একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া দুই হাজার ৩৬৭ জন গেরিলার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি’ নিয়ে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও দুই সপ্তাহ বাড়িয়েছে আপিল বিভাগ। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের বিশেষ গেরিলা বাহিনীর ২ হাজার ৩৬৭ জন মুক্তিযোদ্ধার তালিকাসংবলিত গেজেট বাতিলের প্রজ্ঞাপন অবৈধ ঘোষণার রায়ের স্থগিতাদেশের মেয়াদ বেড়েছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) দায়ের করতে বলেছেন আপিল বিভাগ। পাশাপাশি এ সময় পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করা হয়েছে।
রোববার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ আগামী দুই সপ্তাহের জন্য শুনানি মুলতবি করেন।এর আগে ৯ অক্টোবর ২ হাজার ৩৬৭ জন মুক্তিযোদ্ধার তালিকাসংবলিত গেজেট বাতিলের প্রজ্ঞাপন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেন চেম্বার বিচারপতি। সেই সঙ্গে বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় আজকে শুনানি হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, সুব্রত চৌধুরী ও জাহিদুল বারি।পরে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা বলেন, হাইকোর্টের দেওয়া রায় চেম্বার বিচারপতি স্থগিত করেছিলেন। চেম্বার বিচারপতির দেওয়া স্থগিতাদেশ বহাল রেখে আপিল বিভাগ দুই সপ্তাহের মধ্যে লিভ টু আপিল করতে বলেছেন। এই সময় পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করা হয়েছে। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জাহিদুল বারি জানান, আপিল বিভাগ দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিতাদেশ মেয়াদ বাড়িয়েছেন, এরপর বিষয়টি শুনানির জন্য আসবে।গত ৮ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট বিশেষ গেরিলা বাহিনীর ২ হাজার ৩৬৭ জন মুক্তিযোদ্ধার তালিকাসংবলিত গেজেট বাতিলের প্রজ্ঞাপন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করে রায় দেন। এ রায় স্থগিত চেয়ে মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২৪ সেপ্টেম্বর আবেদন করে।দুই হাজার ৩৬৭ জন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধার তালিকা সম্বলিত গেজেট বাতিলে সরকারের জারি করা প্রজ্ঞাপন গত ৮ সেপ্টেম্বর অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ।ওই রায় স্থগিতের আবেদন নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ চেম্বার আদালতে গেলে গত ৯ অক্টোবর আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি বিষয়টি ৩০ অক্টোবর শুনানির জন্য পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। ওই সময় পর্যন্ত হাই কোর্টের রায় স্থগিত রাখতে বলেন তিনি।
শুনানি শেষে সুব্রত চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, নিয়মিত আপিলের আবেদন করা হয়েছে কি-না তা জানতে চায় আদালত। রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, রায়ের অনুলিপি না পাওয়ায় তারা সেটা করতে পারেননি। তখন আদালত দুই সপ্তাহের জন্য বিষয়টি মুলতবি করে। ওই সময় পর্যন্ত স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে।
ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা মুক্তিযুদ্ধের সময় একটি গেরিলা বাহিনী গঠন করে মুক্তি সংগ্রামে অংশ নেয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম) আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধুর কাছে অস্ত্রসমর্পণ করে ওই গেরিলা বাহিনীর সদস্যরা।মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০১৩ সালের ২২ জুলাই ওই গেরিলা বাহিনীর দুই হাজার ৩৬৭ জনের নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় যুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু পরের ব্ছর ২৯ অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ওই গেজেট বাতিল করে। সেখানে বলা হয়, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সভার সুপারিশ অনুসারে ক্রুটিপূর্ণ গেজেটটি বাতিল করা হল। গেজেট বাতিলের প্রজ্ঞাপনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের গেরিলা বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার ও ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য। গত বছর ১৯ জানুয়ারি ওই আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের বেঞ্চ গেজেট বাতিলের প্রজ্ঞাপনের কার্যকারিতা তিন মাসের জন্য স্থগিত করে। সেই সঙ্গে রুল জারি করে জানতে চাওয়া হয়- ওই প্রজ্ঞাপন কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষরকারী উপসচিব ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের মহাপরিচালকের কাছে এর জবাব চাওয়া হয়।রুলের ওপর শুনানি করে ৮ সেপ্টেম্বর হাই কোর্ট গেজেট বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে। সেদিন রায়ের পর সুব্রত চৌধুরী বলেছিলেন, হাই কোর্ট গেরিলা বাহিনীর দুই হাজার ৩৬৭ জনকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রাপ্য সম্মান, মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে।
Discussion about this post