আজ মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ত্বরান্বিত করার ঐতিহাসিক ‘জাহাজমারা’ দিবস। করোনা ও বন্যার কারণে দিবসটি উপলক্ষে এবার বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহন করা হয়নি। তবে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার মাটিকাটায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন জাহাজমারা কমান্ডার হাবিবের ছেলে আতিকুর রহমান।
১৯৭১ সালের এই দিনে যমুনা নদীতে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার মাটিকাটা নামক স্থানে বীর মুক্তিযোদ্ধারা আধুনিক মারণাস্ত্র ও রসদ বোঝাই পাক বাহিনীর জাহাজ এসইউ ইঞ্জিনিয়ার্স এলসি-৩ ও এসটি রাজন ধংস করার মাধ্যমে হানাদারদের পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেয়। ঐতিহাসিক সূত্রে প্রকাশ, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মরণাস্ত্র, গোলাবারুদ, জ্বালানী ও রসদ বোঝাই ৭টি যুদ্ধ জাহাজ নারায়ণগঞ্জ থেকে উত্তরবঙ্গে যাচ্ছিল।
মুক্তিযুদ্ধের এ সময় যমুনা-ধলেশ্বরী নদী পথে মাটিকাটা নামক স্থানে করা নজরদারী করছিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা মেজর হাবিবুর রহমান। তার দূরদর্শী নেতৃত্বে অল্প সংখ্যক বীর মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে জীবন বাজি রেখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দুটি অস্ত্র বোঝাই জাহাজ এসইউ ইঞ্জিনিয়ার্স এলসি-৩ এবং এসটি রাজন ধংস করা হয়। জাহাজ দুটিতে আক্রমণ ও দখল করে ১,২০,০০০ বাক্সে ২১ কোটি টাকা মূল্যের অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের দীর্ঘ ৯ মাসে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এক যুদ্ধে অন্য কোথাও মুক্তিবাহিনীর হাতে এত বড় ক্ষতি ও বিপর্যয়ের সম্মুখিন হতে হয়নি। পরবর্তীতে যুদ্ধ জাহাজ ও অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করার জন্য পাকিস্তানি কমান্ডেন্ট লে. জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজি ও ব্রিগেডিয়ার কাদের খানের নেতৃত্বে ৪৭ ব্রিগেড, ৫১ কমান্ডো ব্রিগেড ও পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর দুটি এফ-৮৬ স্যাবর জেট বিমান দ্বারা মুক্তিবাহিনীর উপর চতুর্দিক থেকে আক্রমণ করে।
বীর মুক্তিযোদ্ধারা হাবিবুর রহমানের নেতৃত্ব ও রণ কৌশলের কাছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এই যুদ্ধকে পট পরিবর্তনকারী(টার্নিং পয়েণ্ট) অধ্যায় হিসেবে গণ্য করা হয়। কমান্ডার হাবিবুর রহমানের অসম সাহসীকতা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘বীরবিক্রম’ ও ‘জাহাজমারা হাবিব’ খেতাবে ভূষিত করে।
জাহাজমারা যুদ্ধে অংশ গ্রহনকারী অন্যতম মুক্তিযুদ্ধা হলেনঃ
জনাব হাবিবুর রহমান (হাবিব) বীর বিক্রম, রেজাউল করিম তরফদার, আবুল হাসমত মুক্তা, আব্দুল বাছেদ. এম.এ শামছুল আলম, কায়কোবাদ সম্রাট, আব্দুল গফুর মিঞা, আমিনুর রহমান তালুকদার, লুৎফর রহমান, লুৎফর রহমান লুদা, এম এ বারি তরফদার, আবু মোহাম্মদ এনায়েত করিম, বুলবুর খান মাহবুব, মোতাহের আলী মিঞা, সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া, আব্দুর হামিদ ভোলা, খোদা বক্স মিঞা, আব্দুল আলীম তালুকদার, গোলাম নবী তরফদার, ফজলুল হক, আলী আকবর, আবদুসসিরাজকান্দী জাহাজমারা যুদ্ধে বিদ্ধস্ত জাহাজ ও জাহাজ থেকে খোয়া অস্ত্র সম্ভার উদ্ধারের লক্ষে ১২ আগস্ট থেকে ১৪ আগস্ট তারিখ পর্যন্ত পাক বাহিনী চারদিক থেকে পর্যায়ক্রমে সিরাজকান্দী মাটিকাটাসহ ভূঞাপুরে জল, স্থল ও আকাশ পথে যে সরাসরি অভিযান পরিচালনা করেছিল দুধর্ষ মুক্তিবাহিনী সেই অস্ত্র দিয়েই সাহসিকতার সঙ্গে তা মোকাবেলা করে। জাহাজ মারাযুদ্ধে পাক বাহিনীর ক্ষতিগ্রস্থ জাহাজ ও খোয়া যাওয়া অস্ত্র গোলা বারুদের ঘটনা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহুল ছিল যে, হারানো অস্ত্র সম্ভার উদ্ধার ও মুক্তি বাহিনীকে উৎখাতের জন্য আগত পাক বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পাক বাহিনীর পূর্বাঞ্চলের প্রধান লে.এ.কে নিয়াজি। তিনি ১৪ আগস্ট তৎকালীন ভূঞাপুর ডাক বাংলাতে অবস্থান করেছিলেন। এই ব্যাপক তৎরপরতা সত্বেও পাক বাহিনী তাদের খোয়া যাওয়া অস্ত্র উদ্ধারে ব্যর্থ হয়।
Discussion about this post