বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ও বিমান বাহিনীর ১৯২ জনের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতির গেজেট বাতিলের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে হাই কোর্ট। এ সংক্রান্ত পাঁচটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো.খায়রুল আলমের হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার রুলসহ আদেশ দেন। গেজেট বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং যাদের ক্ষেত্রে গেজেট বাতিল করা হয়েছে, তাদের ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা অব্যাহত রাখার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল ও সমাজ সেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. আব্দুল কাইয়ূম লিটন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর-উস সাদিক।
আইনজীবী মো. আব্দুল কাইয়ূম লিটন বলেন, “১৯২ জনের ক্ষেত্রে গেজেট বাতিলের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে রুল জারির পাশাপাশি নতুন করে নির্দেশনা দিয়েছেন হাই কোর্ট। ভাতাসহ তারা যে সমস্ত সুবিধা এই ১৯২ জন পেয়ে আসছিলেন তা অব্যাহত রাখতে বলেছেন আদালত। এখানে সুবিধা বলতে বেশ কিছু বিষয়কে বুঝানো হয়েছে। যেমন তাদের স্বাধীনতা দিবসে ডাকা, কেউ মারা গেলে তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান দেওয়া ইত্যাদি।
“গেজেট বাতিল করার কারণে ভাতা বন্ধের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয়-সামাজিক মর্যাদাও তারা পরোক্ষভাবে হারিয়েছিলেন। তাই আদালত তাদের প্রতি স্বীকৃতি ও মর্যাদাও অব্যাহত রাখতে বলেছেন।”
এ আইনজীবী আরও বলেন, গত ৭ জুলাই ভার্চুয়াল কোর্ট ১৬০ জনের ক্ষেত্রে গেজেট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়মিত আদালত খোলা পর্যন্ত স্থগিত করেছিলেন। সে সময় আদালত কোনো রুল জারি করেননি। নিয়মিত আদালত চালু হওয়ায় নতুন দুইটি রিটের পাশাপাশি ১৬০ জনের আগের তিনটি রিট আবার উপস্থাপন করা হলে আদালত এই আদেশ দেন।”
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে জারি করা ১ হাজার ১৮১ জনের গেজেট বাতিল করে গত ৭ জুন প্রজ্ঞাপন জারি করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এই ১ হাজার ১৮১ জনের মধ্যে ১ হাজার ১৩৪ জন মুক্তিযোদ্ধা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি)।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন ২০০২ এর ৭ (ঝ) ধারা অনুযায়ী জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে রুলস অব বিজনেস ১৯৯৬-এর শিডিউল-১ এর তালিকা ৪১-এর ৫ নম্বর ক্রমিকে প্রদত্ত ক্ষমতা বলে জামুকার ৬৬তম সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্বাধীনতা যুদ্ধের পর (১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালের) বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এ যোগদানকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের ১১৩৪ জনের নামে প্রকাশিত গেজেট বাতিল করা হলো।’
একই দিন বিমানবাহিনীর ৪৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মুক্তিযোদ্ধা গেজেট বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
পরে গেজেট বাতিলের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে বাগেরহাটের সদর উপজেলার বেগুরগাতি গ্রামের মোল্লা মোশাররফ হোসেনসহ ৮৭ জন, টাঙ্গাইলের সদর উপজেলারে বেথবাড়ীর ফজলুল হকসহ ৩২ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার মো. আবু তাহেরসহ ৪১ জন হাই কোর্টে তিনটি রিট করেন।
সম্প্রতি নতুন করে ১৮ ও ১৪ জন আলাদা দুটি রিট করেছেন। মোট পাঁচটি রিটে বাদি ১৯২ জন। তাদের মধ্যে একজন বিমান বাহিনীর।
দেশে প্রশিক্ষিতদের মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় রাখার নির্দেশ
একাত্তরে যারা দেশের বাইরে না গিয়ে দেশে থেকে প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, ২০১৬ সালের প্রজ্ঞাপনের সংজ্ঞায় তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। এ সংক্রান্ত জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে সোমবার বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাই কোর্ট বেঞ্চের রায়ে এ নির্দেশনা এসেছে। আদালতে রুলের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ আহসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান।
আহসান সাংবাদিকদের বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যে যারা দেশের বাইরে যাননি, দেশে থেকে প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তারা স্বীকৃতির অধিকার রাখেন বলে রায়ে বলা হয়েছে।” মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রিট আবেদনকারী ২৬ জনের নামের তালিকা আগামী ৯০ দিনের মধ্যে গেজেট আকারে প্রকাশ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান এই আইনজীবী।
উপজেলা পর্যায়ে যাচাই-বাছাই শেষে টাঙ্গাইল জেলার ‘মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি’ সখীপুর উপজেলার ২৯৫ জনের নাম সুপারিশ করে ২০০৪ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। কিন্তু তাদের নাম গেজেট আকারে প্রকাশ না করায় ২০১৬ সালে এ কে এম ফজলুল করিমসহ ২৬ জন মুক্তিযোদ্ধা হাই কোর্টে রিট আবেদনটি করেন। ওই আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর আদালত গেজেটে তাদের নাম অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নে রুল জারি করে।
আহসান বলেন, “এর মধ্যে আমরা খেয়াল করলাম ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ‘মুক্তিযোদ্ধা এর সংজ্ঞা ও বয়স নির্ধারণ’ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে। “কিন্তু সেই প্রজ্ঞাপনের মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞার কলামে দেশের অভ্যন্তরে মুক্তিযুদ্ধে প্রশিক্ষণ ও অংশগ্রহণকারীদের রাখা হয়নি। তখন ওই প্রজ্ঞাপনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একটি সম্পুরক আবেদন করা হয়।”
Discussion about this post