দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৭ জুলাই: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীর রায়ের খসড়া ফাঁসের মামলায় চার্জ (অভিযোগ) গঠনের শুনানি ফের পিছিয়েছে। সাকার আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে এ চার্জ শুনানির দিন আগামী ২০ সেপ্টেম্বর পুনর্র্নিধারণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।সোমবার মামলাটির চার্জ শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরীর অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে তার পক্ষে সময়ের আবেদন জানান আইনজীবী।ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এসএম শামসুল আলম শুনানি শেষে চার্জ শুনানির জন্য আগামী ২০ সেপ্টেম্বর নতুন করে দিন ধার্য করেছেন।
মামলার চার আসামি সাকার আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম, ম্যানেজার একেএম মাহবুবুল হাসান এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অফিস সহকারী (সাঁটলিপিকার) ফারুক হোসেন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী নয়ন আলী কারাগারে আটক আছেন। তাদেরকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল।জামিনে থাকা সাকা চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামের জুনিয়র আইনজীবী মেহেদী হাসান মামলার শুরু থেকেই পলাতক। সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরীর অসুস্থতার কথা বলে আইনজীবীরা সোমবার সময়ের আবেদন করলে বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইমস ট্রাইব্যুনালের বিচারক কে এম শামসুল আলম তা মঞ্জুর করে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ২০ সেপ্টেম্বর নতুন দিন ঠিক করে দেন।
ফলে আলোচিত এ মামলায় সাকা চৌধুরীর স্ত্রী, ছেলে ও আইনজীবীসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন পঞ্চমবারের মতো পিছিয়ে গেল।সাত আসামির মধ্যে ফারহাত ও তার ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী জামিনে রয়েছেন। সাকা চৌধুরীর আইনজীবী ফখরুল ইসলাম, সাকা চৌধুরীর ম্যানেজার মাহবুবুল আহসান এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কর্মচারী নয়ন আলী ও ফারুক হোসেন আছেন কারাগারে। আর ফখরুলের সহকারী মেহেদী হাসান পলাতক।
মাহবুবুল আহসানের পক্ষে সোমবার জামিনের আবেদন করা হলে বিচারক শুনানি শেষে তা নাকচ করে দেন।অভিযোগ গঠনের শুনানির নতুন তারিখ দিয়ে বিচারক বলেন, এরপর আর আসামিদের সময় দেওয়া হবে না।মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদেরকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।তবে রায়ের আগেই সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্য এবং আইনজীবীরা রায় ফাঁসের অভিযোগ তোলেন। তারা রায়ের ‘খসড়া কপি’ও সংবাদকর্মীদের দেখান।রায় ঘোষণার পরদিন ট্রাইব্যুনালের নিবন্ধক (রেজিস্ট্রার) একেএম নাসির উদ্দিন মাহমুদ বাদী হয়ে ২ অক্টোবর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে শাহবাগ থানায় একটি জিডি করেন। পরে ৪ অক্টোবর ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান শাহবাগ থানায় আরেকটি মামলা করেন।
গত বছরের ২৮ আগস্ট ডিবির পরিদর্শক মো.শাহজাহান এ মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২৫ জনকে সাক্ষী করা হয়। ট্রাইব্যুনালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী নয়ন ও সাঁটলিপিকার ফারুক হোসেনকে ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২০ নভেম্বর সেগুন বাগিচায় পাইওনিয়ার রোডের চেম্বার থেকে আইনজীবী ফখরুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবীর এক সহকারী বড় অঙ্কের অর্থের লোভদেখিয়ে ট্রাইব্যুনালের দুই কর্মীর মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়ের খসড়ার অংশবিশেষ বের করেন। ওই অংশটিই রায়ের দিন আদালতে সাংবাদিকদের দেখানো হয়।আসামি নয়ন ও ফারুক ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।এদিকে ট্রাইব্যুনালের ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের যে আপিল করেছিলেন, তার রায় হবে আগামী ২৯ জুলাই।
Discussion about this post