মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসিতে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামি জামায়াতে ইসলামীর আমির ও আল বদর বাহিনীর প্রধান মতিউর রহমান নিজামীকে রবিবার রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়েছে। তার মৃত্যুদন্ড ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কার্যকরের জন্য ইতোমধ্যেই সকল প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার বিষয়টি নিষ্পত্তি হলেই আদালতের দেয়া তার মৃত্যুদন্ডের রায় কার্যকর করা হবে।
কারাসূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে রবিবার দিবাগত রাত ১০টা ২৫ মিনিটে পুলিশের বিশেষ প্রহরায় প্রিজন ভ্যানে করে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসিতে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামি জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে সুপ্রীম কোর্ট নিজামীর রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেয়া সংক্রান্ত আদেশের কপি কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌছেছে কিনা অথবা নিজামীকে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি।
এদিকে নিজামীর মৃত্যুদন্ড ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কার্যকরের জন্য ইতোমধ্যেই সকল প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানাগেছে। তার জন্য ফাঁসির মঞ্চ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে প্রস্তুত করা হচ্ছে। কারাগার ও ফাঁসির মঞ্চ এলাকায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যাবস্থা করা হয়েছে। মঞ্চ এলাকায় অতিরিক্ত কারারক্ষী নিয়োজিত করা হয়েছে। ফাঁসি কার্যকরের জন্য জল্লাদের তালিকাও প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে আইনী লড়াইয়ের সর্বশেষ ধাপে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন আদালত খারিজ করে মৃত্যুদন্ড বহাল রাখলেও মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদন্ড কার্যকরের জন্য এখন শুধু একটা ধাপ বাকি আছে। সেটা হচ্ছে, নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনার কথা জানিয়ে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইতে পারেন। এ বিষয়টি নিষ্পত্তি হলে অর্থাৎ প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হলে অথবা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তিনি যদি প্রাণভিক্ষার আবেদন না করেন তাহলে সরকার যেকোন সময় তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করবে। এরআগে রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি কারাগারে পৌছানোর পর নিজামীকে ওই রায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুনানো হবে। এরপর তিনি (নিজামী) প্রান ভিক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে জানাবেন।
আইনী লড়াইয়ের সর্বশেষ ধাপে সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগে ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ হওয়ার পর নিজামীর সঙ্গে শুক্রবার সকালে কাশিমপুর কারাগারে তার স্ত্রী, মেয়ে, ছেলে ও পুত্রবধুসহ পরিবারের ৬ জন সদস্য স্বাক্ষাত করেন।
প্রসঙ্গতঃ গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-২ এর ৪০ নং কনডেম সেলে বন্দি ছিলেন মানবতা বিরোধী বিভিন্ন অপরাধের দায়ে ফাঁসির মৃত্রুমন্ড প্রাপ্ত আসামী জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী। ১৯৭১-এ হত্যা, ধর্ষণ, বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ একাধিক মানবতা বিরোধী বিভিন্ন অপরাধের দায়ে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর আল বদর বাহিনী প্রধান নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ডের সাজা দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করেন নিজামী। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া প্রাণদন্ডের সাজা বহাল রেখে গত ৬ জানুয়ারি আপীলের রায় ঘোষণা করেন আদালত। ১৬ মার্চ কারাগারের কনডেম সেলে নিজামীকে মৃত্যু পরোয়ানা ও পূর্ণাঙ্গ রায় পড়ে শোনানো হয়। পরে আইনী লড়াইয়ের শেষ ধাপে তিনি সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগে ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের সুপ্রীম কোর্টের আপীল বেঞ্চ ওই রিভিউ খারিজ করে রায় ঘোষণা করেন। আদালতে রিভিউ খারিজ হওয়ায় তার মৃত্যুদন্ড বহাল থাকছে।
২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের একটি মামলায় মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর একই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। তিনি গ্রেফতার হওয়ার পর গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও চট্টগ্রাম কারাগারসহ একাধিক কারাগারে বন্দি ছিলেন।
১৯৪৩ সালের ৩১ মার্চ পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার মনমথপুর গ্রামে মতিউর রহমান নিজামী জন্ম গ্রহন করেন। তিনি ২০০০ সালে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে আসেন।
Discussion about this post