দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২১ নভেম্বর ২০১৫: স্বাধীনতাবিরোধী যে কোনও চক্রান্ত মোকাবেলায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাধীনতা যুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তি- যোদ্ধাদের ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা এবং ২০১৪-২০১৫ সালে সশস্ত্র বাহিনীর শান্তিকালীন সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী পদক এবং অসামান্য সেবা পদকপ্রাপ্ত সদস্যদের পদক প্রদান অনুষ্ঠানে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে শনিবার সকালে ঢাকা ক্যান্টমেন্টে এসব কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।এর আগে শিখা অনির্বাণে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।সবাইকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে স্বাধীনতা পেয়েছে। আমরা বিজয় অর্জনকারী দেশ। সব সময় বিশ্ব দরবারে আমরা মাথা উঁচু করে চলবো, কারো কাছে মাথা নিচু করে নয়। সে আত্মবিশ্বাস নিয়েই আমাদের কাজ করতে হবে।মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের উত্তরাধিকারীদের কল্যাণে যা কিছু প্রয়োজন, তা করার প্রতিশ্র“তি পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্যে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ যাতে রোধ করতে না পারে, সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন,সরকার প্রধান হিসেবে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের উত্তরাধিকারীদের কল্যাণে যা কিছু প্রয়োজন তা করার জন্য আমি আমার দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করছি।মুক্তিযোদ্ধাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান’ অভিহিত করে তাদের মাসিক সম্মানী ভাতা ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।সকালে ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে ফুল দেওয়ার পর সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সাত বীরশ্রেষ্ঠসহ ৭০ জন বীরউত্তম ও বীরবিক্রম এবং তাদের উত্তরাধিকারীদের হাতে সম্মানীর চেক ও উপহার তুলে দেন।এসময় খেতাবপ্রাপ্ত কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের বিভিন্ন অসুবিধার কথা তুলে ধরেন।বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতির মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন,অনেকে অসুবিধার কথা বলেছেন। আমি কখনোই মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের কথা ভুলব না।
মুক্তিযুদ্ধকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা’ উল্লেখ করে তিনি বলেন,নিজের জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে মুক্তিযোদ্ধারা আমাদেরকে একটি দেশ ও একটি পতাকা উপহার দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের নির্ভুল তালিকা তৈরিতে ডাটাবেইজ কার্যক্রম চলছে বলেও প্রধানমন্ত্রী বলেন।ডাটাবেইজ কার্যক্রম সম্পন্ন করার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৯টি নিরাপত্তা বার কোডসহ মূল সনদপত্র প্রদানের বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে।আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানোর পাশাপাশি ভাতাভোগীর সংখ্যা এক লাখ থেকে বাড়িয়ে দুই লাখ করেছে।মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের মাসিক রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতা বৃদ্ধি করে সর্বনিম্ন নয় হাজার ৭০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতাপ্রাপ্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবার ও মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলোকে স্বল্পমূল্যে রেশন সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরে শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ভাতা, চিকিৎসা এবং রেশন সামগ্রী বাবদ প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং উত্তরাধিকারীদের রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতার আওতায় আনার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান।মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘ভূমিহীন অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ’ বাবদ ২২৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্প গ্রহণের কথাও জানান তিনি।প্রকল্পটিতে ২,৯৭১ জন সদস্যের জন্য বাসস্থান নির্মাণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।সব জেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৬৪টি ভবন নির্মাণ হবে। ইতোমধ্যে, ৩৫টি জেলায় ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন ও হস্তান্তর হয়েছে।অনুষ্ঠানে ২০১৪-২০১৫ সালে সশস্ত্র বাহিনীর শান্তিকালীন সেনা/নৌ/বিমান বাহিনী পদক এবং অসামান্য সেবা পদকপ্রাপ্ত সদস্যদের পদক দেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বলেন,আমাদের সরকার সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন, ভৌত ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সকল কল্যাণমূলক কার্যক্রম করে যাচ্ছে ও করে যাবে।শুধু দেশেই নয়,বহির্বিশ্বেও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সততা,নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে বলেও প্রধানমন্ত্রী আশাপ্রকাশ করেন।অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপ্যাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মইনুল ইসলাম।অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, নৌবাহিনী প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল এম ফরিদ হাবিব, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল আবু এসরার, মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, প্রতিরক্ষা সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সচিব এম এ হান্নান, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।
Discussion about this post