শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলা থেকে ৩ সেপ্টেম্বর সাঁতার শুরু করা মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য দীর্ঘ ১৮৫ কিলোমিটার সাঁতরেছেন। এর মাধ্যমে তিনি বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি এখনো পাননি তিনি। গত সোমবার সকালে নালিতাবাড়ী পৌর শহরের ভোগাই ব্রিজ থেকে সাঁতার শুরু করেন জাতীয় রেকর্ডধারী ৬৭ বছর বয়সী এই সাঁতারু।
নেত্রকোনা সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র গত বছরের ৪ আগস্ট সন্ধ্যা থেকে ৬ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত ১৪৬ কিলোমিটার নদীপথে সাঁতার কেটেছিলেন। এবার ৬১ ঘণ্টায় সোমবার থেকে বুধবার রাত ৮টা পর্যন্ত ১৮৫ কিলোমিটার সাঁতরে সেই রেকর্ড ভেঙে বিশ্বরেকর্ড গড়েন তিনি। শেরপুরের নালিতাবাড়ী পৌরসভা ও নেত্রকোনার মদন উপজেলার নাগরিক কমিটি এবার যৌথভাবে দূরপাল্লার ব্যতিক্রমী এই সাঁতারের আয়োজন করে সফলতা অর্জন করে।
সাঁতারের আয়োজনে জেলার মদন উপজেলার বাসিন্দাসহ দূর-দূরান্ত থেকে মগড়া নদীর দুই পাড়ে ভিড় জমায় বিপুলসংখ্যক মানুষ। এর আগে গত সোমবার সকালে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান দূরপাল্লার এই ব্যতিক্রমী সাঁতারের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। ভোগাই ব্রিজ থেকে কংস নদ হয়ে নেত্রকোনা জেলার মদন পৌর শহরের মগড়া নদীর দেওয়ান বাজারঘাটে গিয়ে ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যের এই সাঁতার শেষ হয় বুধবার রাত ৮টায়। বাজারঘাটে সাঁতারু ক্ষিতীন্দ্র বৈশ্যকে স্বাগত জানান আয়োজক কমিটিসহ নেত্রকোনার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আরিফুল ইসলাম, মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়ালীউল হাসান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম আকন্দ। এ সময় হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেন নদীর পাড়ে।
এর আগে এই কৃতী সাঁতারু ১৯৭২ সালে সিলেটের রামকৃষ্ণ মিশন পুকুরে ৩৪ ঘণ্টা, সুনামগঞ্জের সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পুকুরে ৪৩ ঘণ্টা, ১৯৭৩ সালে ছাতক উচ্চ বিদ্যালয়ের পুকুরে ৬০ ঘণ্টা, সিলেটের এমসি কলেজের পুকুরে ৮২ ঘণ্টা এবং ১৯৭৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের পুকুরে ৯৩ ঘণ্টা ১১ মিনিট সাঁতার প্রদর্শন করে জাতীয় রেকর্ড গড়েন।
সাঁতারু বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যর পারিবারিক সূত্র জানায়, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের অবসরপ্রাপ্ত এএনএস কনসালট্যান্ট তিনি। সিলেটে ১৯৭০ সালে ধূপদীঘি পুকুরে অরুণ কুমার নন্দীর ৩০ ঘণ্টার বিরতিহীন সাঁতার দেখে তিনি সাঁতারে উদ্বুদ্ধ হন। শুরু করেন সাঁতার অনুশীলন। পরে ওই বছরেই মদনের জাহাঙ্গীরপুর উন্নয়ন কেন্দ্রের পুকুরে একটানা ১৫ ঘণ্টা সাঁতরে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আলোচিত হন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের পুকুরে ৯৩ ঘণ্টা ১১ মিনিট সাঁতার কেটে জাতীয় রেকর্ড গড়ার পর সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস বন্ধ করে দিয়ে ডাকসুর উদ্যোগে বিজয় মিছিল বের করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাঁতারের কৃতিত্বের জন্য তাঁকে গণভবনে ডেকে রুপার নৌকাও উপহার দিয়েছিলেন।
কৃতী এই সাঁতারু এরপর ১৯৭৬ সালে জগন্নাথ হলের পুকুরে ১০৮ ঘণ্টা পাঁচ মিনিট সাঁতরে নিজের পুরোনো রেকর্ড ভেঙে ফেলেন। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জগন্নাথ হলের পুকুরপাড়ে একটি স্মারক ফলক নির্মাণ করে। আয়োজক মদন উপজেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ও সাবেক পৌরসভার মেয়র দেওয়ান মোদাচ্ছের হোসেন সফিক বলেন, ২০১৭ সালের ৪ আগস্ট সন্ধ্যা থেকে ৬ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত ১৪৬ কিলোমিটার নদীপথে সাঁতার কেটেছিলেন ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য। এবার ১৮৫ কিলোমিটার সাঁতরে সেই রেকর্ডও ভাঙেন তিনি।
মোদাচ্ছের হোসেন সফিক আরো বলেন, ‘এটাই শেষ সাঁতার তাঁর। ৬৪ বছর বয়সী মার্কিন সাঁতারু ডায়ানা নায়াদের কিউবা থেকে ফ্লোরিডার ১৭৭ কিলোমিটার সাঁতারের রেকর্ড ভাঙার জন্যই এই সাঁতার শুরু করেছিলেন তিনি। এই সাঁতারের মাধ্যমে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যর নাম ও দেশের নাম ওঠাতে চাই আমরা।’
মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওয়ালীউল হাসান জানান, বর্তমানে তিনি সুস্থ আছেন। তাঁকে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। কৃতী এই সাঁতারুর এবারের সাঁতারের নদীর গতিপথে আয়োজক কমিটি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য কিছু সংখ্যক লোকসহ তিনটি ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকা, একটি বড় ডিঙি নৌকা, একটি স্পিডবোট, চিকিৎসা ব্যবস্থা, তরলজাতীয় খাবার, নৌকায় গান-বাজনাসহ বিভিন্ন ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল।