গাজীপুরে গুলি করে মুক্তিযোদ্ধা পরেশ চন্দ্র ঘোষ (৬৫) খুনের ঘটনায় নিহতের ছেলে গৌতম চন্দ্র ঘোষ বাদি হয়ে জয়দেবপুর থানায় মামলা করেছেন। মামলায় দুই জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১০-১২জনকে আসামি করা হয়েছে। ওই ঘটনায় মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে- প্রদীপ মন্ডল (২৭) ও মঞ্জুর আলম (২৫) এজহার নামীয় আসামী। এছাড়া মোঃ হীরা (২৪) নামের আরেক যুবককেও সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তারা সকলেই অন্য জেলা থেকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সালনার টেক কাথোরা এলাকায় গিয়ে জমি কিনে তাতে বসবাস করছে।
নিহতের ছেলে গৌতম চন্দ্র ঘোষ জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সালনার টেক কাথোরা এলাকায় তাদের বাড়ির পাশে একটি রাস্তা রয়েছে। রাস্তাটিতে মাটি ফেলে সংস্কার কাজ করায় ব্যবহারে সমস্যা হচ্ছে। ফলে তারা প্রদীপের বাড়ির পাশের রাস্তা ব্যবহার করছেন। শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে গাড়ি নিয়ে বাড়িতে যাওয়ার সময় ওই রাস্তায় বাঁশের কয়েকটি খুটি পুঁতে থাকতে দেখেন তিনি। পরে তার কয়েকটি খুঁটি তুলে গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় প্রদীপ বাঁধা দেয়। এনিয়ে তাদের মধ্যে বিবাদ হয়। এক পর্যায়ে প্রদীপ ক্ষিপ্ত হয়ে গৌতমদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়। এর দুইদিন পরই রবিবার দিবাগত গভীর রাত গৌতমের মুক্তিযোদ্ধা বাবা পরেশ চন্দ্র ঘোষকে গুলি করে খুন এবং আরো তিনজনকে ধারালো অস্ত্রে কুপিয়ে আহত করা হয়। গৌতমের ধারণা ওই রাস্তা নিয়ে বিবাদের জেরেই তারা বাবাকে খুন করা হয়েছে।
জয়দেবপুর থানার উপ-পরিদর্শক মো. রুহুল আমিন নিহতের জ্যেঠাত ভাই আশুতোষ ঘোষের বরাত দিয়ে জানান, রবিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে ১০-১২ জনের একদল দূর্বৃত্ত নরেশ চন্দ্র ঘোষের বাড়িতে হানা দেয়। তারা বাড়ির বারান্দার মূল গেইটের তালা ভেঙ্গে ও কেটে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে। এসময় বাঁধা দিলে নরেশ, বিধান ও মৃনালকে ধারালো অস্ত্রে কুপিয়ে ঘরে থাকা স্বর্ণালংকার ও মালামাল লুট করে নেয় দুর্বৃত্তরা। পরে তারা পাশের পরশ চন্দ্র ঘোষের ঘরেও হানা দেয়। এসময় দরজা ভাঙ্গার শব্দ পেয়ে পরশের ছেলে গৌতম ঘোষ পলাশ দরজার কাছে গিয়ে ”তোদের (দূর্বৃত্তদের) চিনেছি, দেখে নেব, দাঁড়াও” বলতেই দূর্বৃত্তরা দরজার বাইরে থেকে পলাশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। এসময় গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে পলাশের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তার বাবা পরশ চন্দ্র ঘোষ কপালে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে তাদের ডাক চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
গাজীপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাজী মোজাম্মেল হক পরেশ একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন।জয়দেবপুর থানার ওসি খন্দকার মো. রেজাউল হাসান রেজা জানান, সোমবার রাতে নিহতের ছেলে গৌতম চন্দ্র ঘোষ বাদি হয়ে থানায় মামলা করেছেন। এ ঘটনায় প্রদীপ মন্ডল ও মঞ্জুর আলম নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার ও হীরা নামের একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
Discussion about this post