সবাইকে শোকাহত করে চলে গেলেন না ফেরার দেশে কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণস্থ সীমান্ত এলাকার শিক্ষার জনক খ্যাত আলোকিত মানুষ বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান চৌধুরী। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য ও আদর্শের একজন ত্যাগী মানুষ তৃণমূল থেকে গড়ে উঠা মানুষটি বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা থেকে শুরু করে ৬০-এর দশকের উত্তাল দিনগুলোতে সকল আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন।
স্বাধীনতার পূর্বে সময় যুবক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান চৌধুরী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর একান্ত সাক্ষাত ছিলেন কুমিল্লা শহরের উপকণ্ঠে লক্ষ্মীনগর গণি তহশিলদার দীঘিনালার এক নির্জন জায়গায়। চট্টগ্রামের একটি জনসভা শেষ করে রাতে ঢাকা ফিরার পথে বঙ্গবন্ধু এ গোপন স্বাক্ষাত করেন ও রাতের খাবার খাওয়াদাওয়া করেন।আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা অলি আহমেদ এমপি, মোখলেসুর রহমান ও তিনি সহ ০৩ জন মিলে সে সময়ে বঙ্গবন্ধু মুজিবের সাথে দেখা করে নিয়ে ছিলেন দেশ গঠনের দীক্ষা। সে সাক্ষাতে কুমিল্লার সীমান্ত এলাকার জন্য অনেক সুবার্তা নিয়ে এসেছিল তার মধ্যে একটি হলো স্বাধীনতার পরে এই এলাকায় তিনি ১ম বিদ্যুৎতের খুঁটি এনে এলাকা কে আলোকিত করেছেন। এটা এলাকাবাসী চিরদিন কৃতজ্ঞ ভরে স্মরণ করে।
বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বস্ত্রীক মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে আমাদেরকে একটি মুক্ত স্বাধীন দেশ উপহার দিতে অংশীদার ছিলেন। যুদ্ধ চলাকালীন ইন্টেলিজেন্স ব্র্যাঞ্চের অফিসার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন ফেনী থেকে আখাউড়া শালদা নদী পর্যন্ত। চ্যালেঞ্জিং এই দায়িত্বে ছিলো প্রতিমুহূর্তে মৃত্যু ঝুঁকি ও বেঁচে ফিরার নানা দুঃসাহসিক ইতিহাস। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কতৃক গোলা বারুদের ক্ষতের দাগ নিয়ে সারাজীবন কাটিয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের লক্ষে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। দায়িত্ব পালন করেন গলিয়ারা ইউনিয়ন এর প্রথম প্রশাসনিক চেয়ারম্যান। নিজে সম্পদ উৎসর্গ করে গড়ে তুলেন সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের কুমিল্লার এই সীমান্ত এলাকায় কনেশতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মসজিদ মক্তব, মাদ্রাসা সহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠানে উনার অবদান ছিল। যুদ্ধ বিধ্বস্ত এসব এলাকার উন্নয়নে উনার অবদান চিরকাল স্বরণীয় হয়ে থাকবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আব্দুর রহমান চৌধুরী’র রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জানাযার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়। শেষ বয়সে এসে এলাকার গণমানুষের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে প্রতিষ্ঠা করেছেন “কনেশতলা সাংস্কৃতিক পাঠাগার ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি সংগ্রহ শালা”। কখনো নিজের নাম প্রচার করতে চাইতেন না। এলাকার নাম প্রচার হউক সেটাই চেয়েছেন মন থেকে।
কুমিল্লার আরেক বীর পুরুষ সাবেক সাংসদ আবুল কালাম মজুমদার এর সাথে তাঁর রাজনৈতিক সখ্যতা ছিল বেশ তুঙ্গে। কুমিল্লার আওয়ামীলীগ এর প্রবাদপ্রতিম পুরুষ এডভোকেট আফজাল খানের সাথে নানা সংগ্রাম আন্দোলনেও যুগোৎপুত অংশ নিয়েছিলেন এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মরহুম আব্দুর রহমান চৌধুরী।
এলাকার যুব ও ছাত্র সমাজ কে মাদক ও অপসংস্কৃতি চর্চা থেকে রক্ষা করতে খেলাধুলার আয়োজনে ছিল মনোযোগী। অত্র অঞচলের বিখ্যাত যাত্রা খিল মাঠ কে তিনি পুরো দেশবাসীর কাছে তুলে ধরেছেন খেলাধুলার আয়োজন করে। পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন সময় কাছে থেকে।
মৃত্যু র আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার লক্ষে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। নির্লোভ এই মানুষটি নিজের জন্য বা নিজের পরিবারের জন্য কিছুই করেন নি। বহুবার জনপ্রতিনিধি হবার সুযোগ আসলেও সে দিকে খেয়াল করেন নি। পুত্র সন্তান পরিবার নিয়ে তেমন ভাবেন নি যতটা ভেবেছেন দলের জন্য ও দেশের জন্য।
বহুমুখী প্রতিবার অধিকারী মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমান চৌধুরী প্রায় ৫ দশক ধরে অত্র গলিয়ারা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নিরলসভাবে কাজ করেছেন। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলাবাসী আজ শোকাহত।উনার মৃত্যু সদর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের এক অপূরণীয় ক্ষতি। যা কখনো পূরণ হবার মত নয়।
তাঁর ছোট ছেলে আরিফুর রহমান চৌধুরী কেও গড়ে তোলেছেন নিজের আপন দীক্ষায়। আরিফ চৌধুরীও বাবার মত রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন পুরোদেশ জুড়ে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র তথ্য প্রযুক্তির রাজপুত্র “সজীব ওয়াজেদ জয়ের” সান্নিধ্য পেয়ে পুত্র আরিফ চৌধুরীও বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়নে দুতি হয়েছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান চৌধুরী মৃত্যু কালে রেখে গেলেন ০৩ পুত্র সন্তান ও ০৬ মেয়ে এবং নানান চড়াই উৎরাই পাড় হওয়ার জীবন্তিকা জীবন সঙ্গিনী সহ অসংখ্য রাজনৈতিক কর্মী ও গুণগ্রাহী। তাঁর এই মহাপ্রয়াণে শোক প্রকাশ করেন প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আফজল খান, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল, সাবেক রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক, সদর আসনের সাংসদ আ ক ম বাহা উদ্দিন বাহার সহ অন্যান্যরা ও শোকে স্তব্ধ পুরো এলাকাবাসী।
Courtesy : আরিফুর রহমান চৌধুরী
Discussion about this post