মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসির মৃত্যু পরোয়ানা প্রাপ্ত আসামি জামায়াতে ইসলামীর নেতা মীর কাসেম আলীর সঙ্গে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে তার আইনজীবী ছেলেসহ ৫ আইনজীবী শনিবার দেখা করেছেন। সাক্ষাতকালে মীর কাসেম আলী আপিলের রায়ের রিভিউ চাইবেন বলে তার আইনজীবীদের জানিয়েছেন। মৃত্যু পরোয়ানা জারীর পর কারাগারে মীর কাসেম আলীর সঙ্গে তার আইনজীবীদের এটিই প্রথম সাক্ষাৎ বলে জানিয়েছেন কারা কর্তৃপক্ষ।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২এর সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক জানান, শনিবার বেলা ১১টার দিকে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসির মৃত্যু পরোয়ানা প্রাপ্ত মীর কাসেম আলী সাহেবের সঙ্গে রিভিউর ব্যাপারে কথা বলার অনুমতি চেয়ে লিখিত আবেদন নিয়ে তার ছেলে ব্যারিষ্টার মীর আহমেদ বিন কাসেম, ব্যারিষ্টার নজিবুর রহমান, আইনজীবী মতিউর রহমান আকন্দ, অ্যাডভোকেট বজলুর রহমান ও ব্যারিষ্টার নূরুল্লাহসহ পাঁচজন আইনজীবী কারাগারে আসেন। পরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদের বেলা ১১ টা ৪০ মিনিটে মীর কাসেম আলীর সঙ্গে তাদের কথা বলার ব্যবস্থা করা হয়। তারা কারাগারের একটি কক্ষে সাক্ষাৎ করেন এবং প্রায় ৪৫ মিনিট কথা বলেন। এরপর ১২টা ২৫মিনিটে তারা কারাগার থেকে বের হন এবং কারা চত্বর ত্যাগ করেন। মৃত্যু পরোয়ানা জারীর পর কারাগারে মীর কাসেম আলীর সঙ্গে তার আইনজীবীদের এটিই প্রথম সাক্ষাৎ।
কারাগারে মীর কাসেম আলীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তার আইনজীবী মতিউর রহমান আকন্দ সাংবাদিকদের বলেন, মীর কাসেম আলী তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের রায়ের রিভিউ আবেদন করবেন। এজন্য আমাদের সকল প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। রিভিউ’র জন্য আপিল রায়ের ‘সার্টিফায়েড কপি’র আবেদন করা হয়েছে। হয়তো রবিবার আমরা সেটা হাতে পাব। এরপর রিভিউর প্রস্তুতি নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসিতে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামি জামায়াত নেতা আলবদর কমান্ডার ব্যারিস্টার মীর কাসেম আলী কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর ৪০ নম্বর কনডেম সেলে বন্ধি রয়েছেন। ২০১২ সালের ১৭ জুন মতিঝিলে নয়া দিগন্ত কার্যালয় হতে মীর কাসেম আলী গ্রেফতারের পর থেকে এ কারাগারে রয়েছেন। তিনি ২০১৪ সালের আগে হাজতবাসকালে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দির মর্যাদায় ছিলেন। পরে দন্ডপ্রাপ্তির পর তাকে ফাঁসির (কনডেম) সেলে পাঠানো হয়।
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৭ জুন মতিঝিলে নয়া দিগন্ত কার্যালয় থেকে মীর কাসেম আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের বছর ৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনালে শুরু হয় তার যুদ্ধাপরাধের বিচার। ২০১৪ সালের ২ নবেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে মীর কাসেম আলীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের রায় দেয়। একই বছরের ৩০ নবেম্বর ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদন্ডের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন এই আলবদর কমান্ডার। চলতি বছরের (২০১৬) ৮ মার্চ দেওয়া রায়ে আপিল বিভাগও তার মৃত্যুদন্ড বহাল রাখে। বিচারকরা সই করার পর ৬ জুন ২৪৪ পৃষ্ঠার ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট। নিয়ম অনুযায়ী, আসামিপক্ষ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য আবেদন করার সুযোগ পাবে। রিভিউ নিষ্পত্তি হওয়ার আগে দন্ড কার্যকর করা যাবে না। আসামিপক্ষ রায়ের সার্টিফায়েড কপি পাওয়ার পর থেকে সেই দিন গণনা শুরু হয়। এই ১৫ দিনের ভেতরে তাকে রিভিউ পিটিশন দায়ের করতে হবে। রিভিউ পিটিশনের রায়ের উপরই নির্ভর করবে দন্ড প্রক্রিয়ার পরবর্তী কার্যক্রম।
Discussion about this post