দৈনিকবার্তা-গৌরনদী (বরিশাল) ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫: অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে দেশকে পরাধীনতার হাত থেকে স্বাধীন করে এখন নিজেই জীবন যুদ্ধে হেরে গিয়ে পরাধীন জীবন যাপন করছেন৷ শক্তি সামর্থ যখন ছিল তখন কাঠমিস্ত্রী কাজ করে জীবন যাপন করেছেন,জীবনের শেষ বেলায় সে শক্তিটুকু হারিয়ে যাওয়ায় আজ দুবেলা দুমুঠো খাবার জুটছেনা তার৷ মুক্তিযোদ্ধা সনদ সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকা সত্বেয় আজো মুক্তিযোদ্ধার ভাতা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন ৷ সরকার আসে সরকার যায় কোন সরকারই খোজ নেয়না তার৷ বিনা চিকিত্সায় জীবন ধুকে ধুকে শেষ হয়ে যাচ্ছে,অর্থের অভাবে চিকিত্সা করাতে পারছেন না, অকালে মারা গেছে আয় রোজগার করা ছেলেটিও ৷ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার হরিসেনা গ্রামের মৃত অক্ষয় কুমার সরকারের পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা অনিল চন্দ্র সরকার (৭৪) ৷ জীবনের শেষ বেলায় এসেও ভাতা না পাওয়া একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা তিনি৷
বীর মুক্তিযোদ্ধা অনিল চন্দ্র সরকার একবুক কস্ট নিয়ে আক্ষেপ করেন, মুক্তিযোদ্ধা হয়েও জীবদ্দশায় ভাতা বা সম্মান না পেলে ,মারা গেলে ,মৃতদেহের উপড়ে রাষ্ট্রীয় সম্মান দিয়ে কি হবে? তিনি জানান, সংগ্রামের সময় গৌরনদী বন্দরের একটি সিনেমা হলে চাকরি করছি ,তহন যুদ্ধ শুরু কেবল হইছে,শরীরের রক্ত তহন টগবগ করছে,নাম লেখাইলাম মুক্তিবাহিনীতে৷ গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ড থেকে বন্দরে যেতে পোদ্দারবাড়ীর লোহার ব্রীজের এঙ্গেল ভিম খুলে ফেলি আমি ও আমার সাথে গোপাল কর্মকারের ছেলে কেস্টা ও নাড়ু ডাক্তারের বড় ভাই (তার নাম মনে নেই)৷ ওখান থেকে পালিয়ে যাই ভারতের টাকী ক্যাম্পের উদ্যেশ্যে৷
ভারতের টাকী ক্যাম্পের প্রধান দায়িত্বে ছিলেন মির্জা আফজাল হোসেন৷ ওখানে ট্রেনিং দিয়া ৯ নাম্বার সেক্টর কমান্ডার এর অধিনে যুদ্ধ করি৷ দেশ স্বাধীন করি৷ তিনি আরো জানান, ন্যাশনাল মিলিশিয়া ক্যাম্প বরিশাল সদর নর্থ সাব ডিভিশান,গৌরনদী কমান্ডার নিজাম উদ্দিন আকন স্বাক্ষরিত ২০/২/১৯৭২ ইং সার্টিফিকেট আছে,অধিনায়ক মেজর জেনারেল মুহাম্মাদ আতাউল গনি উসমানী কর্ত্তৃক সার্টিফিকেট যার ক্রমিক নং ূ ১০৭০৭৭ (সিলসহ) ,তবুও আজো প্রর্যন্ত পাই নাই কোন ভাতা৷ এরপর গ্রেজেট হওয়ার জন্য\”মুক্তিযোদ্ধা নিবন্ধন ফরম \”এর কাগজে আবেদন করি, সেখান থেকে একটি কাগজ আসে যে আপনার আবেদন সফলভাবে দাখিল হয়েছে, যার ডিজিআই নংূ ১৮৭১৩৬ ৷ আক্ষেপ করে তিনি বলেন, সরকার আসে সরকার যায় কিন্তু কোন খোজ খবরও নেয় নাই কোন সরকার ৷ স্ত্রী ছেলে মেয়ে নাতীদের নিয়ে অনেক কস্টে চলছে সংসার৷ আগে কাঠমিস্ত্রীর কাজ করতাম এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ হাত পা কাপে চোখে কম দেখি শরীরে নানান রোগ বাসা বেধেছে কাজকর্ম করতে পারছিনা ৷ আয় রোজগার করা ছেলেটা অকালে মারা যাওয়ায় এখন পরেছি আরো সমস্যায়৷ সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা , আমাকে যেন অন্তত মুক্তিযোদ্ধার সম্মানীয় ভাতা দেয়া হয়,তা যদি না দিতে পারেন তাহলে যেনো মারা যাবার পরে মৃতদেহের উপড় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া না হয়৷ জীবদ্দশায় সম্মানী ভাতা বা সম্মান পেলাম না,মৃত্যুর পরে সম্মান দিয়ে কি হবে?
Discussion about this post