স্বাধীনতার ৪৫বছর পূর্তিতে বাংলাদেশকে বিশ্বে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে সব নাগরিককে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।স্বাধীনতা দিবসে শিশু-কিশোর সমাবেশে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা এই বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছেন। সেই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। ছোট সোনামণিদের মনে রাখতে হবে, আমরা বিজয়ী জাতি। কোনো দিক থেকে আমরা পিছিয়ে থাকব না। আমরা এগিয়ে যাব।শনিবার মহান স্বাধীনতা দিবসে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে শিশু কিশোর সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। সেখানে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে দৃষ্টিনন্দন কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়।
সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে শিশু-কিশোর সমাবেশে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। পরে সেখানে বক্তব্য দেন।বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর অত্যাচারের কথা তুলে ধরেন। সে সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এরপরই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু দেশের মানুষকে তিনি আগেই প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। তাঁর আহ্বানে এ দেশের মানুষ অস্ত্র তুলে নেয়। যুদ্ধ করে।শিশুদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বে আমাদের অবস্থান যাতে আরও সুদৃঢ় হয়, আত্মমর্যাদাশীল হয়, সেভাবে আমরা দেশকে গড়ব। তোমরা সোনামণিরাই নিজেদের গড়ে তুলবে। আজ তোমরা ছাত্রছাত্রী, কিন্তু আগামী দিনে তোমরাই কর্ণধার হবে। তোমরাই এ দেশ পরিচালনা করবে। তোমরাই তো আমাদের মতো মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী হবে।তিনি শিশুদের পড়ালেখা, খেলাধুলা, সংস্কৃতিচর্চা করে মানুষের মতো মানুষ হওয়ার জন্য পরামর্শ দেন।
বর্তমান সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দারিদ্র্য কমিয়ে এনেছি। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে। বৃত্তি দিচ্ছি। আমরা এগিয়ে যাব। ২০২১ সালে বাংলাদেশ হবে মধ্য আয়ের দেশ। ২০৪১ সালে হবে উন্নত দেশ।দেশবাসীকে স্বাধীনতার শুভেচ্ছা জানিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে গড়ে তোলার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। বক্তব্যের শেষে তিনি জাতির পিতা, জাতীয় চার নেতা, ৩০ লাখ শহীদ, দুই লাখ মা-বোনের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সারা দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। সকাল থেকে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন।একে একে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, প্রধান বিচারপতি, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, তিন বাহিনীর প্রধান, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ।সকাল সাড়ে আটটার দিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শনিবার স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে জাতীয় শিশু-কিশোর সমাবেশে তিনি সবার উদ্দেশে বলেন, চলুন সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশটাকে গড়ে তুলি। বিশ্বে কেউ যেন বাংলাদেশকে অবহেলা করতে না পারে, সেভাবে দেশকে গড়ে তুলব।
তিনি বলেন, আমরা এই দেশকে গড়ে তুলব। স্বাধীনতার ৪৫ বছর আজ। আমরা আর পিছিয়ে থাকব না। আমরা এগিয়ে যাব।বাংলাদেশের অগ্রগতির এই যাত্রাকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে শিশু-কিশোরদের দেশপ্রেমিক ও যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার উপরও জোর দেন সরকার প্রধান। আমরা ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হবো। তাই আজকে যারা শিশু তোমরাও তোমাদের সেভাবে গড়ে তুলবে। আগামী দিনে তোমরাই তো এদেশের কর্ণধার হবে। তোমরাই তো এদেশ পরিচালনা করবে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করতে নিজের আত্মবিশ্বাসী পথচলা ভবিষ্যৎ প্রজন্মেও সঞ্চারিত দেখতে চান শেখ হাসিনা। ছোট্ট সোনামণিরা তোমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি, আমরা বিজয়ী জাতি। কোনো দিক থেকে আমরা পিছিয়ে থাকব না, আমরা এগিয়ে যাব। বিশ্বে যেন আমাদের আবস্থান আরও সুদৃঢ় হয়, আত্মমর্যাদাশীল হয়, সেভাবে আমরা আমাদের দেশকে গড়ব।নিজেদের মধ্যে থেকে ভবিষ্যত নেতৃত্ব গড়ে তুলতে এখন থেকে প্রস্তুতি নেওয়ার তাগিদ দিয়ে স্কুলের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তোমরাই তো আমাদের মতো মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী হবে। তোমরাই তো দেশ চালাবে। কাজেই তোমাদের সেভাবে নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে।অভিভাবকের কথা শুনতে হবে, খেলাধুলা-সাংস্কৃতিক চর্চা থেকে শুরু করে সবকিছুতে মনোনিবেশ করতে হবে।
শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, প্রতিটি ছেলেমেয়ে এখন স্কুলে যেতে পারে। বিনা পয়সায় বই দেওয়া হচ্ছে, উচ্চশিক্ষায়ও বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।জাতির জনকের কন্যা বক্তব্যের শুরুতেই পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে পূর্ব বাংলার মানুষের উপর অত্যাচার-নির্যাতন এবং বঞ্চনার ইতিহাস তুলে ধরেন।
এই ভূখণ্ডে আমরা বাঙালি জাতি আমরা সব সময় শোষণ বঞ্চনার শিকার হতাম। আমাদের দেশে ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করতে পারত না। স্কুল ছিল না। কলেজ ছিল না। উচ্চ শিক্ষা নিতে পারত না। রোগে চিকিৎসা পেত না। দু’বেলা পেট ভরে খেতে পারত না।এই দুর্দশার মধ্যে দিয়ে দেশের মানুষ জীবনযাপন করত। কষ্টের মধ্যে দিয়ে জীবন চালাত। আর, যারা শাসক গোষ্ঠি ছিল, এদেরকে শোষণ করত। আমাদের অর্থ সম্পদ লুট করে নেওয়া হত।বাঙালির অধিকার আদায়ে বঙ্গবন্ধুর অবদান তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এই অবস্থার প্রতিবাদ করেছিলেন, আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান।২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তার নামে মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসও শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরেন তিনি।অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শিশু-কিশোর সমাবেশ পরিদর্শন করেন। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করেন তিনি। পরে তিনি শিশু-কিশোরদের ডিসপ্লেও দেখেন।অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক উপস্থিতৃ ছিলেন।
Discussion about this post