দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৪ মে: পাবনা বৃহস্পতিবার (১৪ মে ২০১৫)। এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধে উত্তরাঞ্চলের ইতিহাসে দ্বিতীয় বৃহত্তম গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল পাবনা জেলার সাঁথিয়া ও ফরিদপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা ডেমড়ায়। ১৯৭১ সালের এই দিনে সহ¯্রাধিক মুসলমান-হিন্দু সম্প্রদায়ভূক্ত সাধারণ গ্রামাবাসী, আশ্রয় নেয়া মানুষ ও মুক্তিকামীদের নির্বিচারে হত্যা করে এদেশীয় রাজাকার, আলবদরসহ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, এলাকাটি নিরাপদ ভেবে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে হিন্দু মুসলমান ধর্ণাঢ্য ব্যবসায়িরা এ গ্রামে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তৎকালীন আলবদর, আল শামস্ প্রধান মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় এবং তারই নির্দেশে স্থানীয় দোসর আসাদ রাজাকারের নেতৃত্বে এ গ্রামে ২শ’ ৫০ জন ধর্ণাঢ্য হিন্দু ব্যবসায়িসহ প্রায় সহস্রাধিক মুক্তিকামী যোদ্ধা এবং স্থানীয় গ্রামবাসীকে নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। সেই সাথে তারা এই এলাকায় ব্যাপক লুটতরাজ ও নারী ধর্ষণ করে।
ফরিদপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার সেলিম মোর্শেদ জানান, উত্তরাঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহৎ গণহত্যা চালায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এই ডেমড়া গ্রামে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ঝোঁপ আর জঙ্গলে পরিপূর্ণ হয় এই বৃহৎ গণকবরটি। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর এই গণকবরের স্মৃতি ধরে রাখতে এখানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। তবে স্থানীয়দের দাবী, উত্তরাঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম গণহত্যার এই স্থানটি আগামী প্রজন্মের কাছে ইতিহাস হিসেবে তুলে ধরতে আরও বড়সড় পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। তাহলে আগামী প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবে। ২শ’ ৫০ জন হিন্দুকে সারিবদ্ধ ভাবে মাটি চাপা দেওয়া হয় এই গণকবরে। অনুরূপ ভাবে বাকি শহীদ মুসলমানদের লাশগুলোও সারিবদ্ধ ভাবে দাফন করা হয়। এই ইট সিমেন্টের কাজের আগে অর্থাৎ ৩৮ বছর ডেমড়ার এ গণকবরটি চিহিৃত ছিল অন্ধকারে। তখন প্রতি বছরের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিময় দিবসগুলো আসলে স্থানীয় জনগন কলার গাছ দিয়ে স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করে গণকবরে শায়িত শহীদদের স্মরণ করতেন। স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে প্রতিবারের ন্যায় ডেমড়া গণহত্যাস্থলে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা সভা, শহীদদের আত্মার শান্তিকামণায় কোরআনখানী ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
Discussion about this post