আগামীকাল ৯ মার্চ হাতীবান্ধা পতাকা দিবস কিন্তু জানেন না কেহ। ইতিহাসকে করে রাখা হয়েছে বদ্ধঘরে তালাবন্ধ আর অবমূল্যায়ন। সেই বীরত্বের ইতিহাসকে যথাযথত মুল্যায়ন ও পালন করার দাবি জানাচ্ছে নতুন প্রজন্ম। স্বাধীনতা ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও মূল্যায়ন পায়নি স্বাধীনতা যুদ্ধে সীমান্তবর্তী লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলামের বীরত্বের ইতিহাস। দেশ স্বাধীনের পুর্বে, যুদ্ধকালীন এবং পরবর্তী সময়ের ক্লান্তিলগ্নে যে মানুষটি বটবৃক্ষের মতো ছায়া দিয়েছেন আর সকল ঝড়ঝাপটা থেকে এলাকার মানুষকে রক্ষা করেছেন তার বীরত্বের ইতিহাস আজ বদ্ধ ঘরে তালাবন্ধ।
তবে নতুন প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতা যুদ্ধে অত্রাঞ্চলের ইতিহাস তুলে না ধরা এখন সময়ের দাবি। তানাহলে আগামীপ্রজন্মের সন্তানেরা কোনদিনই জানবেনা সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলামের ইতিহাস।
হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক ও সাংবাদিক Ali Akhtar Golam Kibria স্যারের ফেসবুকে একটি স্ট্যাসে ইতিমধ্যে টনকনড়ে দিয়েছে বর্তমানের যুব সমাজকে। নেতাদের ভাবিয়ে তুলেছে কি কারণে এতো বড় একটি বীরত্বের ইতিহাস আজও আলোরমুখ দেখতে পারেনি বা তাকে মূল্যায়ন করা হয়নি তার উত্তর কারও জানা নেই।
Ali Akhtar Golam Kibria স্যারের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো!
হাতীবান্ধার পতাকা দিবস ৯ই মার্চ, ইতিহাসের নজরুল ইসলাম!
আগামী কাল ৯ই মার্চ- হাতীবান্ধা উপজেলার পতাকা দিবস। একাত্তরের এই দিনে পাকিস্তানের পতাকায় আগুন দিয়ে হাতীবান্ধায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন মুক্তিযুদ্ধে হাতীবান্ধা অঞ্চলের প্রধান সংগঠক প্রকৌশলী আলহাজ্ব মো. নজরুল ইসলাম। সকাল ১০টার দিকে হাতীবান্ধা ডাকবাংলো মাঠে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি পতাকা উত্তোলন করেন। স্থানীয় সংগ্রাম পরিষদের সম্পাদক হিসেবে জনাব নজরুল পরদিন ১০ই মার্চ থেকে মুক্তিযুদ্ধে যুবকদের উৎসাহিত করার জন্য মাঠে নামেন। এখানে বলা প্রয়োজন যে, জনাব নজরুলই রংপুর অঞ্চলের প্রথম সংগঠক যিনি ২৭শে মার্চ ভারতে প্রবেশ করে কোচবিহার জেলার শীতলখুচিতে জনসংযোগ শুরু করেন। ভারত সরকারের সহায়তায় তিনি সেখানে হাতীবান্ধার যুবক আর আনসারদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু করার ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। জনাব নজরুল ইসলাম ছিলেন নর্থজোনের অধীন শীতলখুচি ইয়ুথ ক্যাম্পের ইনচার্জ। সেসময় নর্থজোনের চেয়ারম্যান ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর পীরগঞ্জ-মিঠাপুকুর এলাকার এমএনএ মতিউর রহমান। ওই সময় রাজাকার-আলবদররা নজরুল ইসলামের মাথার মূল্য নির্ধারণ করেছিল এক লক্ষ টাকা। তারা এই মহান সংগঠকের খণ্ডিত মাথা চেয়েছিল। প্রকৌশলী আলহাজ্ব মো. নজরুল ইসলাম (Eng Nazrul Islam) ভারতে প্রায় এক লক্ষ শরণার্থীর থাকার জায়গা সহ তাদের রেশনের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। এই মহান সংগঠক শীতলখুচির ইয়ুথ ক্যাম্পে এক হাজার ছয়শ’ মুক্তিযোদ্ধার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি সম্মুখসমরেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৮ সদস্যের মুক্তিযোদ্ধা টিমের নেতৃত্ব দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম লালমনিরহাট-বুড়িমারি রেল সেকশনের ভাকারি ব্রিজ উড়িয়ে দিয়েছিলেন। বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল রেল যোগাযোগ।
ইতিহাসের পাতায় যে মানুষটি উজ্জ্বল হয়ে আছেন, বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত স্নেহভাজন যে মানুষটি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত কখনও সম্পাদক কখনও সভাপতি পদে থেকে হাতীবান্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করেছেন- তিনি মলিন হতে পারেন না। মলিন হতে পারে না মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। মলিন হতে পারে না হাতীবান্ধার পতাকা দিবস ৯ই মার্চ, মলিন হতে পারেন না বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত জনাব নজরুল ইসলামের মতো মুক্তিযোদ্ধারা। প্রকৌশলী আলহাজ্ব মো. নজরুল ইসলামের জয় হোক।
উপরের স্ট্যাটাসে হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি Md Allauddin Mia কমেন্ট কক্সে আক্ষেপ করে বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার নজরুল ইসলাম এর বাহিরেও হাতীবান্ধা উপজেলায় স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, গির্জা, এতিমখানা, কন্যা দায়গ্রস্তের মেয়েকে বিবাহ দিয়েছে কিন্ত সে উপজেলায় ভোট করলেও হাতীবান্ধার লোক তাকে সম্মানজনক ভোট দেননি। এর পিছনের মুল কারণ হলো হাতীবান্ধার লোক হয়তো নুজুরল ভাইয়ের ইতিহাস সম্পর্কে জানেন না।