১৯৭১ সালে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা রণদা প্রসাদ সাহা ও তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহাকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামি মাহবুবুর রহমানের (৬৯) বিরুদ্ধে রায় দেওয়া হবে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন)।
বুধবার (২৬ জুন) বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায়ের জন্য এ দিন ঠিক করেন।
এর আগে গত ২৪ এপ্রিল উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখেন ট্রাইব্যুনাল। দীর্ঘ দুই মাস অপেক্ষমান থাকার পর রায়ের দিন ঘোষণা করা হলো।
ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর রানা দাশ গুপ্ত। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম।রানা দাশ গুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, এ আসামির বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ তিনটি অভিযোগ ছিল। সবগুলো অভিযোগ প্রমাণে আমরা সক্ষম হয়েছি। আশা করছি আদালত তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রদান করবেন।
২০১৮ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি এ মামলার অভিযোগ আমলে নিয়ে অভিযোগ গঠনের জন্য ওই বছরের ১১ মার্চ দিন ঠিক করে দেন আদালত। এরপর ২৮ মার্চ এ মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। দীর্ঘ শুনানি শেষে গত ২৪ এপ্রিল যুক্তিতর্ক শেষ হয়। তদন্ত কর্মকর্তাসহ ১৩ জন সাক্ষী মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন।
২০১৭ সালের ২ নভেম্বর টাঙ্গাইলের মো. মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পন্ন করে প্রসিকিউশনে প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত সংস্থা।
রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগে বলা হয়,আসামি মাহবুবুর রহমানের বাবা আব্দুল ওয়াদুদ মুক্তিযুদ্ধের সময় মির্জাপুর শান্তি কমিটির সভাপতি ছিলেন। আসামি মাহবুবুর রাহমান ও তার ভাই আব্দুল মান্নান সে সময় রাজাকার বাহিনীতে ছিলেন।
আসামি মাহবুবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মে মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ২০-২৫ জন সদস্যকে নিয়ে রণদা প্রসাদ সাহার বাসায় অভিযান চালান।
অভিযানে রণদা প্রসাদ সাহা, তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা, রণদা প্রসাদের ঘনিষ্ঠ সহচর গৌর গোপাল সাহা, রাখাল মতলব ও রণদা প্রসাদ সাহার দারোয়ানসহ ৭ জনকে অপহরণ করে নিয়ে যান। পরে সবাইকে হত্যা করে মৃতদেহ শীতলক্ষা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। তাদের মৃতদেহ আর পাওয়া যায়নি।
মুক্তিযুদ্ধের সময় আসামি টাঙ্গইলের মির্জাপুরের ভারতেশ্বরী হোমসের আশপাশের এলাকা, নারায়ণগঞ্জের খানপুরের কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ও তার আশপাশের এলাকা এবং টাঙ্গাইল সার্কিড হাউজ এলাকায় অপরাধ সংঘটন করেন।
তদন্তে মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে অপহরণ, হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও গণহত্যার তিনটি অভিযোগ আনা হয়।
রণদা প্রসাদ সাহার পৈত্রিক নিবাস ছিল টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। সেখানে তিনি একাধিক শিক্ষা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এক সময় নারায়ণগঞ্জে পাটের ব্যবসায় নামেন রণদা প্রসাদ সাহা। থাকতেন নারায়ণগঞ্জের খানপুরের সিরাজদিখানে। সে বাড়ি থেকেই তাকে, তার ছেলে ও অন্যান্যদের ধরে নিয়ে যান আসামি মাহবুবুর রহমান ও তার সহযোগীরা।