কল্যাণপুর জঙ্গি আস্তানায় অপারেশন ‘স্ট্রম-২৬’ এ নিহত আকিফুজ্জামান খান তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের গভর্নর আব্দুল মোনায়েম খানের নাতি। বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আকিফুজ্জামানের ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে আমরা তার পরিচয় নিশ্চিত হয়েছি। তার দাদা মোনায়েম খান তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ছিলেন।
মোনায়েন খান ১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবরে বনানীস্থ বাসভবনে মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের গুলিতে মারাত্মক আহত হোন এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, আকিফুজ্জামান খানের বাবা সাইফুজ্জামান খান। মা শাহনাজ নাহার। ১৯৯২ সালে জন্মগ্রহণ করা এই যুবকের জাতিয় পরিচয়পত্র নম্বর- ২৬১১০৬০০১০০৬। গুলশানের ১০ নম্বর রোডের ২৫ নম্বর বাড়িতে পরিবারের সাথেই থাকতেন তিনি।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে কফি রঙের গেট ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই দেখা যায় দোতলা একটি বাড়ি। দীর্ঘদিন রঙ না করায় সাদা রঙের বাড়িটি লালচে বর্ণ ধারণ করেছে। বাড়ির সামনের বিশাল খোলা জায়গায় পড়ে আছে পুরনো সাদা রঙের একটি গাড়ি। প্রধান ফটকের কলিং বেল চাপতেই এক বৃদ্ধা বেরিয়ে আসেন। কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় শুনেই কোনো কথা না বলে ভেতরে চলে যান। বাড়ির পূর্ব দিকে আরো একটি গেট রয়েছে। সেটি বন্ধ। বাড়ির দক্ষিণ দিকে রয়েছে আকিফুজ্জামান খানের চাচার বাড়ি। তবে ওই বাড়িটি বর্তমানে বার হিসেবে ভাড়া দেয়া হয়েছে। বারের নাম ‘এসটিএল ডিপ্লোম্যাট ওয়ার হাউজ’।
আকিফুজ্জামানের বাড়ির পাশের বাড়ির দারোয়ান আব্দুল গাফ্ফার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি বেশ ভদ্র ও বিনয়ী ছিলেন। বাড়ির উত্তর পাশের রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন মসজিদে যেতেন। খুব বেশি বন্ধুও ছিল না তার।
তবে গত প্রায় আট/দশ মাস ওই নিরাপত্তাকর্মী আকিফুজ্জামানকে আর বাড়িতে আসতে দেখেননি। তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন। তবে কোন বিভাগের শিক্ষার্থী সেটা বলতে পারেননি। গত মঙ্গলবার ভোর ৫টা ৫১ মিনিটে রাজধানীর কল্যাণপুরে জাহাজবাড়ি নামে একটি বাড়িতে অভিযান চালায় সোয়াত, র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। অভিযানে ৯ জঙ্গি নিহত হয়। এ সময় ১ জঙ্গি গুলিবিদ্ধসহ ২ জনকে আটক করে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, মোনায়েম খানের জন্ম ১৮৯৯ সালে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর থানাধীন হুমাইপুর গ্রামে। ১৯৬২ সালে পাকিস্তান জাতীয় সংসদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সদস্য নির্বাচিত হন এবং পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হন। ১৯৬২ এর ২৮ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান তাকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিযুক্ত করেন। ১৯৬৯ সালের ২৩ মার্চ পর্যন্ত এ দায়িত্বে ছিলেন তিনি। গভর্নর থাকাকালে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফাসহ পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশসন ও স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরোধিতা করেন। আজীবন দ্বিজাতিত্বে বিশ্বাসী ছিলেন। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করেন।
Discussion about this post