স্বাস্থ্যখাতে সরকারী ও আধা-সরকারী হাসপাতালে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার কথা থাকলেও এ ব্যাপারে জানেনই না বরিশালের সরকারী ও বে-সরকারী হাসপাতালের কর্মকর্তা, চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টরা। ফলে চিকিৎসাখাতে সরকারের দেয়া সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। এনিয়ে প্রায়ই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের স্বজনদের বাগ্বিতন্ডা লেগেই রয়েছে। ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে,বিগত ২০১৪ সালের ২৮ জানুয়ারী স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয়ের হাসপাতাল-৩ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব নুরুন্নাহার এর স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে (স্মারক নং-স্মাপকম/হাস-০৩/বিবিধ-১০(৪)/২০০২/৪৪) দেশের সকল সরকারী, আধা-সরকারী হাসপাতালের মহা-পরিচালক, পরিচালক ও রেজিস্ট্রার বরাবরে উল্লেখ করা হয় দেশ মাতৃকার স্বাধীনতা অর্জন তথা পরাধীনতার শৃংখলা মুক্ত করার জন্য ১৯৭১ সালে যে সকল অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরেছিলেন। জাতির প্রয়োজনে যাদের অনেকেই নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলো, অত্যন্ত সংগত কারণে আজ তারা ও তাদের পরিবারবর্গ বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা প্রাপ্তির দাবি রাখে। সে লক্ষ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারবর্গের সু-চিকিৎসা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এমতাবস্থায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারবর্গের জন্য দেশের সকল সরকারী ও আধা-সরকারী হাসপাতালে বিনামূল্যে একটি কেবিন, সীট বরাদ্দ নিশ্চিতকরণ, সকল রোগ নির্ণয়, বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ, বিনামূল্যে এ্যাম্বুলেন্সযোগে হাসপাতালে আনায়নসহ চিকিৎসা সেবা প্রদানের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের পশ্চিম বাউরগাতি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিলদার (অবঃ) কাজী মোহাম্মদ আলীর পুত্র কাজী আল-আমিন অভিযোগ করেন, তার পিতা গত ২০ মার্চ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নিজবাড়িতে গুরুত্বর অসুস্থ্য হয়ে পরলে তাকে গৌরনদী হাসপাতালে আনা হয়। সেখান থেকে চিকিৎসকেরা দ্রুত তার পিতাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। এসময় তিনি (মুক্তিযোদ্ধার পুত্র) হাসপাতালের সরকারী এ্যাম্বুলেন্সে গুরুত্বর অসুস্থ্য তার পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বরিশাল নেয়ার কথা জানালে চালক আব্দুল আজিজ তার কাছে ভাড়া দাবি করেন। এসময় তিনি সরকারী নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারবর্গদের বিনামূল্যে এ্যাম্বুলেন্সে নেয়ার কথা জানালে চালক আজিজের সাথে তার বাগ্বিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে তিনি (আল-আমিন) বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ কবির আহসানকে জানালে তিনি বলেন, সরকারী নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারবর্গদের বিনামূল্যে এ্যাম্বুলেন্সে নিতে হবে এ ব্যাপারে তার কোন কিছুই জানা নেই। পরবর্তীতে অর্থের বিনিময়েই গুরুত্বর অসুস্থ্য বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী মোহাম্মদ আলীকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে আনা হয়। মুক্তিযোদ্ধার পুত্র কাজী আল-আমিন অভিযোগ করেন, সরকারী হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধাদের রোগ নির্নয়সহ সকল প্রকার ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহের কথা থাকলেও দক্ষিণাঞ্চলে সরকারী সর্ববৃহত চিকিৎসা কেন্দ্র শেবাচিম হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে তার বাবাকে হাসপাতালের বাহির থেকে অর্থের বিনিময়ে পরীক্ষা নিরিক্ষাসহ ওষুধ ক্রয় করে সেবন করাতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মোঃ সিরাজুল ইসলামের সাথে সাক্ষাত করে তাকে অবহিত করার পর পরিচালকও তাকে জানিয়েছেন, মুক্তিযোদ্ধা কিংবা তাদের পরিবারবর্গকে বিনামূল্যে এ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে আনতে হবে এ বিষয়ে তার জানা নেই। এরপূর্বে গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে চিকিৎসা নিতে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি হতে আসা এক মুক্তিযোদ্ধার কাছে ভর্তি বাবদ হাসপাতালের এক কর্মচারী টাকা দাবি করে। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধামাচাঁপা দিতে অভিযুক্ত ওই কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।
জেলা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের নেতৃবৃন্দরা অভিযোগ করেন,গৌরনদীসহ বিভিন্ন উপজেলার সরকারী ও বে-সরকারী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অজ্ঞতার কারণে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা সরকারের দেয়া সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। গৌরনদী মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রের গাইনী চিকিৎসক ও সার্জন ডাঃ মোঃ ফরিদুজ্জামান, এ্যাম্বুলেন্স চালক মোঃ নুরে আলম, গৌরনদী হাসপাতালের সরকারী এ্যাম্বুলেন্স চালক আব্দুল আজিজ, উজিরপুর, আগৈলঝাড়া, বাবুগঞ্জ, বানারীপাড়া, বাকেরগঞ্জসহ দশ উপজেলার সরকারী হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স চালকেরা জানান, মুক্তিযোদ্ধা কিংবা তাদের পরিবারবর্গ অসুস্থ্য হয়ে পরলে তাদের বিনামূল্যে এ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে আনতে হবে এ বিষয়ে তাদের কারওই জানা নেই।এ ব্যাপারে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, অসুস্থ্য মুক্তিযোদ্ধারা চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ভর্তি হলে তাদের সাধ্যমতো চিকিৎসা সেবা ও বরাদ্দ অনুযায়ী ওষুধ সরবরাহ করা হয়। তবে মুক্তিযোদ্ধা কিংবা তাদের পরিবারবর্গকে বিনামূল্যে এ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে আনার ব্যাপারে আমার জানা ছিলোনা।
Discussion about this post