দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২২ জুলাই ২০১৫: মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক জামালপুরের ৬ রাজাকারকে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের এক সপ্তাহের মধ্যে হাজির না হলে আসামিদের অনুপস্থিতিতে বিচার কার্যক্রম শুরু বিষয়ে আগামী ১০ আগস্ট আদেশ দেয়ার দিনও ধার্য করা হয়েছে।আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে বুধবার এ আদেশ দেয়। প্রসিকিউটর তাপস কান্তি বল আদালতে উপস্থিত ছিলেন।এক মামলায় আট আসামি হলেন- আশরাফ হোসেন (৬৪), অধ্যাপক শরীফ আহম্মেদ ওরফে শরীফ হোসেন (৭১), মো. আবদুল মান্নান (৬৬), মো. আবদুল বারী (৬২), মো. হারুন (৫৮), মো. আবুল হাশেম (৬৫), এডভোকেট শামসুল হক (৭৫) ও এস এম ইউসুফ আলী (৮৩)। তাদের মধ্যে আসামি এডভোকেট শামসুল আলম ও এস এম ইউসুফ আলী কারাগারে থাকলেও বাকী ৬ জন পলাতক রয়েছেন।প্রসিকিউটর তাপস কান্তি বল বলেন, এ মামলায় পলাতক ৬ আসামিকে এখনো গ্রেফতার করা যায়নি। তবে গ্রেফতারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।
গত ১৯ এপ্রিল এ আট আসামির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ৫টি ঘটনায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। মামলার আইও মতিউর রহমান বলেন, গত ২৫ মার্চ আট আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের কাছে হন্তান্তর করা হয়। এ আসামিদের বিরুদ্ধে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন হত্যা, গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও গুমের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ। এর আগে গত ২৪ মার্চ রাজধানীর ধানমন্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ৮ রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ৯২ পৃষ্ঠার মূল তদন্ত প্রতিবেদনসহ ৫৯৬ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে বিভিন্ন ধরনের সাক্ষ্য-প্রমাণ, দলিল ও ডকুমেন্টস রয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা মতিউর রহমান ২০১৩ সালের ৬ জুন থেকে তদন্ত কাজ শুরু করে ২৪ মার্চ তা সম্পন্ন করেন। মামলায় ঘটনার ৩৪ জন ও জব্দ তালিকার ৬ জনসহ মোট ৪০ জন সাক্ষি রয়েছে।মুক্তিযুদ্ধকালে ২২ এপ্রিল থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তৎকালীন জামালপুর মহকুমায় আসামিরা অপরাধগুলো সংঘটিত করেছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে জামালপুরে রাজাকার-আলবদর বাহিনী ও শান্তি কমিটি গঠন করে প্রশিক্ষণ প্রদান। স্থানীয় পিটিআই হোস্টেল ও আশেক মাহমুদ কলেজের ডিগ্রি হোস্টেল দখল করে নির্যাতন কেন্দ্র গড়ে তুলে সেগুলোতে ১০ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা-গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও গুমের অভিযোগ,৫০ হাজার বাড়িঘর ধ্বংস করে প্রায় ১২ কোটি টাকার ক্ষতিসাধনের অভিযোগ।
মামলার আইও মতিউর রহমান জানান, আসামিদের মধ্যে গ্রেফতারকৃত এডভোকেট শামসুল আলম এবং এস এম ইউসুফ আলী স্থানীয় জামায়াত নেতা। অন্যদিকে প্রধান আসামি পলাতক আশরাফ হোসেন আলবদর বাহিনীর জামালপুর মহকুমা কমান্ডার ছিলেন। তার মাধ্যমেই মূলত ইসলামী ছাত্রসংঘের বাছাই করা কর্মীদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনী গঠিত হয়। মামলাটি দায়েরের পর থেকেই তিনি পালিয়ে রয়েছেন। পলাতক অধ্যাপক শরীফ আহম্মেদ স্বাধীনতার পরে বিভিন্ন সময়ে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক এবং বাংলাদেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন।প্রসিকিউশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৩ মার্চ আশরাফ হোসেনসহ আট আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল-২। পরোয়ানা জারির পর ওই দিনই অভিযান চালিয়ে জামালপুর শহরের নয়াপাড়ার নিজ বাড়ি থেকে শামসুল হককে ও ফুলবাড়ীয়ার জাহেদা শফির মহিলা কলেজ গেট প্রাঙ্গণ থেকে ইউসুফ আলীকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে কারাগারে থাকা এ দুই আসামিকে তদন্তের স্বার্থে গত ৬ মার্চ সেফহোমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্ত সংস্থা।
এদিকে, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কক্সবাজারের মহেশখালীর ১৯ রাজাকার ফরমাল চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) দাখিল করার জন্য আগামী ২৩ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়েছে।আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল আজ এ আদেশ দেয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর রানাদাস গুপ্ত। অপরদিকে আসামী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসাদুজ্জামান। ১৯ আসামীর বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ দাখিলে দিন ধার্য ছিল। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে ফরমাল চার্জ দাখিলে সময় চাওয়া হয়।এ মামলায় গ্রেফতারকৃত কক্সবাজারের মহেশখালীর ছয় রাজাকারকে সেফহোমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ৮ এপ্রিল অনুমতি দেয় ট্রাইব্যুনাল। কক্সবাজারের মহেশখালীর মোট ১৯ জন এ মামলার আসামি। তার মধ্যে বিভিন্ন সময়ে সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে গ্রেফতারকৃত আসামি শামসুদ্দোহা কারাগারে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরন করেন। যে ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়া হয়েছে তারা হলেন- এলডিপি নেতা কক্সবাজার চেম্বারের সাবেক সভাপতি সালামত খান উল্লাহ খান ওরফে পঁচাইয়া রাজাকার, মোহাম্মদ রশিদ মিয়া, জিন্নাত আলী, মৌলভী ওসমান গণি, নুরুল ইসলাম ও বাদশা মিয়া। তাদেরকে তদন্ত সংস্থার ধানমন্ডির সেফহোমে নিয়ে আলাদা আলাদাভাবে মোট চারদিনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।এ মামলায় সব আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হলেও পলাতক রয়েছেন মৌলভী জাকারিয়া সিকদারসহ বাকি ১২ জন।প্রসিকিউটর রানাদাস গুপ্ত বলেন, মামলার আইও নুরুল ইসলাম সালামত খান, মোহাম্মদ রশিদ মিয়া ও মৌলভী জাকারিয়া সিকদারের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত আরো ১৯ জনের নাম পায়। বাকীদেরকে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করার চেষ্টা চলছে।
Discussion about this post