দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৬ জুলাই ২০১৫: একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের রাজাকার ফোরকান মলি্লককে মৃতু্যদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল-২৷ তার বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে গণহত্যা ও গণধর্ষণের তিনটিই প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সর্বোচ্চ এ দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে৷বৃহস্পতিবার সকালে এ রায় ঘোষণা করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইবু্যনাল৷ বিচারিক প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম৷ মোট মোট ২৯৭ প্যারা সম্বলিত ৯৯ পৃষ্ঠার রায়ের সংক্ষিপ্ত অংশ পাঠ করেন ট্রাইবু্যনাল চেয়ারম্যান৷ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পটুয়াখালীতে হত্যা-ধর্ষণের মত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তখনকার রাজাকার বাহিনীর সঙ্গী ফোরকান মলি্লকের সর্বোচ্চ সাজার রায় এসেছে৷ রায় ঘোষণার সময় লুঙ্গি আর ফতুয়া পরিহিত ফোরকান উপস্থিত ছিলেন কাঠগড়ায়৷
রায়ের পর আসামিপক্ষের আইনজীবী আবদুস সালাম খান দাবি করেন, পরিবারিক বিরোধের জেরে ফোরকানের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করা হয়েছিল৷তার আইনজীবী আবদুস সালাম খান রায়ের পর তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, যাদেরকে ভিক্টিম দেখানো হয়েছে, তাদের দুজনও আসামিকে নির্দোষ বলে সাক্ষ্য দিয়েছে৷ এরপরও ট্রাইবু্যনালের রায়ের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা রয়েছে৷রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, উনি দিনমজুর৷ আপিল করার মতো এবিলিটি তার নেই৷ আমি নিজেও ট্রাইবু্যনালে মামলা লড়েছি বিনা টাকায়৷ তারপরও আমরা ইনসিস্ট করেছি আপিল করার জন্য৷অন্যদিকে এ মামলার প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল বলেন, প্রত্যাশিত রায় পেয়েছি৷ মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে সরাসরি জড়িত ছিল এমন একজন আসামির সাজা হল৷আসামিপক্ষের আইনজীবী ফোরকানকে নিতান্ত গরিব ও দিনমজুর বললেও তিনি যে যুদ্ধাপরাধী ছিলেন, এই রায়ে তা প্রমাণ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বাদল৷ মানবতাবিরোধী অপরাধে সর্বোচ্চ সাজাপ্রাপ্ত পটুয়াখালীর ফোরকান মলি্লকের আপিলের সামথর্্য নেই বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী৷
ফোরকান মলি্লকের বিরুদ্ধে ৩, ৪ ও ৫ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত এবং ১ ও ২ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি৷ প্রমাণিত তিনটি অভিযোগের মধ্যে দু’টিতে (৩ ও ৫ নম্বর) ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃতু্যদণ্ডাদেশ এবং বাকি একটিতে (৪ নম্বর) আমৃতু্য কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে তাকে৷এর মধ্যে মির্জাগঞ্জ থানার সুবিদখালীতে চারজনকে গণহত্যা, লুটপাট, ধর্মান্তরকরণ এবং দেশান্তরকরণ(৩ নম্বর অভিযোগ) এবং কাকড়াবুনিয়ার আলেয়া বেগমকে গণধর্ষণ ও তার বাবাসহ তিনজনকে গুলি করে হত্যার(৫ নম্বর অভিযোগ) দায়ে ফোরকান পেয়েছেন ফাঁসির আদেশ৷ অন্যদিকে সুবিদখালীর শোভা ও সুষমা রাণী নামে দুই হিন্দু নারীকে গণধর্ষণের দায়ে পেয়েছেন আমৃতু্য কারাদণ্ডাদেশ৷প্রমাণিত না হওয়া ১ ও ২ নম্বর অভিযোগ থেকে অব্যাহতি ও খালাস পেয়েছেন ফোরকান৷ এ দু’টি অভিযোগ ছিল- সুবিদখালী বাজারের চারজনকে হত্যার পর তাদের বাড়ি-ঘরে লুটপাট(১ নম্বর অভিযোগ) এবং সুবিদখালী বাজারের তিন সহোদরকে ধর্মান্তরিতকরণ (২ নম্বর অভিযোগ)৷রায়ে বলা হয়, আসামির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে তিনটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে৷
এর মধ্যে তৃতীয় ও পঞ্চম অভিযোগে হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ফোরকানের মৃতু্যদণ্ড কার্যকর করতে বলেছে আদালত৷ আর চতুর্থ অভিযোগে ধর্ষণ ও দেশত্যাগে বাধ্য করার ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার দায়ে এই যুদ্ধাপরাধীকে দেওয়া হয়েছে আমৃতু্য কারাদণ্ড৷ প্রথম দুটি ঘটনায় প্রসিকিউশন ফোরকানের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করতে না পারায় তাকে এসব অভিযোগ েেথকে খালাস দিয়েছে আদালত৷
একাত্তরে ফোরকান ছিলেন মুসলিম লীগের একজন সক্রিয় কর্মী৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হলে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর সমর্থনে গড়ে তোলা সশস্ত্র রাজাকার বাহিনীর সঙ্গে মিলে মির্জাগঞ্জ থানার কাকড়াবুনিয়া, দেউলী, সুবিদখালী, কলাগাছিয়াসহ বিভিন্ন গ্রামে যুদ্ধাপরাধ ঘটান বলে রায়ে উঠে এসেছে৷ট্রাইবু্যনালের প্রসিকিউশনের তথ্য অনুযায়ী, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ থানার ছইলাবুনিয়া গ্রামের সাদের মলি্লক ও সোনভান বিবির ছেলে ফোরকান মলি্লক (৬৪) পড়ালেখা করেছেন পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত৷ মূলত কৃষিজীবী হলেও ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি৷স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলে স্বাধীনতাবিরোধীরা আবার রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হতে শুরু করলে ১৯৭৭ সালে ফোরকানও স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন৷এ পর্যন্ত রায় আসা ২০টি মামলার ২২ আসামির মধ্যে ফোরকান হলেন পঞ্চদশ ব্যক্তি, যুদ্ধাপরাধের দায়ে যার সর্বোচ্চ সাজার আদেশ হল৷
একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, ধর্ষণ ও অগি্নসংযোগের অভিযোগে ২০০৯ সালে ২১ জুলাই ফোরকানের বিরুদ্ধে মির্জাগঞ্জ থানায় মামলা করেন আবদুল হামিদ নামে এক ব্যক্তি৷ পরের বছর ফেব্রুয়ারিতে পটুয়াখালীর আদালতে তার বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হয়৷প্রাথমিক তদন্তে ফোরকানের যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ পাওয়ার পর মামলাটি পটুয়াখালী থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালে পাঠানো হয়৷ অভিযোগের তদন্ত শুরু করেন প্রসিকিউশনের তদন্ত র্কমর্কতা সত্যরঞ্জণ রায়৷
এরপর পটুয়াখালীর গোয়েন্দা পুলিশ ২০১৪ সালের ২৫ জুন ফোরকানকে বরিশালের রুপাতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেপ্তার করে৷ ৩ জুলাই ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে করাগারে পাঠানো হয়৷এরপর ২ ডিসেম্বর ফোরকান মলি্লকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইবু্যনাল-২৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আটজনকে হত্যা ও গণহত্যা, ৪ জনকে ধর্ষণ, ৩ জনকে ধর্মান্তরে বাধ্য করা, ১৩টি পরিবারকে দেশান্তরে বাধ্য করা, ৬৪টি বসতবাড়ি ও দোকানে লুটপাট ও অগি্নসংযোগের মোট পাঁচটি ঘটনায় অভিযুক্ত করে গত বছর ১৮ ডিসেম্বর ফোরকানের বিচার শুরু হয়৷প্রসিকিউশনের প্রারম্ভিক বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ১৯ জানুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর পর তদন্ত কর্মকর্তাসহ মোট ১৪ জন ফোরকানের বিরুদ্ধে জবানবন্দি দেন৷ অন্যদিকে ফোরকান মলি্লকের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন চারজন৷সাক্ষ্য শেষে আসামিপক্ষে আব্দুস সালাম খান ও টওসিকিউশনের পক্ষে মোখলেসুর রহমান বাদল আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন৷ বিচারিক কার্যক্রম শেষে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বাধীন ট্রাইবু্যনাল-২ গত ১৪ জুন মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখে৷
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরু হয়৷ ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি প্রথম রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক রুকন আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ আসে৷ পলাতক থাকায় তিনি আপিলের সুযোগ পাননি৷৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়, যা প্রত্যাখ্যান করে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান নেয় হাজার হাজার মানুষ৷রায়ে বলা হয়েছে, পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার ছইলাবুনিয়া গ্রামের সাদের মলি্লক ও সোনভান বিবির ছেলে ফোরকান মলি্লক (৬৪) একাত্তরে ছিলেন মুসলিম লীগ সদস্য৷ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি অন্যদের নিয়ে শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠন করেন৷ মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক সুবিদখালী বাজারের ডা. দেবেন্দ্রনাথ সরকার ও তার স্ত্রী বিভা রানীকে হত্যার পর তার বাসায় থানা শান্তি কমিটি ও সুবিদখালী পুরাতন হাসপাতাল ভবনে রাজাকারদের প্রধান ক্যাম্প করে মির্জাগঞ্জ থানার বিভিন্ন এলাকায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নানা মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন ফোরকান মলি্লক ও রাজাকার বাহিনী৷হত্যা-গণহত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠন, অগি্নসংযোগ, ধর্মান্তরকরণ ও দেশান্তরকরণের ৫টি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হন ফোরকান মলি্লক৷ এর মধ্যে ছিল ৮ জনকে হত্যা ও গণহত্যা, ৪ জনকে ধর্ষণ, ৩ জনকে ধর্মান্তরকরণ, ১৩টি পরিবারকে দেশান্তরকরণ, ৬৪টি বসতঘর ও দোকানপাটে লুন্ঠন ও অগি্নসংযোগের অভিযোগ৷ আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন’১৯৭৩ এর ৩(২)(এ), ৩(২)(সি), ৩(২)(জি), ৩(২)(এইচ), ৩(২)(আই) এবং ২০ (২) ধারায় আনা হয় এসব অভিযোগে৷সংক্ষিপ্ত রায়ের পর্যবেক্ষণে ট্রাইবু্যনাল চেয়ারম্যান বলেন, প্রসিকিউশন ফোরকান মলি্লককে রাজাকার কমান্ডার বলে অভিহিত করলেও তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ তাই বলে তার অপরাধ দয়া বা করুণা পাওয়ার যোগ্য নয়৷ ৫ নম্বর অভিযোগে গণধর্ষণের দায়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ সম্পর্কে ট্রাইব্যুনাল তার রায়ে বলেন, গণধর্ষণ হত্যা-গণহত্যার চেয়েও বড় অপরাধ৷সর্বোচ্চ দণ্ডাদেশের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এ মামলার প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল৷অন্যদিকে মৃতু্যদণ্ডপ্রাপ্ত ফোরকান মলি্লকের ছেলে জহির মলি্লক বলেছেন, আমার বাবা নির্দোষ৷ আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবো৷ তবে ফোরকান মলি্লকের আইনজীবী আব্দুস সালাম খান বলেন, আপিলের বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়৷ কারণ, আপিল করার সামথর্্য নেই আসামির৷
দুই অভিযোগে ফাঁসি: প্রমাণিত তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ১২ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ফোরকান মলি্লক ও তার সঙ্গী অন্যান্য সশস্ত্র রাজাকাররা গানবোটে করে পাকিস্তানি সেনাদের মির্জাগঞ্জ থানার সুবিদখালীতে নিয়ে আসেন৷ মুক্তিযোদ্ধাদের সংবাদবাহক কাকড়াবুনিয়া গ্রামের হাফিজ উদ্দিন খলিফা, মির্জাগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আব্দুল কাদের জমাদ্দার, সুবিদখালী বাজারের ডা. দেবেন্দ্রনাথ সরকার ও তার স্ত্রী বিভা রানীকে আটকের পর নির্যাতন চালিয়ে তাদের হত্যা করেন৷ গণহত্যা ছাড়াও লুটপাট, ধর্মান্তরকরণ এবং দেশান্তরকরণের মতো অপরাধ করেন তারা৷প্রমাণিত পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২২ আগস্ট পটুয়াখালীর কাকড়াবুনিয়ার আলেয়া বেগমকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় বাবা হাতেম আলী বাধা দিলে ফোরকান মলি্লক তাকে গুলি করে হত্যা করেন৷ আলেয়া বেগমকে পটুয়াখালী সার্কিট হাউজে তিনদিন আটকে রেখে গণধর্ষণ করা হয়৷ আলেয়াকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় সনদ কুমার এবং এলেম উদ্দিনকেও গুলি করে হত্যা করেন ফোরকান মলি্লক৷
প্রমাণিত চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১০ আগস্ট সুবিদখালীর শোভা এবং সুষমা রাণী নামে দুই হিন্দু নারীকে ধরে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করেন ফোরকান মলি্লক ও তার সহযোগীরা৷প্রমাণিত না হওয়া প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১২ আগস্ট সুবিদখালী বাজারের ডা. দেবেন্দ্রনাথ সরকার, তার স্ত্রী বিভা রানী, আব্দুল কাদের জমাদ্দার ও হাফিজ উদ্দিন খলিফাকে গুলি করে হত্যার পর তাদের বাড়ি-ঘরে লুটপাট করেন ফোরকান মলি্লক ও তার সহযোগীরা৷প্রমাণিত না হওয়া দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট মির্জাগঞ্জের সুবিদখালী বাজারের তিন সহোদরকে ধর্মান্তরিত করা হয়৷ তিন ভাই, রমণী কুণ্ডু, ডা. শ্যামসুন্দর কুণ্ডু ও সুনীল কুণ্ডুকে আটকের পর ফোরকান মলি্লক ও তার সহযোগীরা ধর্মান্তরিত করেন৷সকাল দশটা ৪১ মিনিটে এজলাসে আসন গ্রহণ করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারক প্যানেলের সদস্য বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহীনুর ইসলামের সমন্বয়ে তিন সদস্যের ট্রাইবু্যনাল৷ দশটা ৪৪ মিনিটে মুক্তিযুদ্ধে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে যুদ্ধাপরাধ সংঘটনকারী ফোরকানের মামলার রায় ঘোষণা শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান৷ ১১ মিনিটে দশটা ৫৫ মিনিটে রায় পড়া শেষ হয়৷এর আগে দশটা ৩৬ মিনিটে ট্রাইবু্যনালের হাজতখানা থেকে ট্রাইব্যুনালের এজলাসকক্ষে আসামির কাঠগড়ায় তোলা হয় ফোরকানকে৷ সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে একটি মাইক্রোবাসে করে এনে তাকে রাখা হয় ট্রাইবু্যনালের হাজতখানায়৷ সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটের দিকে কারাগার থেকে বের করে তাকে নিয়ে ট্রাইবু্যনালের উদ্দেশ্যে রওনা হয় মাইক্রোবাসটি৷ তার পরনে ছিল সাদা রঙের পায়জামা ও নীল রঙের চেক লুঙ্গি৷ চিন্তাযুক্ত অবস্থায় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে রায় শোনেন তিনি৷
Discussion about this post