মুক্তিযুদ্ধকালে আল বদর বাহিনীর প্রধান ও বর্তমানে জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে আপিলের রায় রিভিউ’র আবেদন খারিজ করে দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায় আজ প্রকাশ করেছে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে রায় প্রদানকারী চার বিচারপতির স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে আজ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। ২২ পৃষ্ঠার এ রায় সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটেও রয়েছে।
সুপ্রিমকোর্টের ডেপুটি রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তী সাংবাদিকদের জানান, আজই এ রায় বিচারিক আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে। সংশ্লিষ্টরা জানায়,নিজামীর মৃত্যুদন্ডের চুড়ান্ত এ রায় ট্রাইব্যুনাল হয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছানোর পর রায় কার্যকরের চুড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু করবে কারা কর্তৃপক্ষ। নিজামীর মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে আপিলের রায় রিভিউ’র আবেদন খারিজ করে দিয়ে গত ৫ মে রায় দেয় আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ রিভিউ খারিজ করে জনাকীর্ণ আদালতে রায় দেয়। নিজামী মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আপিলেও মৃত্যুদন্ড বহালের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে গত ২৯ মার্চ আবেদন দায়ের করে।
নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন বলেন, ৭০ পৃষ্ঠার মূল রিভিউর আবেদনের সঙ্গে মোট ২২৯ পৃষ্ঠার নথি পত্রে তার দন্ড থেকে খালাস চেয়ে ৪৬ টি যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। নিজামীর মৃত্যুদন্ড বহালের পূর্ণাঙ্গ রায় গত ১৫ মার্চ প্রকাশ করে আপিল বিভাগ। রায় প্রকাশের পর নিয়ম অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন দায়ের করার সূযোগ রয়েছে। সে অনুযায়ি রিভিউ দায়ের করে আসামিপক্ষ। নিজামীর মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিলের রায় গত ৬ জানুয়ারি ঘোষনা করেছে আপিল বিভাগ। রায় প্রদানকারী বিচারপতিদের স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে ১৫ মার্চ পূর্নাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আসা এটি ষষ্ঠ মামলা, যার রায় হল। ৫ মে এ রায় রিভিউ’র আবেদনও নিস্পত্তি হলো।
বাংলাদেশের মন্ত্রী পরিষদে দায়িত্ব পালনকারী তৃতীয় কোন মন্ত্রী ৭১’এ সংগঠিত মানবতাবতাবিরোধী অপরাধে সর্বোচ্চ দন্ড পেলেন। এর আগে সাবেক মন্ত্রী জামায়ায়াতের আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপি’র সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে।
এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, রায়ে প্রত্যাশা পূরন হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড সীমাহীন অপরাধ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সর্বোচ্চ শাস্তি ফাসিঁই এ অপরাধের একমাত্র সাজা। ফাঁসি ছাড়া এর অন্য কোনো বিকল্প সাজা নেই। আল বদর বাহিনীর প্রধান নেতা নিজামীর বিরুদ্ধে আপিলের এ রায় দেশে আইনের শাসনের জন্য আরো একটি মাইলফলক। এখন জেল কৃর্তপক্ষ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি রায় কার্যকরে পদক্ষেপ নিবে।
২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের একটি মামলায় মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেফতার করার পর একই বছরের ২ অগাস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। বর্তমানে নিজামী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী আছেন। রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাকে কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়েছে।ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আসা এটি ষষ্ঠ মামলা, যার চুড়ান্ত রায় হল। এর আগে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আনা আরো ৫টি মামলা আপিলে নিস্পত্তি হয়েছে। এছাড়াও গত ৮ মার্চ জামায়াতের আরেক নেতা মীর কাশেম আলীর মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে রায় দেয় আপিল বিভাগ। এখন এ মামলার পূর্নাঙ্গ রায় প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
Discussion about this post