দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৬ জুলাই ২০১৫ : একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পটুয়াখালীতে হত্যা-ধর্ষণের মত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তখনকার রাজাকার বাহিনীর সঙ্গী ফোরকান মল্লিকের সর্বোচ্চ সাজার রায় এসেছে। যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বৃহস্পতিবার এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বলা হয়, আসামির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে তিনটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
এর মধ্যে তৃতীয় ও পঞ্চম অভিযোগে হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ফোরকানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে বলেছে আদালত।আর চতুর্থ অভিযোগে ধর্ষণ ও দেশত্যাগে বাধ্য করার ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার দায়ে এই যুদ্ধাপরাধীকে দেওয়া হয়েছে আমৃত্যু কারাদণ্ড।প্রথম দুটি ঘটনায় প্রসিকিউশন ফোরকানের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করতে না পারায় তাকে এসব অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছে আদালত।
একাত্তরে ফোরকান ছিলেন মুসলিম লীগের একজন সক্রিয় কর্মী। বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হলে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর সমর্থনে গড়ে তোলা সশস্ত্র রাজাকার বাহিনীর সঙ্গে মিলে মির্জাগঞ্জ থানার কাকড়াবুনিয়া, দেউলী, সুবিদখালী, কলাগাছিয়াসহ বিভিন্ন গ্রামে যুদ্ধাপরাধ ঘটান বলে রায়ে উঠে এসেছে। এই রায়ের ৯৯ পৃষ্ঠার সংক্ষিপ্তসার পড়ার সময় ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহীনুর ইসলামও উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার সময় লুঙ্গি আর ফতুয়া পরিহিত ফোরকান উপস্থিত ছিলেন কাঠগড়ায়।
তার আইনজীবী আবদুস সালাম খান রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “যাদেরকে ভিক্টিম দেখানো হয়েছে, তাদের দুজনও আসামিকে নির্দোষ বলে সাক্ষ্য দিয়েছে। এরপরও ট্রাইব্যুনালের রায়ের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা রয়েছে।” রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “উনি দিনমজুর। আপিল করার মতো এবিলিটি তার নেই। আমি নিজেও ট্রাইব্যুনালে মামলা লড়েছি বিনা টাকায়। তারপরও আমরা ইনসিস্ট করেছি আপিল করার জন্য।”
অন্যদিকে এ মামলার প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল বলেন, “প্রত্যাশিত রায় পেয়েছি। মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে সরাসরি জড়িত ছিল এমন একজন আসামির সাজা হল।” আসামিপক্ষের আইনজীবী ফোরকানকে ‘নিতান্ত গরিব ও দিনমজুর বললেও’ তিনি যে যুদ্ধাপরাধী ছিলেন, এই রায়ে তা প্রমাণ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বাদল। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের তথ্য অনুযায়ী, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ থানার ছইলাবুনিয়া গ্রামের সাদের মল্লিক ও সোনভান বিবির ছেলে ফোরকান মল্লিক (৬৪) পড়ালেখা করেছেন পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। মূলত কৃষিজীবী হলেও ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলে স্বাধীনতাবিরোধীরা আবার রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হতে শুরু করলে ১৯৭৭ সালে ফোরকানও স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন।
এ পর্যন্ত রায় আসা ২০টি মামলার ২২ আসামির মধ্যে ফোরকান হলেন পঞ্চদশ ব্যক্তি, যুদ্ধাপরাধের দায়ে যার সর্বোচ্চ সাজার আদেশ হল।
Discussion about this post