মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের আমীর মতিউর রহামান নিজামীর রায় কার্যকরের পর বিজয়োল্লাস প্রকাশ করেছে শাহবাগে অবস্থানরত গণজাগরণ মঞ্চ। মঙ্গলবার রাত ১২টায় রায় কার্যকরের পর মঞ্চের মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেন, এই রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আরো একবার যুদ্ধাপরাধীমুক্ত হল। বাঙালি জাতির ইতিহাসে এই রায় স্বরণীয় হয়ে থাকবে।আল বদর নেতা ও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসিতে উল্লাসে ফেটে পড়েছে শাহবাগ। গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও সাধারণ জনতা বিভিন্ন স্লোগান, দেশাত্মবোধক গানে গানে নিজামীর ফাঁসির জন্য অপেক্ষা করছিলো।রাত ১২টার পর ফাঁসি কার্যকরের খবর আসার সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে ফেটে পড়ে উপস্থিত জনতা।
উপস্থিত জনতা ‘আমার কাছে খবর আছে, ফাঁসির মাত্র কয়েক মিনিট বাকি আছে’; দে দে দে ফাঁসি দে, নিজামীরে ঝুলায় দে’; হাট্টিমাটিম তারা মাঠে আন্ডা, ‘নিজামীর ফাঁসি হলে মাথা হবে ঠান্ডা’; মেড ইন পাকিস্তান, জামায়াতে ইসলাম এমন স্লোগানে মুখরিত শাহবাগ।জাদুঘরের সামনে রাস্তায় বসে পড়া এ জনতার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা। আজিমপুর থেকে স্ত্রী সন্তান নিয়ে এসেছেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সিরাজুল ইসলাম।
সিরাজুল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ছোট ছিলাম। কিন্তু মনে আছে রাজাকারের কথা শুনলেই মানুষ ভয়ে তটস্থ হয়ে যেত। আজ রাজাকার কমান্ডার নিজামীর ফাঁসি হচ্ছে এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে। এর আগে ইমরান এইচ সরকার বাংলানিউজকে বলেন, ইতিহাসের এই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য দেশের ষোল কোটি মানুষ অপেক্ষা করছে। আলবদর নেতা, কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী, বুদ্ধিজীবী হত্যার নীল নকশা বাস্তবায়নকারী মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায় বাস্তবায়নের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর (৭৩) মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ১২টা ১০ মিনিটে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। মৃত্যু নিশ্চিত করেন সিভিল সার্জন আব্দুল মালেক মৃধা।পরে সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির কারাগার থেকে বের হয়ে উপস্থিত সংবাদকর্মীদের বলেন, ১২টা ১০ মিনিটে নিজামীর ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে।ফাঁসি কার্যকর করার সময় উপস্থিত ছিলেন: ঢাকা জেলা প্রশাসক (ম্যাজিস্ট্রেট) সালাউদ্দিন আহমেদ, সিভিল সার্জন আব্দুল মালেক মৃধা, ডিএমপির পক্ষে ডিসি ডিবি উত্তর শেখ নাজমুল আলম, সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির, ডিসি লালবাগ মফিজ উদ্দিন।
ঘড়ির কাঁটা যখন ১২টা বেজে ০১ মিনিট তখন সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির তার হাতে ধরা রুমালটি ফেলে দেন। আর তখনই যম টুপি ও গলায় দড়ি পরিহিত নিজামীর পায়ের নিচ থেকে পাটাতন সরিয়ে ফেলেন জল্লাদ। এ অবস্থায় ১০ মিনিট ঝুলিয়ে রাখার পর তোলা হয়। সিভিল সার্জন আব্দুল মালেক মৃধা মৃত্যু নিশ্চিত করে ডেথ সার্টিফিকেটে স্বাক্ষর করেন।এর আগে ফাঁসির বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা চলে সন্ধ্যা থেকেই। পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়। সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যরা শেষবারের মতো নিজামীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
রীতি অনুযায়ী কারাগার মসজিদের ইমামকে সাথে নিয়ে জেল সুপার কনডেম সেলে যান। এরপর ইমাম আসামিকে তওবা পড়ান। ফাঁসি কার্যকরের কয়েক ঘণ্টা আগেই আসামিকে গোসল ও ইচ্ছানুযায়ী খাবার দেয়া হয়। এদিকে সন্ধ্যা থেকে দুই অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়। এর একটিতে নিজামীর মৃতদেহ বহন করে তার গ্রামের বাড়ি পাবনার সাঁথিয়াতে নেয়া হবে।
Discussion about this post