কুমিল্লার চান্দিনার মাধাইয়া বাস স্টেশন থেকে চাঁদপুর জেলার রহিমানগর পর্যন্ত প্রায় ২১ কিলোমিটার সড়কের নামকরণ করা হয়েছিলো বীর প্রতীক কর্নেল (অব.) মো. সফিক উল্লাহর নামে। মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সৈনিকের নামে নামকরণ করা ওই সড়কের ‘নামফলকের’ সাথে শুরু হয়েছে চরম শত্রুতা। একের পর এক ভেঙে দেওয়া হচ্ছে জেলা পরিষদের অর্থায়নে নির্মিত ওই সকল নামফলক। জানা গেছে, রাতের অন্ধকারে কোনো একটি কুচক্রী মহল ভেঙে দিচ্ছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানের নামে নামকরণ করা সড়কের ওই ফলকগুলো। এ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মনে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতের অন্ধকারে উপজেলার জোয়াগ ইউনিয়নের কৈলাইন মিঞাবাড়িসংলগ্ন একটি ফলক ও একই ইউনিয়নের আমলকি এলাকায় অপর একটি ফলক ভেঙে দেয় দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে আমলকি এলাকার ফলকটি সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দেয় এবং অপরটির একটি অংশে ভেঙে ফেলেছে তারা। এ ঘটনায় বীর প্রতীক সফিক উল্লাহর ভাতিজা অধ্যাপক মো. পারভেজ মিঞা চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও চান্দিনা থানার ওসির নিকট মুঠোফোনে মৌখিক অভিযোগ করেন।
এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি মাধাইয়া বাসস্টেশন এলাকার আরো একটি ফলক ভেঙে দিয়েছিলো দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় বীর প্রতীক সফিক উল্লাহর অপর ভাতিজা শাহেন শাহ মিঞা চান্দিনা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
বীর প্রতীক সফিক উল্লাহর ভাতিজা অধ্যাপক মো. পারভেজ মিঞা জানান, চান্দিনা উপজেলার জোয়াগ ইউনিয়নের কৈলাইন মিঞাবাড়ির বাসিন্দা কর্নেল (অব.) সফিক উল্লাহ মহান মুক্তিযুদ্ধে ৮ নম্বর সেক্টরের ই কম্পানির ৫ নম্বর গেরিলা বাহিনীর কমান্ডারের দায়িত্বকালে বিশেষ ভূমিকা পালন করায় বীর প্রতীক উপাধিতে ভূষিত হন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন পদে চাকরিতে যোগদানের পর কর্নেল পদমর্যাদা নিয়ে অবসর গ্রহণ করেন।
তিনি জানান, ২০০৮ সালের ৩১ মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করার পর একই বছরে কৈলাইন গ্রামের তার স্মরণসভায় বৃহত্তর কুমিল্লার বিশিষ্টজন ও মুক্তিযোদ্ধাগণের উপস্থিতিতে চাঁদপুর জেলার সাথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সংযোগ সড়ক ‘মাধাইয়া-রহিমানগর’ সড়কটি বীর প্রতীক কর্নেল (অব.) মো. সফিক উল্লাহর নামে নামকরণ করার জন্য প্রস্তব করা হয়। সেখানে সর্বসম্মতিক্রমে পরবর্তীতে নামফলক স্থাপন করা হয়। দাপ্তরিকভাবে কয়েক স্থানে চিঠিপত্রও চালাচালি করা হয়েছে। এলজিইডির ওই সড়কটিতে জেলা পরিষদের অর্থায়নে চান্দিনা অংশে ৩টি এবং কচুয়া অংশে ৬টি নামফলক স্থাপন করে। এর মধ্যে কুমিল্লা জেলা পরিষদ ৩টি এবং চাঁদপুর জেলা পরিষদ ৬টি নাম ফলক নির্মাণ করেন। কিন্তু শুধুমাত্র চান্দিনা অংশের নাম ফলকগুলোই কোনো একটি মহল ভেঙে ফেলা হয়েছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
এদিকে, খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে সড়কের নামফলক ভেঙে দেওয়াকে সকল মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন চান্দিনা উপজেলার কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। চান্দিনা উপজেলার যুদ্ধকালিন কমান্ডার জোনাল বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন মিঞা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এখনো স্বাধীনতাবিরোধীরা সক্রিয়। বীর প্রতীক কর্নেল (অব.) সফিক উল্লাহর স্মরণসভায় আমিই প্রস্তাবকারী ছিলাম। এখন সেই ফলকগুলো ভেঙে দিচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধীরা। যা সকল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অপমানজনক।
চান্দিনা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাজি আব্দুল মালেক জানান, আগে একটি ফলক ভাঙা হয়েছে সেটা শুনেছি। নতুন কোনো ফলক ভাঙার বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধার নামের নাম ফলক ভাঙা দেখতেও খারাপ, শুনতেও খারাপ।
চান্দিনা থানার ওসি শাসমউদ্দিন মোহাম্মদ ইলিয়াছ জানান, প্রথম ঘটনায় একটি থানায় একটি জিডি করেছে তাদের পরিবার। পরের ঘটনাটি শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমাকে ফোনে অবহিত করেছে। আজ শনিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে দেখবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিভীষণ কান্তি দাশ জানান, মূলত সরকারি গেজেটে ওই সড়কের নাম এখনো মাধাইয়া-রহিমানগর সড়ক হিসেবেই রয়েছে। সড়কের নামকরণ করতে হলে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এর নেতৃত্বের কমিটি থেকে পাস হয়ে আসার পর নামকরণ করতে হয়। কিন্তু বীর প্রতীক সফিক উল্লাহর নামে কোনো গেজেট হয়নি। নামফলকগুলো তাদের পরিবারের কয়েকজন ব্যক্তি সরকারি বিধি না মেনে স্থাপন করেছেন। তবে রাতের অন্ধকারে কারা ভেঙেছে সে ব্যাপারেও কেউ সুনির্দিষ্ট কিছু বলতে পারেননি। তারপরও বিষয়টি আমরা দেখবো।
Discussion about this post