একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় আমাদের মাথা থেকে একটি কলঙ্ক দাগ মুছে গেল বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটের দিকে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সামনে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন মন্ত্রী।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা জাতির প্রত্যাশা ছিল দীর্ঘ দিনের। তারপর আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার প্রত্যাশা ছিল আরো দীর্ঘ দিনের। আমি মনে করি, আজকে আমাদের আমাদের মাথা থেকে একটা কালো দাগ মুছে গেল। এই দিনটির অপেক্ষায় আমরা ছিলাম। যে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা দেখে যেতে পারছি, যারা যুদ্ধাপরাধী যারা মানবতা বিরোধী কর্মকাণ্ড করেছিলেন তাদের বিরুদ্ধে রায়গুলো কার্যকর হচ্ছে।
তিনি বলেন, আজকে মতিউর রহমান নিজামী ফাঁসি হলো। তিনি আমাদের অনেক তরুণকে হত্যা করেছেন। মনিপুর পাড়ায় আমি যেখানে থাকি সেখানকার বদিকে তিনি হত্যা করেছেন। এমন অনেক উদাহরণ আছে। অনেক নৃশংসতার উদাহরণ রয়েছে।মন্ত্রী আরো বলেন, আজকে নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে, এর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি জাতিকে যে প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন, তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবেন, আজ তা পূর্ণ হলো। মুক্তিকামী বাঙালিরা এই দিনটিকে স্মরণ করবে।
ফাঁসি পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, যথযোগ্যভাবে বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এই ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস নাশকতা কেউ করবে না। জামায়াত-শিবিরের ভক্তরা যারা আছেন তারা নিজেদের মানুষ বলে পরিচয় দিবার দাবি করেন তাহলে আমরা মনে হয় তারা এসব করবে না। তারপরও যদি কেউ করে তাদের আমরা চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করবো।
উল্লেখ্য, মানবতা বিরোধী অপরাধে মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত আমির মতিউর রহমান নিজামীকে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ১০ মিনিটে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রায় কার্যকরা হয়েছে। তার মৃতদেহ গ্রামের বাড়ি পাবনার সাঁথিয়ায় মন্মথপুরে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে পরিবারের একটি সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে, একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের হোতা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় দুঃখের ভার হালকা হয়েছে শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরীর।একাত্তরে ডা. আলীম চৌধুরীর মতো বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও নেতৃত্ব দেওয়ার দায়ে দণ্ডিত জামায়াত আমির নিজামীর ফাঁসি কার্যকর হয় মঙ্গলবার রাতে।তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ডা. আলীম চৌধুরীর স্ত্রী শ্যামলী নাসরিন বলেন, দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে এই মুহূর্তটি দেখার প্রতীক্ষায় ছিলাম। কারণ দণ্ড কার্যকরের মধ্য দিয়ে এই ভয়ঙ্কর খুনি-পাপী বিদায় নিল।দীর্ঘদিন ধরে দুঃখের ভার বহন করে আসছিলাম। আমি একা নই বুদ্ধিজীবী পরিবারের সকল সদস্যরা সেই ভার থেকে হালকা হল।একাত্তরের আল বদর নেতা নিজামীকে বাংলাদেশের মন্ত্রী করার ক্ষোভও প্রকাশ করেন শ্যামলী নাসরিন।খালেদা জিয়ার আমলে ভয়ঙ্কর এই খুনিকে শাসন ক্ষমতায় বসানো আমাদের কষ্ট সহস্রগুণ বাড়িয়ে দেয়, ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। নিজামীর বিচারে সাক্ষ্য দেওয়া শ্যামলী নাসরিন বলেন, আজ এই যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মধ্য দিয়ে দেশ দায়মুক্তির পথে আরও এক ধাপ এগোলো।
Discussion about this post