টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় যুদ্ধ না করেও মুক্তিযোদ্ধা সেজে ভাতাসহ সব ধরনের সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করার অভিযোগ উঠেছে আলমগীর হোসেন হিরু নামে এক ব্যক্তি। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে তদন্ত নেমেছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। তার পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার সকাল ১০টায় জামুকার কার্যালয়ে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য হিরুকে ডাকা হয়। এজন্য জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সহকারী পরিচালক প্রশাসন-২ স্বাক্ষরিত একটি পত্র দেওয়া হয়েছিল। হিরুর বিরুদ্ধে তার আপন সহোদরদের করা অভিযোগের ভিত্তিতে এই যাচাই-বাছাই করা হয়।
জানা গেছে, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড বাওয়ার কুমারজানী গ্রামের বাসিন্দা প্রয়াত হাকিম উদ্দিনের চার ছেলের মধ্যে আলমগীর হোসেন হিরু মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন কী না; তা জানেন না তার বড় তিন সহোদর ভাইসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। এছাড়া তিনি যে একজন মুক্তিযোদ্ধা, জানেন না তার গ্রামেরই বাসিন্দা মির্জাপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের তিন বারের নির্বাচিত সাবেক কমান্ডার অধ্যাপক দুর্লভ বিশ্বাসসহ গ্রামবাসীও।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করা আলমগীর হোসেন হিরু জানান, মির্জাপুর পৌর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে একই কোম্পানিতে যুদ্ধ করেছেন তিনি। অথচ কমান্ডার মোহাম্মদ আলী জানান, ওই নামের কেউ তার সঙ্গে বা তার কোম্পানিতে যুদ্ধ করেননি।
এত কিছুর পরও আলমগীর হোসেন হিরু নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে গোপনে তালিকাভুক্ত করেছেন নিজের নাম। গত কয়েক বছর ধরে ভাতাও উত্তোলন করছেন। মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় ইতিমধ্যে এক ছেলে পুলিশে এবং এক মেয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরিও দিয়েছেন। অপর ছেলেরও পুলিশে চাকুরি হওয়ার পথে বলে জানা গেছে।
এদিকে যুদ্ধ না করে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে গোপনে তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত করে দিনের পর দিন সরকারি সুবিধা নিচ্ছেন হিরু। এমন অভিযোগ তুলে গত বছর ডিসেম্বরে তার আপন বড় দুই ভাই আবদুল বাছেদ মুন্সী ও বাবুল হোসেন বাবু মিয়া মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
পরে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল অভিযোগটি আমলে নিয়ে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আজ সোমবার সকাল ১০টায় অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত পক্ষকে উপযুক্ত সাক্ষি এবং দালিলিক প্রমাণাদিসহ জামুকার কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে।
হিরুর বড় দুই ভাইয়ের মধ্যে আবদুল বাছেদ মুন্সী গত কয়েক মাস আগে মৃত্যু বরণ করেছেন। অপর ভাই বাবুল হোসেন বলেন, ‘ছোট ভাই যুদ্ধ না করেও প্রতারণার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম লেখানোর কারণে সমাজে প্রতিনিয়ত নানা ধরনের কথা শুনতে হয়। এছাড়া মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কেউ প্রতারণা করুক তা আমরাও চাই না। তাই বড় ভাইয়ের ইচ্ছে ছিল এই অপবাদ থেকে মুক্তির। আমিও তাই চাই।’
গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের তিনবারের নির্বাচিত কমান্ডার অধ্যাপক দুর্লভ বিশ্বাস বলেন, ‘আলমগীর হোসেন হিরু যে মুক্তিযোদ্ধা ২০১০ সালে মুক্তিযোদ্ধা ভোটার তালিকায় তার নাম দেখে আমি জানতে পেরেছি।’ একই কথা বলেন, গ্রামের বাসিন্দা যুদ্ধকালীন সময়ের স্বেচ্ছাসেবক জোয়াহের আলী।
Discussion about this post