দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১অক্টোবর ২০১৫ : একাত্তর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এম এ হান্নান এবং তার ছেলে রফিক সাজ্জাদকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে । ৮০ বছর বয়সী হান্নান ময়মনসিংহ-৭ আসনের (ত্রিশাল) সংসদ সদস্য। তিনি জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীরও সদস্য। এর আগে প্রসিকিউশনের আবেদনের ভিত্তিতে এমপি এম এ হান্নানসহ ময়মনসিংহের আট আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পরোয়ানা জারির পর পরই গ্রেফতার অভিযানে নামে পুলিশ।বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে বনানী থানার ওসি মো. সালাউদ্দিন নিশ্চিত করেছেন।তাৎক্ষণিকভাবে গুলশান থানার কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া না যাওয়ায় পাশের থানা বনানীর ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল।পরে ডিএমপির গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার রফিকুল ইসলাম জাপা নেতা হান্নানের সঙ্গে তার ছেলে রফিক সাজ্জাদকেও গ্রেপ্তারের খবর জানান।
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির এই নেতার ছেলেকে গুলশানে একটি অফিস থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বাবা- ছেলে দুজনের বিরুদ্ধেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।৮০ বছর বয়সী হান্নান ময়মনসিংহ-৭ আসনের (ত্রিশাল) সংসদ সদস্য। তিনি জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীরও সদস্য।একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের চলমান বিচারে এর আগে জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ার এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ কায়সারের সাজা হয়।যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিতদের মধ্যে বিএনপির সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ছাড়া বাকি প্রায় সবাই জামায়াতে ইসলামী সংশ্লিষ্ট।বৃহস্পতিবার (রাজধানীর গুলশানের নিজ বাসা থেকে ছেলেসহ হান্নানকে গ্রেফতার করে বনানী থানা পুলিশ। তাদেরকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বনানী থানার ওসি সালাহউদ্দিন।গত ১৯ মে হান্নানসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুর রহমানের স্ত্রী রহিমা খাতুন। ময়মনসিংহের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১নং আমলি আদালতে আন্তজার্তিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন’১৯৭৩ এর ৩ (২) ধারায় এ মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলাটি আমলে নিয়ে আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেন আদালতের বিচারক আহসান হাবিব। মামলায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এম এ হান্নান ছাড়াও জামায়াত নেতা ফকরুজ্জামান ও শহরতলীর গলগণ্ডা এলাকার গোলাম রব্বানীকে আসামি করা হয়। মামলার বাদিনী রহিমা খাতুনের বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বৈলর মুন্সীপাড়া এলাকায়।মামলায় অভিযোগ করা হয়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সক্রিয় সহায়তার লক্ষ্যে এম এ হান্নান ছিলেন ময়মনসিংহ জেলা শান্তি কমিটির সাধারণ সম্পাদক। ফকরুজ্জামান ও গোলাম রব্বানি আলবদর বাহিনীর সশস্ত্র সদস্য হিসেবে হান্নানের সহযোগী ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সময়ে আসামিরা শহরের নতুন বাজারে অবস্থিত এম এ হান্নানের নিজ বাসভবন, জেলা পরিষদ ডাকবাংলো টর্চার সেলের দায়িত্বে থেকে মুক্তিকামী সাধারণ নিরীহ মানুষদের ধরে এনে হত্যা করে লাশ ব্রহ্মপুত্র নদের চরে ফেলে রাখেন।
মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডার আব্দুর রহমানকে আসামি আব্দুল হান্নান তাদের সহযোগী রাজাকারদের সহযোগিতায় গৌরীপুর থানার ভাঙনামারী চর থেকে ১৯৭১ সালের ৯ অক্টোবর বিকেল ৪টার সময় ধরে আনেন। পরে ময়মনসিংহ শহরের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় টর্চার সেলে প্রকাশ্য দিবালোকে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুর রহমানের দুই চোখ উপড়ে ফেলে ও ডান হাত ভেঙে দিয়ে নিজে গুলি করে হত্যা করেন আসামি এম এ হান্নান। আসামিরা সহযোগী রাজাকারদের নিয়ে আব্দুর রহমানের বাড়ি লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়, আসামিরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মনোরঞ্জনের জন্য ময়মনসিংহ শহরের নিষিদ্ধপল্লী থেকে নারীদেরকে ধরে এনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পে সরবরাহ করেন। পরে এসব নারীদের ধর্ষণের পর হত্যা করে মরদেহ ব্রহ্মপুত্র নদে ফেলে দেওয়া হয়। এসব আসামিরা ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানার খাগডহর ইউনিয়নে মাইজপবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা আতাউর রহমান আতাকে ধরে নতুন বাজারে এম এ হান্নানের নিজ বাসায় বেয়নেট চার্জসহ অমানুষিক নির্যাতন শেষে হত্যা করে মরদেহ ব্রহ্মপুত্র নদে ফেলে দেন।
ময়মনসিংহ শহরের কাঁচিঝুলি এলাকার শামসুদ্দিন আহমেদ টেপা মিয়ার পুত্র ধারা, কলেজ রোড এলাকার আব্দুল খালেকের পুত্র রমজান, ডালপট্টি এলাকার আব্দুর রশিদ, চরপাড়ার নিজাম, মুমিনুন্নিসা কলেজের পেছনের সুরুজ আলী, মাইজবাড়ির আতা, আকুয়া হাজিবাড়ীর সুরুজ এবং ধোপাখোলা মোড়ের অ্যাথলেট শাহেদ আলীকে আলবদর বাহিনীকে দিয়ে ধরে এনে আসামিরা জেলা পরিষদের ডাকবাংলোর টর্চার সেলে বেয়নেট চার্জ ও গুলি করে হত্যা করে মরদেহ ব্রক্ষপুত্র নদে ফেলে দেন। মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়, মামলার সাক্ষী খন্দকার আব্দুল গণির সহোদর ছোট ভাই খন্দকার আব্দুল আলী রতনকে ১৯৭১ সালের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে আসামি এম এ হান্নান তার সহযোগীদের নিয়ে গাঙ্গিনারপাড় মকবুল রেডিও সার্ভিসের সামনে থেকে ধরে তার নতুন বাজারের বাসায় নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে হাত-পা ভেঙে ফেলেন। পরে সন্ধ্যায় তাকে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোর নিচে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেন। আব্দুল আলী রতনের মা ও বোন ফাতেমা জহুরা আসামি হান্নানের কাছে রতনকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুনয়-বিনয় করলে আসামি হান্নান তাদেরকে হুমকি প্রদান করে বলেন, তোমার বড় ছেলে আব্দুল গণিকে হত্যার জন্য গুলি লোড করা আছে’। এ কথা বলে তাদেরকে বের করে দেন। আসামিরা নিজেরা ও তাদের রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে ময়মনসিংহ অঞ্চলে ব্যাপক গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালান বলেও মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
Discussion about this post