জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল আজিজ ওরফে ঘোড়ামারা আজিজসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল ছয় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয়। আগামী ২ আগস্ট এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে।বিচারিক প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন-বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দী।
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গাইবান্ধার জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য আবু সালেহ মুহাম্মদ আব্দুল আজিজ ওরফে ঘোড়ামারা আজিজসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয় গত ১৮ ফেব্র“য়ারি। সব আসামিই পলাতক রয়েছে।প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী বাসস’কে বলেন, আসামিদের বিষয়ে গত বছর ২৭ ডিসেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন চুড়ান্ত করে তদন্ত সংস্থা।এ প্রতিবেদন বিষয়ে ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করে ফরমাল চার্জ দাখিল করা হয়।ঘোড়ামারা আজিজসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গত ২৭ ডিসেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, গুম, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের সুনির্দিস্ট তিনটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। ঘোড়ামারা আজিজ (৬৫) ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- মোঃ রুহুল আমিন ওরফে মঞ্জু (৬১), মোঃ আব্দুল লতিফ (৬১), আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী (৫৯), মোঃ নাজমুল হুদা (৬০) ও মোঃ আব্দুর রহিম মিঞা (৬২)।মামলার সুষ্ঠ তদন্তের স্বার্থে আসামীদের গ্রেফতার করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রসিকিউশনের আবেদনে গতবছর ২৬ নভেম্বর ৬ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল।
আসামীদের বিরুদ্ধে ৩টি অভিযোগ আনা হয়। প্রথম অভিযোগ: ১৯৭১এর ৯ সেপ্টেম্বর সকাল অনুমান সাড়ে ৮ টার দিকে আসামীরা দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২৫/৩০ জনকে সাথে নিয়ে গাইবান্ধা জেলার সদর থানাধীন মৌজামালি বাড়ী গ্রামে হামলা চালায়। সেখানে ৪ জন নিরীহ লোককে আটক, নির্যাতন ও অপহরণ করে দাড়িয়াপুর ব্রীজে নিয়ে যায়। এর মধ্যে ব্রীজের কাছে গনেস চন্দ্র বর্মণ এর হাত পা মাথার সাথে বেধে ব্রীজের নীচে নদীতে ফেলে দিয়ে হত্যা করে এবং ৩ জনকে ছেড়ে দেয়। আসামীরা আটককৃতদের বাড়ির মালামাল লুন্ঠন করে।
দ্বিতীয় অভিযোগ: ৭১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর, বিকাল অনুমান ৪ টার দিকে আসামীরা গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ থানাধীন মাঠেরহাট ব্রীজ পাহারা দিতে থাকাবস্থায় ছাত্রলীগের নেতা মোঃ বয়েজ উদ্দিনকে আটক করে মাঠেরহাটের রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করতে থাকে। পরের দিন সকালবেলা আসামীরা আটককৃত বয়েজ উদ্দিনকে সুন্দরগঞ্জ থানা সদরের পাকিস্তান দখলদার সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যায় এবং ৩ দিন আটক রেখে অমানুষিক নির্যাতন করার পর ১৩ সেপ্টেম্বর বিকালে গুলি করে হত্যা করে লাশ মাটি চাপা দেয়।
তৃতীয় অভিযোগ-: ৭১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর হতে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আসামীরা পাকিস্তান দখলদার সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ থানাধীন ৫টি ইউনিয়নের নিরীহ নিরস্ত্র ১৩ জন চেয়ারম্যান ও মেম্বরকে আটক করে। তাদেরকে ৩ দিন অমানুষিক নির্যাতন করার পর পাকিস্তান দখলদার সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের নিকটে নদীর ধারে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করে এবং লাশগুলি মাটিচাপা দেয়। সেখানে একটি বধ্যভূমি নির্মিত হয়েছে।
Discussion about this post