দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২১ নভেম্বর ২০১৫: শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো. মুজাহিদের পরিবার।যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডের আইনি প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পর দণ্ড কার্যকরের তোড়জোড়ের মধ্যে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রপ্রধানের প্রতি এই আহ্বান জানানো হয়। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে মুজাহিদের স্ত্রী তামান্না ই জাহান বলেন, আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে আর্জি জানাই, তার বিরুদ্ধে একটা মামলা বিচারাধীন, সেই মামলা শেষ হওয়ার পর্যন্ত আমাকে যেন আইনি লড়াই চালানোর অধিকার দেওয়া হয়।
একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা এবং ইন্ধনের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সাবেক মন্ত্রী মুজাহিদ ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার অন্যতম আসামি। মুজাহিদের স্ত্রী বলেন, ২০১১ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সম্পূরক চার্জশিটে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই মামলায় দেড়শর মতো সাক্ষী তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন।এমতাবস্থায় আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে এই মামলায় নিজের পক্ষে শেষ পর্যন্ত আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অধিকার রাখেন। সম্পূরক চার্জশিটে একজন হত্যাকারী হিসেবে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করার কারণে তিনি সেই দায় থেকে মুক্তি পেতে চান।
মুজাহিদের সঙ্গে দেখা করতে আইনজীবীরা চেষ্টা চালাবেন জানিয়ে তার ছেলে আলী আহমেদ মাবরুর বলেন, যদি আইনজীবীরা সাক্ষাৎ করতে পারেন, তারা তার সাথে সাক্ষাৎ করে যদি বিষয়টা ক্লিয়ার করতে পারেন, করলেন। না করতে পারলে উনারা দেখা করে এসে আপনাদেরকে বিষয়টা বলবেন।মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় রিভিউয়ের আবেদন গত বুধবার খারিজ হয়ে যাওয়ার পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি মুজাহিদকে তা শুনিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।ফাঁসি এড়াতে এই যুদ্ধাপরাধীর শেষ সুযোগ দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়া। তবে প্রাণভিক্ষা চাইবে কি না, তা এখনও তিনি জানাননি।তামান্না জানান, গত ১৯ নভেম্বর পরিবারে সঙ্গে সাক্ষাতের সময় মুজাহিদ তাদের জানিয়েছিলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আপিল বিভাগের দেয়া আদেশের কপি তার কাছে আসলে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে লিখিতভাবে জানতে চাইবেন যে, ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তার অবস্থান কী হবে? সম্পূরক চার্জশিটে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করার কারণে জাতির সামনে একজন হত্যাকারী হিসেবে তার নাম এসেছে। আর সেই কারণেই তিনি আইনি লড়াই করে সেই দায় থেকে মুক্তি পেতে চান বলেও যোগ করেন মুজাহিদপতœী। তিনি বলেন, এই পর্যন্ত আদালতে হাজির হওয়া কোনো সাক্ষী এই ঘটনার সঙ্গে তাকে (মুজাহিদ) জড়িয়ে কোনো বক্তব্য রাখেননি। বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় যদি অন্য েেকানো মামলায় তার দণ্ড কার্যকর করা হয় তাহলে সেটা হবে তার নাগরিক অধিকারের লঙ্ঘন। মুজাহিদ এই দেশের একজন নাগরিক হিসাবে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে সংবিধানের অভিভাবক মনে করেন। যেহেতু রাষ্ট্রপতি ব্যক্তিগত জীবনে একজন আইনজীবী ও আইনবিদ। তাই তিনি আশা করেন রাষ্ট্রপতি নাগরিক হিসাবে তার আইনি ও সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন। আমি এবং আমার পরিবার আমার স্বামীর এই আবেদনটি তার ইচ্ছা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছাতে চায়। আমরা আশা করি এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলে সহযোগিতা করবেন।
এই সংবাদ সম্মেলনে মুজাহিদের স্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- মুজাহিদের ছেলে আলী আহাম্মেদ মাবরুর ও আলী আহাম্মদ তাহকীক, মাবরুরের খালা শাফিয়া তাসনিন, মুজাহিদের ভাই আলী আক্কাস মো. খালেছ ও আরেক ভাই মো. আজগর। এছাড়া মুজাহিদের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার দুই আইনজীবী এসএম কামাল উদ্দিন শেখ ও সাইফুর রহমানও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
Discussion about this post