ছেলের রুজি-রোজগার অন্যায়ভাবে কেড়ে নেওয়ায় এর আগে রাষ্ট্রীয় সম্মান ছাড়াই নিজের দাফন চেয়ে অসিয়ত করেছিলেন দিনাজপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসমাইল হোসেন। মৃত্যুর পর পরিবারের লোকজন তার অসিয়ত মোতাবেক কবর দেন। একই অভিযোগে এবার পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের কাছে চিঠি লিখেছেন আরেক মুক্তিযোদ্ধা সলিমউদ্দিন।
গতকাল বৃহস্পতিবার পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার কাটালী মীরপাড়া গ্রামের এই বাসিন্দা চিঠিটি জেলা প্রশাসক ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সাবিনা ইয়াসমিনের কাছে পাঠান। ছেলের চাকরি না হওয়ায় চিঠিতে তার মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মান গ্রহণে অস্বীকৃতির পাশাপাশি নিজ পরিবারকেও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই দাফনের নির্দেশ দেন মুক্তিযোদ্ধা সলিমউদ্দিন। জেলা প্রসাশকের পাশাপাশি চিঠির অনুলিপি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরেও পাঠান তিনি।
মুক্তিযোদ্ধা সলিমউদ্দিনের লিখিত চিঠির একটি কপি এসেছে। যেখানে বলা হয়েছে, সম্প্রতি আটোয়ারী উপজেলার ১৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরী পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে সলিমউদ্দিনের ছেলে সাহিবুল ইসলাম দাড়খোর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরী পদে আবেদন করেন এবং মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু ওই নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধার কোটা না মেনে নিয়োগ কমিটি সাদেকুল ইসলাম নামে অন্য এক প্রার্থীকে নিয়োগ প্রদান করেন বলে অভিযোগ করেন ওই মুক্তিযোদ্ধা।
জেলা প্রশাসক বরাবার মুক্তিযোদ্ধা সলিমউদ্দিনের পাঠানো চিঠি
চিঠিতে সলিমউদ্দিন লেখেন, পরে এই অনিয়মের অভিযোগে নিয়োগ কমিটির সভাপতি আটোয়ারী উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে সহকারী জজ আদালতে (আটোয়ারী) একটি মামলা করেন তিনি। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় একটি প্রভাবশালী মহল মামলাটি প্রত্যাহার করে নিতে বাদী সাহিবুল ইসলাম ও তাকে নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। মুক্তিযোদ্ধা কোটা না মানায় মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হয়েছে দাবি করে ওই নিয়োগে অনিয়মের বিচার না হলে ওই মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুর পর তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দিতে নিষেধ করেন।
সলিমউদ্দিন চিঠিতে আরও লেখেন, ‘আমি দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা। ছেলের চাকরির জন্য ঘুষ দিতে পারিনি বলে ওরা আমার ছেলেকে চাকরি দিলো না। আমার ছেলে যোগ্য প্রার্থী ছিল। সে আনসার ভিডিপি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তারপরও তার চাকরি হলো না। যারা টাকা দিয়েছে তাদের চাকরি হয়েছে। আমি এর প্রতিবাদে মামলা করেছি বলে বিভিন্নভাবে আমাকে হুমকি ধামকি দেওয়া হচ্ছে। এমন অনিয়ম যদি দেখতেই হবে তবে আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম কেন? এসব ঘটনার বিচার না হলে মৃত্যুর পর আমি এমন দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনের দ্বারা আমি রাষ্ট্রীয় সম্মান চাই না।’
আটোয়ারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সৈয়দ মাহমুদ হাসান চিঠি পাননি জানিয়ে বলেন, ‘এরকম কোনো কাগজ পাইনি। অভিযোগের কাগজ পেলে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধা অভিযোগ করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা কোটা না মেনে নিয়োগ ও এ কারণে তার ছেলের চাকরি হয়নি অভিযোগ করে তিনি একটি চিঠি পাঠিয়েছেন, জেনেছি। চিঠিতে তিনি বলেছেন, অনিয়মের বিষয়টি বিচার না হলে তিনি মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মান চান না। যদিও বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ-খবর নিয়ে দেখব বিষয়টি।’
এর আগে গত নভেম্বর মাসে দিনাজপুরের মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসমাইল হোসেন তার ছেলেকে চাকরিচ্যুত, বাস্তুচ্যুত করার অভিযোগ এনে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা না নেওয়ার অসিয়ত করেন। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম বরাবর পাঠানো চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হঠাৎ যদি আমার মৃত্যু হয়, আমাকে যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন না করা হয়। কারণ, এসিল্যান্ড, ইউএনও, এডিসি, যারা আমার ছেলেকে চাকরিচ্যুত, বাস্তুচ্যুত করে পেটে লাথি মেরেছে, তাদের সালাম/স্যালুট আমার শেষ যাত্রার কফিনে আমি চাই না। ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করিও।’
এ সময় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় চিঠি পাঠানোর ২৪ ঘণ্টা পর হাসপাতালেই মারা যান ইসমাইল।