গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে বন্দি যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান মীর কাসেম আলীর সঙ্গে বুধবার তার ছেলে ও দুই আইনজীবী সাক্ষাৎ করেছেন।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর সুপার প্রশান্ত কুমার বনিক জানান, মানবতা বিরোধী অপরাধে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি মীর কাসেম আলী এ কারাগারের ৪০ নম্বর কনডেম সেলে বন্দি রয়েছেন। বুধবার সকাল ১১টার দিকে মীর কাসেম আলীর ছেলে ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম ওরফে আরমান তার বাবার সঙ্গে দেখা করেছেন। এসময় তার অপর দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. এহসান সিদ্দিক ও মো. মতিউর রহমান আকন্দ ছিলেন। তারা প্রায় পৌণে ১ঘন্টার মতো কারাগারে একটি কক্ষে মীর কাসেম আলীর সঙ্গে কথা বলেন। এর আগে ৮মার্চ আদালত কর্তৃক ফাঁসির রায় বহালের আদেশের পর ১২মার্চ ও ৯এপ্রিল তার আইনজীবী ও পরিবারের সদস্যরা মীর কাসেম আলীর সঙ্গে দেখা করেন। এরপর সর্বশেষ বাংলা নববর্ষের আগের দিন বুধবার দুপুরে তার ব্যারিস্টার ছেলেসহ তিন আইনজীবী দেখা করলেন। তার ওই মৃত্যুদন্ডের রায়ের চূড়ান্ত (প্রিন্টেড) কপি এখনো কারাগারে আসেনি বলেন ওই কর্মকর্তা।
মানবতা বিরোধী অপরাধে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি মীর কাসেম আলী এ কারাগারের ৪০ নম্বর কনডেম সেলে বন্দি রয়েছেন। এর আগে গ্রেপ্তারের পর ২০১২সাল থেকে তিনি এ কারাগারে রয়েছেন। একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৭ জুন মতিঝিলে নয়া দিগন্ত কার্যালয় থেকে কাসেমকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের বছর ৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনালে শুরু হয় তার যুদ্ধাপরাধের বিচার। ২০১৪সালের আগে তিনি হাজতবাসকালে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দির মর্যাদায় ছিলেন। পরে দন্ডপ্রাপ্তির পর তাকে ফাঁসির (কনডেম) সেলে পাঠানো হয়।
মীর কাসেমের আইনজীবী মোঃ মতিউর রহমান আকন্দ জানান, পূর্নাঙ্গ রায়ের কপি এখনো তারা পাননি। তবে মীর কাসেম আলী ৮মার্চে আদালতের দেয়া শর্ট জাজমেন্টের বিষয়গুলোকে সামনে রেখে রিভিউর প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। এসময় তিনি (মীর কাশেম আলী) জানান, ওই রায়ে আমাকে একটা চার্জে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। তাতে কোন স্বাক্ষী আমার (মীর কাশেম আলী) নাম বলেননি। এছাড়া সরকার পক্ষ যে ডকুমেন্ট আদালতে দিয়েছে, তাতেই বলা হয়েছে ঘটনার সময় আমি (মীর কাসেম আলী) চট্টগ্রামে ছিলাম না, আমি ঢাকায় ছিলাম। আমি ছিলেন ঢাকায়, আর ঘটনা ঘটলো চট্টগ্রামে। এর দায়দায়িত্ব আমার ঘাড়ে চাপানো হয়েছে। এতে আমি ন্যায় বিচার থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হয়েছি।
অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ আরো বলেন, ওই মামলার শুনানীকালে চিফ জাস্টিজ মীর কাসেম আলীর ঘটনাস্থলে অনুপস্থিতি সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা গোটা দুনিয়ায় মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে রায়ের পূর্বে সরকারের দুই মন্ত্রী প্রধান বিচারপতি এবং সর্বোচ্চ আদালতকে টার্গেট করে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে আদালত প্রভাবিত হয়েছে বলে মীর কাসেম আলীর আশঙ্কা। তার আশা রিভিউতে তিনি এর প্রতিকার পাবেন।
মীর কাসেম আলীর ছেলে আহমেদ বিন কাসেম বলেন, তার বাবা সুস্থ্য আছেন, মানসিকভাবে খুব শক্ত আছেন বলেন ওই। বাবা আমাদের বলেন, আমাদের বিষয়ে ফয়সালা করবেন আল্লাহ। মৃত্যুর ফয়সালা আল্লাহর কাছে। কোন ব্যাক্তির হাতে নয়। আমি কোন অন্যায় করিনি। সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগে আমাকে সাজা দেয়ার চক্রান্ত করা হচ্ছে। তবে এর ফয়সালা আল্লাহই করবেন।
Discussion about this post