বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৪ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল চিত্ত রঞ্জন দত্ত মারা গেছেন। তিনি সি আর দত্ত নামে বেশি পরিচিত ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার জন্য বীর উত্তম খেতাব লাভ করেছিলেন। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক দীপঙ্কর ঘোষ। এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন সি আর দত্ত। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।
এর আগে ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছিল যে গত ২০শে অগাস্ট ফ্লোরিডার বাসভবনের বাথরুমে হঠাৎ পড়ে যান সি আর দত্ত। এই সময় তার পা ভেঙ্গে যায়। এরপর জেনারেল দত্তকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে তার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে। ভারতের শিলংয়ে জন্ম হলেও সি আর দত্তের পৈতৃক বাড়ি ছিল হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায়।
১৯৫১ সালে তিনি তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সিলেট অঞ্চল নিয়ে যে ৪ নম্বর সেক্টর গঠন করা হয়, সেই সেক্টরের কমান্ডার হিসাবে নিযুক্ত হন সি আর দত্ত। যুদ্ধে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি বীর উত্তম খেতাব পান। স্বাধীনতার পরে তিনি প্রথমে সেনাবাহিনীর রংপুরে ব্রিগেড কমান্ডার হিসাবে নিযুক্ত হন। পরে তাকে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী গঠনের দায়িত্ব দেয়া হয়। বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) গঠনের পর তিনি ছিলেন বাহিনীর প্রথম মহাপরিচালক।
১৯৮৪ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করার পর থেকে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
চিত্তরঞ্জন দত্ত ১৯৫১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। কিছুদিন পর ‘সেকেন্ড লেফটেনেন্ট’ পদে কমিশন পান। ১৯৬৫ সালে সৈনিক জীবনে প্রথম যুদ্ধে লড়েন তিনি৷ ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে পাকিস্তানের হয়ে আসালং এ একটা কোম্পানির কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ করেন তিনি। এই যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পাকিস্তান সরকার তাকে পুরস্কৃত করে।
মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকা অনেক। ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হওয়ার পর তাজউদ্দীন আহমেদকে প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করা হয় এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি হিসেব দায়িত্ব দেয়া হয় এম.এ.জি ওসমানীকে। তিনি বাংলাদশেকে মোট ১১টি সেক্টরে ভাগ করে নেন। সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল এবং খোয়াই শায়স্তাগঞ্জ রেল লাইন বাদে পূর্ব ও উত্তর দিকে সিলেট ডাউকি সড়ক পর্যন্ত এলাকা নিয়ে ৪নং সেক্টর গঠন করা হয় এবং এই সেক্টরের কমান্ডার নিযুক্ত হন চিত্তরঞ্জন দত্ত।
সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর সিলেটের রশীদপুরে প্রথমে ক্যাম্প বানান তিনি। চারপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে চা বাগান। চা বাগানের আড়ালকে কাজে লাগিয়ে তিনি যুদ্ধের কৌশল নির্ধারণ করে দিতেন। পরবর্তী সময়ে তিনি যুদ্ধের আক্রমণের সুবিধার্থে রশীদপুর ছেড়ে মৌলভীবাজারে ক্যাম্প স্থাপন করেন।
Discussion about this post