিবৃতিতে বলা হয়, অগণতান্ত্রিক অবৈধ সরকারকে রাজস্ব প্রদানের বৈধতা থাকতে পারে না।
বিজিএমইএর অনুষ্ঠানে সরকারি গোষ্ঠীর মদদে বোমা হামলা হয়েছে বলে আমরা মনে করি। এ ধরনের ঘৃণ্য ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।নির্দলীয় সরকারের অধীনে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য, জাতীয় সংলাপ ও জাতীয় সনদ রচনার যেকোনো উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই বলে জানিয়েছেন বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ।
বিবৃতিতে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্ব স্বীকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক ও দৃঢ় ভিত্তির ওপর নবনির্মাণের জাতীয় স্পৃহা পূরণে আজ সমাজের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ। ক্ষমতায় আরোহনের জন্য নয়, বরং স্থিতিশীল, গণতান্ত্রিক, সমৃদ্ধ, উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে পরিণত করার অদম্য বাসনা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্র মুক্তির চলমান আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। শত জুলুম-নির্যাতন নিপীড়ণসহ সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে তিনি প্রস্তুত রয়েছেন।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূল ভিত্তি সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচারের উপর ভিত্তি করে জনগণের অভিপ্রায়ের অভিব্যক্তিকে চূড়ান্ত রুপদানের লক্ষ্যে জাতীয় সনদ রচনা ও প্রয়োজনে সংবিধান পূণ:লিখন বর্তমান সময়ের দাবি। জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক ভিত্তিক সামাজিক পরিবর্তনের এই সুযোগকে অবশ্যই জনস্বার্থে ফলপ্রসূ করতে হবে। প্রত্যেক সৃষ্টির এবং বিজয়ের প্রসব বেদনা থাকে, সমগ্র জাতি আজ কষ্টসাধ্য বেদনাকে স্বীকার করেই প্রকৃত গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে বদ্ধপরিকর।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, শনিবার ২০ দলীয় জোটের পূর্ব ঘোষিত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে ঠাকুরগাঁও, মাগুরার শালিকা, নরসিংদীর মনোহরদী, সিলেট, বরিশাল, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানের মিছিলে সরকারদলীয় সন্ত্রাসী ও পুলিশ যৌথভাবে আক্রমণ চালায় এবং বিরোধীদলীয় অনেক নেতা-কর্মীকে আহত ও গ্রেফতার করে। আমরা এ ঘৃণ্য অপতৎপরতার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর পল্লবী থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরে আলমকে পুলিশ তার নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় খোঁজ নেয়া হলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতারের কথা অস্বীকার করে, কিন্তু ৫ দিন পর গতকাল নুরে আলমের লাশ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া গত শনিবার রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পুলিশী ক্রসফায়ারে ছাত্রদল নেতা আরিফকে হত্যা এবং গুলিবিদ্ধ করা হয়েছে রুবেল, সোহেল, নুরুল হাকিম ও পারভেজকে। তাদের প্রত্যেককে পুলিশ বাড়ি থেকে থানায় নিয়ে গিয়ে গায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে। আমরা এই ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ড ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং বিচার দাবি করছি।
বিবৃতিতে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দিনাজপুরে যানবাহনে পেট্রলবোমা ছুড়তে গিয়ে হাতে নাতে ধরা পড়া দুই ছাত্রলীগ নেতা উজ্জল ও জোবায়েরকে উপরের নির্দেশে ছেড়ে দেওয়া হয়। ইতিপূর্বে চৌদ্দগ্রাম ট্র্যাজেডি’র মূল হোতা ঘটনাস্থল থেকে পেট্রলবোমাসহ ধৃত যুবলীগ নেতা মানিক ও বাবুলকে রেলমন্ত্রীর নির্দেশে পুলিশ ছেড়ে দেয়। এভাবে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, মাগুরা, খুলনা, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী পেট্রলবোমাবাজী, ককটেল ফাটানো এবং বোমা তৈরির সময় হাতেনাতে ধরা পড়লেও উপরের নির্দেশে পুলিশ তাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। আমরা তথ্য উপাত্তসহ বারবার জাতির সামনে তা তুলে ধরেছি। বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমনপীড়ণ করেই ক্ষান্ত নয়, বরং গণআন্দোলনকে কলুষিত করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির ঘৃণ্য অপপ্রচার অব্যাহত রেখেছে এই স্বৈরাচারী চন্ডাল আওয়ামী সরকার। বিরোধী দল ও ভিন্নমত দমনের এ ঘৃণ্য ও নিকৃষ্টতম উদাহরণ সভ্য দুনিয়ার ইতিহাসে বিরল।
তিনি বলেন, গণহত্যা, গণগ্রেফতার, অত্যাচার, জুলুম-নির্যাতন ও পেটোয়া পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের হিংস্রোর ও পৈশাচিক তাণ্ডব অবৈধ সরকারের মসনদ রক্ষা করতে পারবে না, বরং নির্মম পতনকে তরান্বিত করবে। আওয়ামী দু:শাসন ও একনায়কতন্ত্রের বন্দী শিবির থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষার এই গণআন্দোলনের বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত গণতন্ত্র মুক্তির চলমান সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।