দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫: রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ৪৫তম বিজয় দিবস উপলক্ষে বুধবার প্যারেড পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেছেন।জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের আয়োজিত ও পরিচালিত প্যারেড অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ দেন।প্রায় দুই ঘণ্টা স্থায়ী আকর্ষণীয় প্যারেড অনুষ্ঠানটি সর্বস্তরের হাজার হাজার লোক প্রত্যক্ষ করেন।
বুধবার শেরেবাংলা নগরে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বর্ণাঢ্য এই কুচকাওয়াজে মুক্তিযোদ্ধা কন্টিনজেন্ট, সশস্ত্র বাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিভিন্ন শাখা ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অগ্রগতির তথ্য জানানো হয় অতিথিদের।বাংলাদেশ টেলিভিশন জাতীয় প্যারেড ময়দান থেকে এ অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করে।সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাষ্ট্রপতি জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক এবং তিন বাহিনীর প্রধানরা তাকে স্বাগত জানান।
সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের আয়োজনে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী, বিএনসিসি, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, আনসার ও ভিডিপি, কোস্ট গার্ড এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা সুসজ্জিতভাবে এই কুচকাওয়াজে অংশ নেন।কালো স্যুট ও সাদা শার্ট পরিহিত রাষ্ট্রপতি খোলা জিপে চড়ে কুচাকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। পরে অভিবাদন মঞ্চে দাঁড়িয়ে সালাম গ্রহণ করেন।মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক এবং তিন বাহিনীর প্রধানরা অভিবাদন মঞ্চে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ছিলেন।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, সচিব, সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা, বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও বিভিন্ন মিশনের প্রধান এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।আরও ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়, প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুল ও শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান সিদ্দিকী ববি। লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) বিষ্ণু কান্ত চতুর্বেদীর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ২৭ জন সদস্য এ সময় উপস্থিত ছিলেন।এ বছর প্রথমবারের মত কুচকাওয়াজে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি নারী কন্টিনজেন্ট রাষ্ট্রপতিকে সালাম জানায়।
গতবারের মতো এবারের কুচকাওয়াজেও অধিনায়ক ছিলেন নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।অভিবাদন মঞ্চের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশাল প্রতিকৃতি রাখা হয়। তার পাশে ছিল জাতীয় চার নেতা, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির ওপরে ছিল মুক্তিযুদ্ধের সাত বীরশ্রেষ্ঠর ছবি।বাদক দলের মঞ্চের পাশে প্রদর্শন করা হয় লাল-সবুজ পাতা দিয়ে তৈরি জাতীয় পতাকা।সমাজের বিভিন্ন ম্রেণি- পেশার কয়েক হাজার মানুষ দুই ঘণ্টাব্যাপী মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন।
মুক্তিযোদ্ধা কন্টিনজেন্ট রাষ্ট্রপতিকে সালাম জানানোর সময় দর্শক সারি থেকে তুমুল করতালি দিয়ে অভিবাদন জানানো হয়। এই কন্টিনজেন্টের নেতৃত্বে ছিলেন নৌ কমান্ডো সৈয়দ আহম্মদ মজুমদার।কুচকাওয়াজে আর্মি ও নেভাল এভিয়েশন ও র্যাব ফ্লাই পাস্ট করে রাষ্ট্রপতিকে সালাম জানায়। ফ্লাই পাস্টে ৪৪টি বিমান ও হেলিকপ্টার অংশ নেয়।কুচকাওয়াজে বাংলাদেশ সেনা বাহিনী, নৌ ও বিমান বানিহীতে নতুন সংযোজিত বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র ও সরঞ্জাম প্রদর্শিত হয়।২০০ ফুট দীর্ঘ ও ১২০ ফুট প্রস্থের একটি জাতীয় পতাকাও প্রদর্শিত হয় কুচকাওয়াজে।পদাতিক বাহিনীর কুচকাওয়াজের পর অত্যাধুনিক রণসাজে সজ্জিত দল রাষ্ট্রপতিকে অভিবাদন জানায়। এছাড়া ওয়ার ডগ ও সম্মিলিত অশ্বারোহী কন্টিনজেন্ট রাষ্ট্রপতিকে অভিবাদন জানায়।
কুচকাওয়াজে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সুসজ্জিত গাড়ি বহর তাদের বিভিন্ন উন্নয়নের বার্তা তুলে ধরে। এছাড়া বিমানবাহিনীর কে-৮, ইয়াক-১৩০, এফ-৭ বিজি ও মিগ-২৯ যুদ্ধ বিমানের অ্যারোবেটিক ডিসপ্লে দর্শকদের মুগ্ধ করে।বিমান বাহিনীর অংশগ্রহণে রাষ্ট্রপতিকে ফ্লাইং সেলুট দেয় যুদ্ধ বিমান ‘মিগ-২৯’। যুদ্ধ বিমানগুলো লাল সবুজ ধোঁয়া উড়িয়ে রাষ্ট্রপতিকে অভিবাদন জানায়।আয়োজনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল জাতীয় পতাকাসহ প্যারাশুট জাম্প।কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ শেষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী প্যারেডে অংশ নেওয়া কন্টিনজেন্ট কমান্ডারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
Discussion about this post