বাড়ি বানাতে ২ শতাংশ সার্ভিস চার্জে বিনা সুদে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা করে ঋণ পাবেন মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় ঋণ দিতে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, একজন মুক্তিযোদ্ধার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয় ২০১৬ সালে বিশেষ ব্যবস্থায় ঋণ দেয়ার উদ্যোগ নিতে বলে বাংলাদেশ ব্যাংককে। ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপককে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি গত সপ্তাহে এসংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঋণপ্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা/যোগ্য উত্তরাধিকারীর সংখ্যা হবে এক লাখ ৫১ হাজার ৪২২ জন। ঋণের সর্বোচ্চ পরিমাণ হবে ১০ লাখ টাকা। ৯ মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ ঋণের মেয়াদ হবে ১৪ বছর। ৫ শতাংশ সরল সুদ থাকলেও তা সরকার প্রতিবছর ব্যাংককে ভতুর্কি দেবে। ঋণের পূর্ণ মেয়াদ ১৭-১৮ বছরে মোট সুদের পরিমাণ দাঁড়াবে পাঁচ হাজার ৪৪৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। বছরে গড় সুদ ব্যয় হবে ৩০২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। পঞ্চম থেকে ১৪ বছরে গড়ে সুদ ব্যয় হবে ৩৮৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
ঋণের মাসিক কিস্তি হবে সাত হাজার ২০০ টাকা (সার্ভিস চার্জ ৯০৫ টাকা)। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা থেকে মাসিক কিস্তিতে এই ঋণ সমন্বয়যোগ্য হবে। ঋণের বিপরীতে নির্মিতব্য বাড়ি ব্যাংকে মর্টগেজ রাখতে হবে। ব্যাংক প্রথম তিন ধাপে ৪০ শতাংশ, তিন মাস পর ৩০ শতাংশ এবং আরো তিন মাস পর বাকি ৩০ শতাংশ বিতরণ করবে। ঋণ নেয়ার ৯ মাসের মধ্যে গৃহ নির্মাণ সম্পন্ন করতে হবে। এই ৯ মাস গ্রেস পিরিয়ড হিসেবে গণ্য হবে। দশম মাস থেকে ঋণের আসল ১৫৯টি মাসিক কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য হবে।
সম্মানী ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধা এবং মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতাভোগী অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত উত্তরাধিকাররা এই ঋণ সুবিধা পাবেন। জীবিত ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধারা অগ্রাধিকার পাবেন। বাড়ি বানানোর জন্য ন্যূনতম ২ শতাংশ নিষ্কণ্টক জমি আবেদনকারীর নিজস্ব বা স্বামী-স্ত্রীর দখলি স্বত্বে থাকতে হবে। ‘ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় কেউ বিনা মূল্যে বাড়ি পেয়ে থাকলে তিনি এ সুবিধা পাবেন না।
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এবং বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন এই ঋণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। তবে সরকার প্রয়োজন মনে করলে বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত করবে।
এবিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র এবং নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, কমিটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় বিষয়টি দেখবে। তবে যত দ্রুত সম্ভব জাতির সূর্যসন্তানদের জন্য এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হওয়া প্রয়োজন।
Discussion about this post