ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় বসবাস করা মুক্তিযোদ্ধাদের ১৫শ বর্গফুট পর্যন্ত বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফের ঘোষণা দিয়েছেন দুই মেয়র। দুঃস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থিক সহায়তায় তহবিল গঠন করার কথাও জানিয়েছেন তারা।শনিবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি।
ঢাকা শহরে বসবাসরত মুক্তিযোদ্ধাদের হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফের ঘোষণা দিয়েছে দুই সিটি করপোরেশন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এ ঘোষণা দেয়। এ ছাড়া অসহায় ও দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি তহবিল (দুস্থ ফান্ড) গঠন করা হবে বলেও জানানো হয়। শনিবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সংবর্ধনা ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে ঢাকার দুই মেয়রের কাছ থেকে এসব ঘোষণা আসে।সংবর্ধনায় সারাদেশ থেকে প্রায় চার হাজার মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।অনুষ্ঠানে ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা নিজের জীবন দিয়ে এ দেশকে স্বাধীন করেছেন। অথচ তাঁদের চাহিদা আমরা পূরণ করতে পারিনি।ঢাকায় বসবাসরত মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন সময়ে তাদের হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করার জন্য আবেদন জানান। এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক। আজকে এই অনুষ্ঠান থেকে তিনি ঘোষণা দেন, ঢাকায় বসবাসরত সব মুক্তিযোদ্ধার হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করা হবে। এ সময় ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হকও তাতে সম্মতি জানান।
সাঈদ খোকন বলেন,মুক্তিযোদ্ধারা এ দেশকে একটি মানচিত্র উপহার দিয়েছেন।তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মকে বাংলাদেশ তথা ঢাকা শহরকে একটি বসবাস উপযোগী শহর হিসেবে গড়ে তুলতে অবদান রাখতে হবে।অনুষ্ঠানে ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হক বলেন, এ দেশের প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার গল্প এক একটি ইতিহাস।তাদের এ আত্মত্যাগের কারণেই আমরা একটি স্বাধীন ভূখন্ড পেয়েছি। আমরা আজ স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারি। তাদের জন্য ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন যা করার প্রয়োজন পড়বে সবকিছুই করবে।
অনুষ্ঠানে আমির হোসেন মোল্লা নামের একজন মুক্তিযোদ্ধা জানান, বর্তমানে সিটি করপোরেশন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স এক হাজার বর্গফুট পর্যন্ত হলে তা মওকুফ করা হয়। ১৫শ বর্গফুট পর্যন্ত বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করার অনুরোধ জানান তিনি।এছাড়া রাজধানীর সব কবরস্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আলাদা জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়ারও দাবি জানান মুক্তিযোদ্ধারা।ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন তার বক্তব্যে বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা সামান্য হোল্ডিং ট্যাক্স কমাতে আমাদের কাছে দাবি করে, জাতি হিসেবে এটা আমাদের কাছে লজ্জার। আমাদের মাথা নিচু হয়েছে।
মেয়র মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ১৫শ বর্গফুট পর্যন্ত বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ এবং মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের জন্য সিটি করপোরেশনের কমিউনিটি সেন্টারে বিশেষ আর্থিক ছাড়ের ঘোষণা দেন।
দুঃস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তহবিল গঠনের বিষয়ে সাঈদ খোকন বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা আর্থিক সঙ্কটে পড়েন, ঋণগ্রস্ত হয়ে যান, হাত পাততে হয়, যা আমাদের ব্যর্থতা। এ গ্লানি ঘুচাব। আপনাদের যখন যেটা প্রয়োজন হবে, আমাদের সীমিত সম্পদ দিয়ে আমরা আপনাদের পাশে দাঁড়াব। আশা করি উত্তরের মেয়রও আপনাদের পাশে দাঁড়াবেন। আমরা দুই ভাই মিলে একটি তহবিল গঠন করব।মুক্তিযোদ্ধারা যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন তার অনেকগুলোই অপূরণীয় আছে বলে মন্তব্য করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক।স্বাধীনতার এতো বছর পরও আমাদের শুনতে হয় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এটি করে দাও, ওটি করে দাও। এসব তাদের চাওয়ার অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল। তা হলে আজকে এগুলো আমাদের শুনতে হতো না।সবকিছু করার ক্ষমতা না থাকলেও তারা দুই মেয়র মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক বলে জানান আনিসুল হক।অনুষ্ঠানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান এবং দুই সিটি করপোরেশেনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
Discussion about this post