মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসিতে মৃত্যু পরোয়ানা প্রাপ্ত আসামি জামায়াতে ইসলামীর নেতা মীর কাসেম আলীর সঙ্গে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে তার স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে ও পূত্রবধূসহ পরিবারের ৯ সদস্য শনিবার দেখা করেছেন। মৃত্যু পরোয়ানা জারীর পর কারাগারে মীর কাসেম আলীর সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যদের এটিই প্রথম ও নিয়মিত সাক্ষাৎ বলে জানিয়েছেন কারা কর্তৃপক্ষ।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২এর সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক জানান, মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসিতে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামি জামায়াত নেতা আলবদর কমান্ডার ব্যারিস্টার মীর কাসেম আলী কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর ৪০ নম্বর কনডেম সেলে বন্ধি রয়েছেন। মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসির মৃত্যু পরোয়ানা জারীর পর মীর কাসেম আলীর সঙ্গে সাক্ষাত করতে শনিবার তার স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুন, ছেলে ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাসেম আরমান, পুত্রবধূ সায়েদা তাহমিদা আক্তার ও তাহমিনা আক্তার, মেয়ে তাহেরা তাসমিন, ভাগ্নে রুমান পারভেজ ও আব্দুল্লাহ আল মাহাদী, ভাতিজা কেএম রশিদ উদ্দিন ও শুভ মজুমদার কারাগারে আসেন এবং অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। পরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদেরকে বেলা ১২ টা ৪৫ মিনিটে মীর কাসেম আলীর সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ করার ব্যবস্থা করা হয়। তারা কারাগারের একটি কক্ষে সাক্ষাৎ করেন এবং পারিবারিক বিষয় ও মামলার রিভিউ নিয়ে প্রায় ৪০ মিনিট কথা বলেন। এরপর ১টা ২৫মিনিটে তারা কারাগার থেকে বের হন এবং কারা চত্বর ত্যাগ করেন। মৃত্যু পরোয়ানা জারীর পর কারাগারে মীর কাসেম আলীর সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যদের এটিই প্রথম ও নিয়মিত সাক্ষাৎ।
এদিকে, মীর কাসেমের আইনজীবী মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, গত ১১ জুন কাশিমপুর কারাগারে ছেলে ও আইনজীবীরা সাক্ষাত করলে রায়ের রিভিউ আবেদন করতে নির্দেশ দেন মীর কাশেম আলী। মীর কাশেম আলীর রিভিউ আবেদনের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। দু’একদিনের মধ্যেই (২০ জুনের আগে) আপীল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন দাখিল করা হবে। তবে রিভিউ চূড়ান্ত করার আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে মীর কাসেম আলীকে তা দেখানো হবে।
এ বিষয়ে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পরই দন্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু করবে কারা কর্তৃপক্ষ। আর আসামি রিভিউ আবেদন করলে ওই দন্ড কার্যকর প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে। দন্ডের বিষয়ে বিচারিক আদালত অর্থাৎ ট্রাইব্যুনাল থেকে মৃত্যুপরোয়ানা জারি করলেও রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। রিভিউ আবেদনে রায়ে মৃত্যুদন্ড বহাল থাকলে রাষ্ট্রপতির কাছে অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে পারবেন মীর কাশেম আলী।
উল্লেখ্য, মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসিতে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামি জামায়াত নেতা আলবদর কমান্ডার ব্যারিস্টার মীর কাসেম আলী কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর ৪০ নম্বর কনডেম সেলে বন্ধি রয়েছেন। একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৭ জুন মতিঝিলের নয়া দিগন্ত কার্যালয় হতে মীর কাসেম আলী গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর থেকে তিনি এ কারাগারে রয়েছেন। তিনি ২০১৪ সালের আগে হাজতবাসকালে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দির মর্যাদায় ছিলেন। পরে দন্ডপ্রাপ্তির পর তাকে ফাঁসির (কনডেম) সেলে পাঠানো হয়।
২০১২ সালে গ্রেফতারের পরের বছর ৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনালে তার যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়। ২০১৪ সালের ২ নবেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে মীর কাসেম আলীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের রায় দেয়। একই বছরের ৩০ নবেম্বর ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদন্ডের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন এই আলবদর কমান্ডার। চলতি বছরের (২০১৬) ৮ মার্চ দেওয়া রায়ে আপিল বিভাগও তার মৃত্যুদন্ড বহাল রাখে। বিচারকরা সই করার পর ৬ জুন ২৪৪ পৃষ্ঠার ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট। নিয়ম অনুযায়ী, আসামিপক্ষ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য আবেদন করার সুযোগ পাবে। রিভিউ নিষ্পত্তি হওয়ার আগে দন্ড কার্যকর করা যাবে না। আসামিপক্ষ রায়ের সার্টিফায়েড কপি পাওয়ার পর থেকে সেই দিন গণনা শুরু হয়। এই ১৫ দিনের ভেতরে তাকে রিভিউ পিটিশন দায়ের করতে হবে। রিভিউ পিটিশনের রায়ের উপরই নির্ভর করবে দন্ড প্রক্রিয়ার পরবর্তী কার্যক্রম।
Discussion about this post