দৈনিকবার্তা-নাটোর, ২৯ মার্চ: নাটোরে ৩০ মার্চ মহান স্বাধীনতার প্রথম মুক্তিযুদ্ধ হয়। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে সারাদেশের মতো নাটোরের মানুষরাও পাক-হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে। সেই ৩০ মার্চ পাক-হানাদার বাহিনীর একটি সশস্ত্র দল আটটি গাড়ির বহর নিয়ে ঢাকা থেকে আরিচা ফেরী পার হয়ে নগরবাড়ী ঘাট হয়ে নাটোরের ধানাইদহ-আকন্দ সড়ক দিয়ে লালপুরে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে যাচ্ছিল। খবর পেয়ে সুগার মিলের কর্মকর্তা কর্মচারীরা মিলের প্রবেশপথে গোপালপুর রেলগেটে ওয়াগন দিয়ে বেরিকেড দেয়।
হানাদার বাহিনী বেরিকেড ভাঙতে না পেড়ে পিছু হটতে শুরু করে। সকাল ৮ টার দিকে আকন্দ সড়কের ইছামতি নদীর ওপর নির্মিত ব্রীজের পশ্চিম দিকে মুক্তিকামী জনগণ রাস্তা কেটে চলাচলের পথ বন্ধ করে দেয়। সেখানে প্রচন্ড গোলাগুলি শুরু করে দেয় পাকসেনারা। একদিকে নিরস্ত্র গ্রামবাসী আর অন্যদিকে সুশিক্ষিত, সশস্ত্র পাকবাহিনী। পাকসেনাদের গুলিতে নিহত হন বেশ ক’জন এলাকাবাসী। পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তারা। সুবিধা করতে না পেরে পাকবাহিনী এলোপাথারি গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে মেঠো পথ দিয়ে ময়না গ্রামে প্রবেশ করে। এসময় গ্রামবাসী চারদিক থেকে তাদের ঘিরে ফেলেন।
গ্রামের সাধারন লোকজনের সাথে নাটোর থেকে ইপিআর, আনসার ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দলে দলে যোগ দেয়। দু’পক্ষে শুরু হয় ব্যাপক গোলাগুলি। পাকবাহিনীর সমর্থনে ঢাকা থেকে আসা হেলিকপ্টার থেকে মুক্তিকামী মানুষের উপর চালানো হয় ব্যাপক গুলি বর্ষণ। দিনভর যুদ্ধ চলে। সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পরার সাথে সাথে নেমে আসে রাতের অন্ধকার। এসময় সংঘটিত হয়ে চারদিক থেকে পাকসেনাদের উপর হামলা চালায় স্বাধীনতা প্রত্যাশী সৈনিকরা। এই মুক্তিযুদ্ধে নাটোরের পক্ষে প্রথম শহীদ হন শহরের নীচাবাজার এলাকার মঙ্গলা সাহা নামের এক যুবক। এছাড়াও ময়না গ্রামের ১৫ জন সহ শহীদ হন আরো ৩০ জন। এই যুদ্ধে মুক্তিকামী বাঙ্গালীদের হাতে নিহত হয় সেনাকর্মকর্তা সহ পাকবাহিনীর আট সদস্য। নাটোরে এটাই প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ যা ময়নার যুদ্ধ নামে আজও পরিচিত।