স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পায়নি খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার বেতবুনিয়া গ্রামের অসহায় মুক্তিযোদ্ধা ওয়াজেদ আলী গাইন। স্বাধীনতা সংগ্রামে অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা জীবন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে রোগে শোকে ধরাশায়ী হয়ে এখন শয্যাশায়ী। পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন এই মুক্তিযোদ্ধা।
বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও এখোনও স্মৃতিশক্তি লোপ পায়নি। বললেন জীবনের ফেলে আসা অতীতের কথা। স্মৃতিচারণ করলেন স্বাধীনতা সংগ্রামে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের। তিনি বলেন, ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হলেও এখন নিজের জীবনযুদ্ধে লড়ছেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ি। মুক্তিযুদ্ধে বলিষ্ট নেতৃত্বদানকারী বৃহৎ খুলনা জেলা লিডার বি এল এফ (মুজিব বাহিনী) শেখ কামরুজ্জামান টুকুর গ্রুপের সক্রিয় একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা গেজেট তালিকায় অর্ন্তভূক্ত হতে পারেনি আজও। ওয়াজেদ গাইন আরও বলেন, থানা কমান্ডার শেখ শাহাদাৎ হোসেন বাচ্চুর নেতৃত্বে ও এলাকা কমান্ডার রুহুল আমিনের অধিনে হাতিয়ারডাঙ্গা ট্রেনিং সেন্টারে ২০ দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের প্রমাণ স্বররূপ কর্ণেল আতাউল গণি ওসমানী কর্তৃক সনদ পেয়েছিলাম। গত ৩ বছর যাবৎ অসুস্থতাজনিত কারণে ভোগছি। দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ালেও কারও সেদিকে দৃষ্টি নেই। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, যৌবনে দেশ মাতৃকার টানে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সে স্বপ্ন বাস্তবতায় রূপ নিলেও ফেরাতে পারেনি নিজের ভাগ্য। অভাব অনটন আর দারিদ্রতাকে সঙ্গী করে বর্তমানে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছি।
তিনি আরো বলেন পাক বাহীনীদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে এবং বাংলার মানুষ স্বাধীন ভাবে বাঁচার যে স্বপ্ন দেখেছিল সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধুর ডাকে আমরা যুদ্ধ করেছি। আজ তিনি দেশের জন্য শহিদ হয়ে বিশ্বের কাছ অমর হয়ে আছেন। আক্ষেপ প্রকাশ করে ওয়াজেদ গাইন আরোও বলেন, স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাইনি। বিভিন্ন সময়ে কয়েকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। সবশেষে ২০১৭ সালে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাচাইয়ের সময়ও আবেদন করেছি। তবে এতোদিনেও তার ভালো-মন্দ কিছু জানতে পারেনি।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর নিবেদন, আর দেরি না করে দ্রুতই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ করা হোক। সঠিক ভাবে যাচাই-বাচাই হলে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাবো বলে বিশ্বাস করি। এ ব্যাপারে সবার সুদৃষ্টি কামনা করছি। তিনি বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধার ভাতাটা বড় করে দেখছি না, জীবনের শেষপ্রান্তে এসে ‘মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি’ দেখে যেতে চাই। আশা করি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক দেশ দরদী জননেত্রী যথাযথ মূল্যায়ন করবেন বলে আশা করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা হতাশ, তবু তাদের আস্থার প্রতীক বঙ্গবন্ধুকন্যা। মুক্তিযোদ্ধারা জাতীয় বীর ও আদশের্র সৈনিক এবং দেশপ্রেমিকের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা অনাহারে অধার্হারে থেকে বিনা চিকিৎসায়, বাসস্থানহীন অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা সমাধিস্থলে চলে যাবে। ভূয়ারা বুক ফুলিয়ে হাসবে, সুযোগ ভোগ করবে! আর প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা থাকবে অবহেলায়। প্রতি বছর যথারীতি বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবস আসে, জনতা বিজয় স্তম্ভে ফুল দেয়, শ্রদ্ধাবনত চিত্তে মুক্তিযোদ্ধাদের কথা স্মরণ করে কৃতজ্ঞতা জানায়। মুখে মুখে মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধার বীরত্বের কথা বলে আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে। জীর্ণ শরীর নিয়ে মৃত্যুর প্রহর গুণছি। অথচ নিজের আবাসস্থলে নিরাপত্তায় জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারবো কি না এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। ওয়াজেদ গাইন একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও নানা কারণে আজও তার নাম গেজেটভুক্ত হয়নি। তাই মারা যাওয়ার আগে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চান তিনি। এবং প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে সুদৃষ্টি কামনা করেছেন অসহায়-অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা ওয়াজেদ গাইন ও তার পরিবার।