চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ডা. আলী আশরাফের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ছাড়াই দাফন সম্পন্ন হয়েছে। তিনি ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী ও চট্টগ্রাম জেলা যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মৌলভী সৈয়দের বড় ভাই। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদ করায় ১৯৭৭ সালের ১১ আগস্ট তৎকালীন সরকার মৌলভী সৈয়দকে গ্রেপ্তার করে শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করেছিল।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফ বার্ধক্যজনিত কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল রবিবার বিকালে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। রবিবার রাত অবধি সোমবার সকাল ১১টায় জানাযার কথা জানিয়ে মাইকিংও করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তারকে জেলা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের পক্ষ থেকে জানানোও হয়। যথা সময়ে থানা ও জেলা পুলিশ, মুক্তিযোদ্ধা ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত না থাকায় এবং সালামি পতাকার অভাবে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ছাড়া জানাযা শেষে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
জানাযা ও দাফন শেষের প্রায় ৫০ মিনিট পর বাঁশখালীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতিকুর রহমান ঘটনাস্থলে গেলে জানাযায় আসা উপস্থিত জনতা তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন এবং হইচই শুরু করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে উপস্থিত পুলিশ তাকে নিরাপত্তা দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করান। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে দুপুর ১টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। মরহুমের কবরাস্থানে পুস্পস্তবক দেন, কবর জিয়ারত করেন এবং মরুহুমের পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান।
মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফের ছেলে জহির উদ্দিন বাবর বলেন, রাষ্ট্র ও জাতির জন্য আমাদের পরিবারের পরম ত্যাগকে উপজেলা প্রশাসন অবজ্ঞা করেছে ও অসম্মান করেছে। আমার বাবার প্রতি এই অশ্রদ্ধা সহ্য করতে পারছি না। দক্ষিণ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার (অর্থ) মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, উপজেলা প্রশাসনের এই অবজ্ঞা ও অবহেলা মুক্তিযোদ্ধাদের কলংকিত করেছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অদক্ষতা ও অযোগ্যতায় মুক্তিযোদ্ধারা পদে পদে লাঞ্চিত হচ্ছে। দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় এসব ঘটনা ঘটেই চলছে।
বাঁশখালী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আবুল কাশেম বলেন, আমরা উপজেলা প্রশাসনকে কয়েকবার জানাযার সময় জানিয়ে দিয়েছি। এমন কী জানাযার লাইনে দাঁড়িয়ে কয়েকবার ফোন করেছি। প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসেননি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, আমার ব্যস্ততার কারণে আমি এসিল্যান্ডকে মরহুমের জানাযায় পাঠিয়েছিলাম। টাইম মিসিংয়ের কারণে অনাকাঙ্খিত ঘটনাটি ঘটেছে। এসিল্যান্ডের বাবাও একজন মুক্তিযোদ্ধা। ইচ্ছাকৃত ঘটনাটি ঘটেনি।
Discussion about this post